v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-13 20:22:30    
চীনের ছিয়াং ছুনের শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগীদের কাহিনী

cri
    চি লিন প্রদেশের রাজধানী ছিয়াং ছুন শহর উত্তর-পূর্ব চীনে অবস্থিত । এখানকার শীতকালের গড় তাপমাত্রা সবসময় শূণ্য ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের নীচে থাকে । চীনের যেসব শহরে সবচেয়ে শিত পড়ে , ছিয়াং ছুন শহর সেগুলোর অন্যতম । গত শতাব্দির ষাটের ও সত্তরের দশক থেকে ছিয়াং ছুন শহরের নান হু হ্রদে কিছু শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগী তত্পর রয়েছেন । গ্রীষ্মকালে সাঁতার তাদের জন্যে আরামদায়ক হলেও কনকনে শীতকালে প্রচন্ড বাতাস ও বরফী পানির মধ্যে সাঁতার কাটা তাদের জন্যে একটি পরীক্ষা বলে মনে হয় । আজকের অনুষ্ঠানে আমি ছিয়ান ছুনের শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগীদের কাহিনী বলবো । পরিবেশন করছি আমি শি চিং উ ।

    ৬০ বয়সের ওয়াং লিয়ে ছিয়াং ছুনের শীতকালীন সাঁতারের একজন অনুরাগী । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    শীত আসার সংগে সংগে আমাদের এখানকার নদী ও হ্রদের পানি সবই বরফ হয়ে যায় । আমরা হ্রদের বরফ কেটে কেটে ৩০ থেকে ৫০ বর্গমিটারের জলাশয় সৃষ্টি করি । তারপর আমরা আস্তে আস্তে সাঁতার কাটতে শুরু করি ।

    শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগীরা তাদের চর্চাকে রক্ত প্রণালীর ব্যায়াম বলে আখ্যায়িত করেন । এ চর্চা মানুষের হৃদপিন্ডের সামর্থ্যকে জোরদার করতে পারে এবং হৃদ রোগ নিবারণের জন্যে সহায়ক ।

    ওয়াং লিয়ে বলেছেন , গোড়ার দিকে ছিয়াং ছুন শহরে মাত্র সাত আটজন লোক শীতকালীন সাঁতার কাটতেন । পরে পর্যায়ক্রমে দশ বারোজন তাদের দলে যোগ দিয়েছেন । ১৯৮৮ সালে তারা শীতকালীন সাঁতার সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন । তারা তাদের দলকে আরো শক্তিশালী করার শপথ নিনেন । এখন ১৮ বছর পার হয়ে গেছে । এ সমিতির পরিচালনায় এখন ছিয়াং ছুন শহরের শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগীদের সংখ্যা তিন শ'রও বেশি হয়েছে ।

    ছিয়াং ছুন শহরের শীতকালীন সাঁতার চর্চার উদ্যোক্তা হিসেবে ওয়াং লিয়ে তাদের ক্রমবর্দ্ধমান দলকে দেখে মহা খুশী । সংগে সংগে তিনি আনন্দের সংগে দেখতে পেয়েছেন যে, দশ বারো বছর আগের তুলনায় এখনকার শীতকালীন সাঁতারের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে । তিনি বলেছেন , তখনকার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল । কাপড় বদলানোর ঘরও ছিল না । আমাদের খোলা আকাশে কাপড় বদলাতে হতো । তখন বরফগুলোও আমাদের নিজেদের কাটতে হতো । সেসময় বরফ কাটতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা লাগতো । আমরা পানিতে মাত্র ৪ থেকে ৫ মিনিট সাঁতার কাটতাম । এখন অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে । আমাদের নিজস্ব শীতকালীন সাঁতার ক্লাব আছে । কাপড় বদলানোর ঘরও নির্মিত হয়েছে । ঘরে হিটার ব্যবস্থাও রয়েছে । তাছাড়া এখন বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত লোকেরা আমাদের জন্যে বরফ কাটেন ।

    একদিন আমাদের সংবাদদাতা ছিয়াং ছুন শহরের নান হু হ্রদে গিয়েছেন । তিনি দেখতে পেলেন , ৫০ বছর বয়সের শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগী ওয়াং সিং ওয়েন সাঁতার প্যান্ট পরে পানির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন । তিনি হ্রদের একটি নৌকা দেখিয়ে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , এ নৌকা বিশেষভাবে আমাদার জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে । তিনি বলেছেন , সে নৌকার নাম বরফ কাটা নৌকা । এ নৌকা পাতলা বরফ ভেদ করতে পারে । বরফ মোটা হলে সেগুলোকে অন্য উপায়ে কাটতে হয় ।

