ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট ১১ ডিসেম্বর সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ইসরাইলকে পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। গত অর্ধেক শতাব্দি ধরে তিনি ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী , যিনি প্রথম বারের মতো ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেছেন । এই খবর প্রচারিত হওয়ার পর ইসরাইলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে । বিভিন্ন বড় সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এবারের বক্তব্য ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে । বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ওলমার্টের পদত্যাগ দাবি করেছেন । ফলে ওলমার্ট আরেকবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছেন ।
জার্মানীর উপগ্রহ এক নং টেলিভিশনে ওলমার্টের এই সাক্ষাত্কার প্রচার হওয়ার ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে । ইরানের পরমাণু সমস্যা প্রসঙ্গে ওলমার্ট ইংরেজীতে বলেছেন , ইসরাইল কখনো কোনো দেশকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকী দেয় নি । কিন্তু ইরান স্পষ্টভাষায় ইসরাইলকে মানচিত্র থেকে মুছে দেয়ার হুমকী দিয়েছে । ইরান এত আগ্রহের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র দখলের ইচ্ছা যে প্রকাশ করেছে , ফ্রান্স , যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইসরাইলের ওপর তা হুমকী নয় ?
সাক্ষাত্কার প্রচারিত হওয়ার পর ওলমার্টের সহকারীরা তাঁর বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন । ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে , ওলমার্টের বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে বিকৃত করা হয়েছে । ১২ ডিসেম্বর জার্মানীর চ্যান্সেলার এঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক যুক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসরাইল প্রথমে মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে ওলমার্ট তিনবার জোরালোভাবে উল্লেখ করেছেন । তিনি আরো জোর দিয়ে বলেছেন , সাক্ষাত্কারে তার বক্তব্য পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে ইসরাইলের অনুসৃত নীতি লংঘন করে নি ।
কিন্তু বিভিন্ন বড় সংবাদ মাধ্যম মনে করে যে , ওলমার্টের বক্তব্য ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্রথাকার ইঙ্গিত দিয়েছে । দীর্ঘকাল ধরে ইসরাইল পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা অস্বীকার করার পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র না থাকার কথাও বলে নি । এর উদ্দেশ্য শত্রু দেশগুলোকে ভয় দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের অস্ত্র প্রতিযোগিতা ঠেকানো । যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলোও ইসরাইলের এই নীতির স্বীকৃতি দিয়েছে । এ ব্যাপারে ইসরাইল যদি নীরবতা অবলম্বন করে , তাহলে এই সব দেশ পরমাণুর দিক থেকে ইসরাইলের ওপর শাস্তি প্রয়োগ করবে না । কিন্তু ইসরাইল সত্যি পরমাণু অস্ত্রাধারীএকটি দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , গত শতাব্দির ষাটের দশক থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল ৮০ থেকে ২ শো পরমাণু অস্ত্রের ওয়ার্হেড তৈরী করেছে । ওলমার্ট এবারের বক্তব্য প্রকাশ করার কয়েক দিন আগে নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রবার্ট গেটস্ মার্কিন কংগ্রেসের সিনেটেও অনুরূপ তথ্য প্রকাশ করেছেন । তিনি ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিকাশের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেছেন , ইরান ইসরাইলসহ পরমাণু দেশগুলো দ্বারা বেষ্টিত ।
যদিও বেশির ভাগ সংবাদ মাধ্যম ও বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , ওলমার্ট অসাবধানে এই বক্তব্য প্রকাশ করেছেন । কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন যে , ওলমার্ট ইচ্ছাকৃতভাবে এই বক্তব্য প্রকাশ করেছেন । ইসরাইলের ইয়েদিউথ পত্রিকার একটি ভাষ্যে বলা হয়েছে যে , ওলমার্ট পাশ্চাত্য দেশগুলোর কাছে এই সতর্কতা পাঠিয়েছেন যে , যদি ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিকাশের কর্মসূচী রোধ করার জন্য তারা ব্যবস্থা না নেয় , তাহলে ইসরাইল একতরফা ব্যবস্থা নেবে ।
বেশ কয়েকটি আরব দেশ ওলমার্টের বক্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে । তারা যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়কে ইসরাইলের ওপর শাস্তি প্রয়োগের আহবান জানিয়েছে । উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সহযোগিতা কমিটির মহাসচিব আবদুল রহমান আল-আতিয়াহ্ ১২ ডিসেম্বর বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু বিষয়ে দ্বৈত মানদন্ড গ্রহণ করা উচিত নয় । তিনি আরো বলেছেন , বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত ওলমার্টের বক্তব্যকে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর হুমকী স্বরূপ বলে মনে করা ।
|