v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-13 19:32:41    
কানা বার ও তার বিদেশী মালিক

cri
    পুর্বচীনের জে জিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরের পশ্চিম হ্রদের ধারে কানা নামে একটি বারে ঢুকলে বিদেশের সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনুভব করা যায় । তিনজন বিদেশী ও তাদের একজন চীনা বন্ধু কানা বার খুলেছেন ।

    হাংচৌ পুর্বচীনের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন শহর । লংচিং নামক সবুজ চা ও পশ্চিম হ্রদের নয়নাভিরাম দৃশ্যের জন্য হাংচৌ শহর বিশ্ব বিখ্যাত। পশ্চিম হ্রদের ধারে আকাঁবাকা নান সান রাস্তার দুপাশে বড় বড় চীনা পারাসোল গাছ দন্ডায়মান । গত কয়েক বছরে নান সান রাস্তার দুপাশে যে একটার পর একটা চায়ের দোকান ও বার খোলা হয়েছে তাতে পর্যটন শহর হাংচৌয়ের চিত্তবিনোদনের স্থানের সংখ্যা বেড়েছে । নান সান রাস্তার দুপাশে বহু বারের মধ্যে কানা বারের বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

    নয় মাস আগে বুরুন্ডির কানা ডেসির ,ফ্রান্সের নিকো , ডেনমার্কের ইবেন এবং চীনের জেন সি তানের যৌথ উদ্যোগে এই আন্তর্জাতিক বার খোলা হয়েছে । কানা ডেসির এই বারের ম্যানেজার ,তিনি ১৯৯১ সালে চীনে এসে প্রথমে পেইচিংয়ে চীনা ভাষা শিখেছিলেন , এরপর তিনি হাংচৌ শহরে চীনা চারুকলা কলেজে চারু শিল্প শিখেছেন । পড়াশোনা শেষ করে তিনি একটি কোম্পানিতে অনুবাদক হিসেবে কাজ করেন । কানা বারের তিন জন বিদেশীর মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সুন্দরভাবে চীনা ভাষায় কথা বলতে পারেন । চারজন মিলে বার খোলার উদ্দেশ্য প্রসংগে তিনি বলেছেন :আমরা চার জন বন্ধু বারে বসে গল্পগুজব করতে পছন্দ করি । হাংচৌ শহরে আমাদের মত অসংখ্যক লোক বারে গিযে কফি বা মদ খান ।কিন্তু আগে যে সব বার খোলা হয়েছে সেগুলো একই ধরনের বলে মনে হয় । আমরা বিশেষ ধরনের একটি বার খুলব বলে স্থির করি ।

    তথাস্তু ! যেই ভাবা সেই কাজ । তাঁরা অর্থ সংগ্রহ করে নান সান রাস্তার পাশে চার শো বর্গমিটারের মেঝে বিশিষ্ট একটি দোতলা বাড়ি সংস্কার করেন । দোতলায় বার ,নীচতলায় ফরাসী রেস্তোরাঁ । চীন ও পাশ্চাত্যের শৈলীর সম্মিলিত সজ্জা ও পরিসেবার সুবাদে ছয় মাস যেতে না যেতেই কানা বার হাংচৌ শহরে প্রসিদ্ধ হয়েছে এবং হাংচৌবাসী ও হাংচৌ শহরে কর্মরত বিদেশীদের অন্যতম রঁদেভূতে পরিণত হয়েছে ।

    কানা বার খোলার পর যে আশানুরুপ মুনাফা অর্জিত হয়েছে তার মূলে রয়েছে চারটে দেশের চার জন তরুণতরুণীর অক্লান্ত পরিশ্রম । কানা ডেসির গভীর আবেগের সংগে বলেছেন ,কানা বার তাঁদের ছেলের মত । কিছু ক্ষন অন্যত্র থাকলে তার কথা মনে পড়ে । যখন বারে থাকি না , তখন হঠাত মনে প্রশ্ন জাগে , কানা বারে কোনো জিনিষের কি অভাব দেখা দিয়েছে ? অন্যদের বারে বেড়াতে গেলে মনে মনে ভাবি, অন্যদের সদগুণ ও অভিজ্ঞতা শিখব ।