    ওয়াং সিং ওয়েন কাঠের তৈরি একটি সেতুতে ওঠে সুন্দর ভংগিমায় পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন । এক মিনিট , দুই মিনিট , তিন মিনিট । তিনি পানিতে মাত্র তিন মিনিট ধরে সাঁতার কাটলেন । তবে এটি সহজ ছিল না । আপনারা ভেবে দেখুন , উত্তর-পূর্ব চীনের এ ছিয়াং ছুন শহরে শীতকালে সমস্ত নদী ও হ্রদের পানি বরফে পরিণত হয়েছে । সবাই তুলোর কাপড় , তুলোর টুপি ও তুলোর দোস্তানা পরছেন । অথচ এত শীতের মধ্যে যারা শীতকালীন সাঁতার কাটেন , তারা বরফী পানিতে তরংগ ডিংগিয়ে সামনে চলতে পারেন । তাদের এ অদম্য মনোবল দেখে আমরা মুগ্ধ না হয়ে পারি না । অন্যদিকে আমাদের কাছে এটি একটু কল্পনাতীত বলে মনে হচ্ছে । এ সম্পর্কে এখন শীতকালীন সাঁতারের আরেকজন অনুরাগী সিয়ে সিয়াও ফুর অভিজ্ঞতা শোনা যাক । তিনি বলেছেন , হ্রদের পানি সত্যিই খুবই ঠান্ডা । তবে এটা মানুষের মনোবলের জন্যে একটি পরীক্ষাস্বরুপ , অবশ্য একটি অনুশীলনও । সকলে তা সহ্য করতে পারে না ।

    ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটার পর তীরে ওঠে অনুরাগীরা প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেন । এত শীতের মধ্যে তাদের সাঁতার ও গোসল দেখে পাশের লোকেরা শিওরে ওঠেন । কিন্তু এসব শীতকালীন সাঁতার অনুরাগীদের কাছে কিছু নয় । সাহসীদের এ ব্যায়াম সম্পর্কে তারা বলেছেন , এ ব্যায়ামের মাধ্যমে তারা যেমন নিজের মনোবলের প্রতি চ্যালেঞ্জ করেছেন , তেমনি প্রকৃতির অনুসন্ধান করেছেন ।

    ছিয়াং ছুনের শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগীদের জন্যে এ ব্যায়াম শুধু শরীর চর্চার উপায় নয় , বরং একরকম কবিত্বময় জীবনও বটে । কিছুদিন আগে ওয়াং লিয়ে শীতকালীন সাঁতারের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশের জন্যে একটি কবিতাও লিখেছেন । তিনি তার কবিতায় পানিতে সাঁতারুদের ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় ছিটানো পানিকে তুষারাচ্ছন্ন পাহাড়ে ফোটা তুষার পদ্মের সংগে তুলনা করেছেন ।

    অন্য একজন শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগী সুন মান পিনের বয়স পঞ্চাশের ওপর । তিনি শীতকালীন সাঁতার সমিতির জন্যে শীতকালীন সাঁতারের গান নামে একটি গান রচনা করেছেন ।

    সুন মান পিন বলেছেন , প্রতি বছরের নর্ববর্ষ উপলক্ষে তারা বিরাট আকারের সাঁতার অনুষ্ঠানে অংশ নেন । শীতকালীন সাঁতার এখন ছিয়াং ছুনের শীতকালে একটি মনোরম অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে । সুন মান পিন বলেছেন , প্রতি বছরের নববর্ষ উপলক্ষে ছিয়ান ছুন শহর শীতকালীন সাঁতারের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে । প্রতি বছরের বসন্তকাল আসার সংগে সংগে নানা রংয়ের ফুল ফুটেছে । তাপমাত্রা বাড়ার সংগে সংগে নদী ও হ্রদের বরফও গলতে থাকে । সারি সারি বরফ নদী ও হ্রদে ভেসে যায় । আমরা এ বরফগুলোর মধ্য দিয়ে নান হু হ্রদের এ পার থেকে সেই পারে সাঁতার কেটে অতিক্রম করি । তারপর আবার সেই পার থেকে এ পারে সাঁতার কেটে ফিরে আসি ।

    সবেমাত্র আমরা উত্তর-পূর্ব চীনের চি লিন প্রদেশের রাজধানী ছিয়াং ছুন শহরের একদল শীতকালীন সাঁতারের অনুরাগীর কাহিনী শোনালাম । শীতকালে ছিয়াং ছুনে আসার সুযোগ হলে আপনারা অবশ্যই তাদের ভাব-ভংগিমা দেখতে পাবেন ।