    কানা বারের ব্যবস্থাপনা প্রসংগে কানা ডেসির বলেছেন ,তাঁরা চার জন যে যার দায়িত্ব পালন করছেন । চীনের জেন সি তান কানা বারের আইনগত মালিক । কানা ডেসির কানা বারের ম্যানেজার , ফ্রান্সের নিকো কানা বারের বাবুর্চি, ইবেন কানা বারের পানীয় বিভাগের ম্যানেজার । বিদেশী খদ্দেররা এলে কানা ডেসির হাসিমুখে তাঁদের সাগত জানান এবং তাদের টেবিলে নিয়ে যান । চীনা খদ্দেররা এলে জেন সি তান তাঁদের জন্য খাবার পরিবেশন করেন । বাজারে গিয়ে জিনিষপত্র কেনাকাটাও জেন সি তানের কাজ ।

    চার জনের পৃথক সাংস্কৃতিক পটভুমি কানা বার পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে নি । তাঁরা সন্তোষজনকভাবে পরস্পরের সংগে সহযোগিতা করেছেন । তাঁরা যে একসংগে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে কানা ডেসির অত্যন্ত সন্তুষ্ট । তিনি বলেছেন :আমরা চার জন এসেছি চারটি দেশ থেকে ,আমাদের সাংস্কৃতি পটভুমি সম্পুর্ণ আলাদা ,তবে তা আমাদের বারের ব্যবস্থাপনার উপরে প্রতিকুল প্রভাব ফেলে নি । আমাদের প্রত্যকের অনেক বন্ধু আছে , সকল বন্ধুর সংগে মিলেই যে ব্যবসা করা যায় তা নয় ,ভাগ্য দেবতার নিরব নির্দেশেই আমরা একত্র হয়েছি ।

    প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোররাত তিনটা চারটে পর্যন্ত কানা বার খোলা থাকে , কাজেই কানা ডেসির ও তাঁর বন্ধদের বিশ্রামের পর্যাপ্ত সময় নেই । তাদের তিনশোটি দিন ব্যস্ততার মধ্যে কেটে গেছে ।রোজ তাঁরা খুবই ক্লান্ত , কিন্তু তাঁদের মন উত্ফুল্ল । কানা ডেসির বলেছেন , তাঁরা হাংচৌ শহরকে ভালোবাসেন , কারণ , তাঁরা এখানে তাঁদের পছন্দসই কাজ করতে পারেন ।

    আমরা হাংচৌকে পছন্দ করি , আমরা যা করতে চাই তা করতে পেরেছি ।তাই আমরা আনন্দিত । আমরা চীনের বহু স্থানে ভ্রমন করেছি , আমরা মনে করি , হাংচৌ শহরের আছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য । আমরা এখানে থেকে যেতে চাই ।

    চার জন বন্ধুর মধ্য নিকো ও ইবেন হলেন দম্পতি ।নিকো এসেছেন ফ্রান্স থেকে এবং ইবেন এসেছেন ডেনমার্ক থেকে ।তাঁরা দুজন হাংচৌ শহরে পড়াশোনা করেছেন এবং সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন । তাঁরা পরস্পরকে ভালোবেসে অবশেষে বিয়ে করেছেন । সম্প্রতি তাঁদের একটি সন্তানেরও জন্ম হয়েছে। হাংচৌ শহরের উপরে নিকোর চমত্কার অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে । তাঁর মতে হাংচৌ চীনের শ্রেষ্ঠ শহরগুলের অন্যতম । বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হওয়ার পর চীনের উন্মুক্ততার গতি আরো দ্রত হয়েছে । চীনে বিনিয়োজিত বৈদেশিক পুঁজির পরিমান বছরের পর বছর বাড়ছে । চীনে আসা বিদেশী পর্যটকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । কানা ডেসির মনে করেন ,চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন তাঁদের কানা বারের মুনাফা অর্জনের পথ সুগম করবে । তিনি কানা বারের ভবিষ্যত সম্পর্কে পুরোপুরি আশাবাদী । তিনি বলেছেন:

    অনেক বিদেশী শিল্পপতি হাংচৌ শহরে পুঁজি বিনিয়োগ করতে এসেছেন , কাজ করার পাশাপাশি তাঁদের পক্ষে চিত্ত বিনোদনের স্থানও দরকার ।কাজেই আমাদের খদ্দেরদের সংখ্যা নিশ্চয় বাড়বে ।আমারা কানা বার চালাতে থাকব, কারন , আমরা চীনে আর হাংচৌ শহরে থাকতে চাই । প্রয়োজন হলে আমরা আরেকটি বার খুলব ।