পয়লা ডিসেম্বর দোহা এশীয় গেমস শুরু হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর নারীদের দাবার এককে ভারতের খেলোয়াড় কোনেরু হাম্পি এবারের এশীয় গেমসে ভরতের প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের কাছে তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলবো।
কোনেরু হাম্পি ভারতের আধরা প্রাদেশ রাজ্যের গুডিভাদায় জন্মগ্রহণ করেন। যদিও বর্তমানে তাঁর বয়স শুধু ১৯ বছর, তবে তিনি বহু সাফল্য লাভ হয়েছেন। এশিয়ায় তিনি সবচেয়ে তরুন একজন দাবা গ্র্যান্ড মাস্টার এবং ভারতের প্রথম দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তিনি চারকার দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শীপ অর্জন করেন এবং দু'বার ভারতের যুবক ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া যুবকের মার্যাদা লাভ হন। তাছাড়াও, তিনি ভারত সরকারের সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার—আর্জুনা পুরস্কার অর্জন করেন।
দোহা এশীয় গেমসে চ্যাম্পিয়ন শীপ অর্জন করার পর তিনি বলেছেন, স্বদেশের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন করা একটি খুবই গর্বিত বিষয়। তিনি বলেছেন, 'আমার খুবই আনন্দ লাখে। আমার লক্ষ্য হল স্বর্ণপদক অর্জন করা। আমার বিজয়ী হওয়ার প্রত্যয় আছে। আমি ভারতের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন করার জন্য আমার খুবই গর্বিত লাখে।'
(কোনেরু হাম্পি তাঁর বাবার সঙ্গে)
তিনি সংবাদদাতাদের কাছে বলেছেন, আমি বহু বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেছি, কিন্তু এবারের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্য। কারণ দাবা প্রথমে এশীয় গেমসের প্রতিযোগিতা হয়। এ চ্যাম্পিয়ন তিনি ও ভারতের অন্যান্য দাবা ক্রীড়াদের জন্যে গুরুত্বপূর্ন তত্পর্যা আছে।
সংবাদদাতারা তাঁকে জিজ্ঞাস করেন যে, কাকে ধণ্যবাদ জানাবেন। তিনি বলেছেন, আমার বাবাকে। বাবা হলেন তাঁর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাঁর ৬ বছর বয়স থেকে তিনি বাবা কোনেরু আশোকের সঙ্গে দাবা শিক্ষেন। বর্তমানে তাঁর কোচ হলেন বাবা। তিনি বলেছেন, আমার বাবা একজন দাবা প্রেমী। প্রতিদিন ভোরে তাঁর ঘুম থেকে উঠার প্রথম জিনিস হল দাবা খেলা। তিনি দক্ষিণ ভারতের বাদা চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেন। তিনি একজন রাসায়নিক এন্জিনির ছিলেন। পরে আমাকে একজন পেশাদার দাবা খেলোয়াড়ে প্রশিক্ষণের জন্য তিনি কাজ ত্যাগ করে আমাকে শিক্ষান করেন। আমার বাড়ি বেশি ধনী না। আমার বাবা আমাকে দাবা অনুশীলনের জন্য টিভি কেনার পরিকল্পনাও ত্যাগ করেন। আমার চোখে বাবা একজন ঐতিহ্যিক এবং গম্ভীর মানুষ, সবসময় আপনজনের ব্যবহার না করেন, 'তিনি আমার বাবার মত নন। তিনি আমার কোচের মত। যদি আমি কোন ভুল করি, তাহলে তিনি আমাকে কঠোর সমালোচনা করবেন। আমি দাবা ভালভাবে না করলে, তিনিও রাগ করবেন। কিন্তু তিনি সত্যি একজন ভাল কোচ।'
বাবার এমন অনুশীলন ও উত্সাহে কোনেরু হাম্পি দশ বছরে দাবা খেলা থাকেন এবং বারবার সাফল্য অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়, বিশ্বের নাম তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান ও ভারতের নাম তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছেন। যদিও তাঁর বয়স কম, তবে প্রতিযোগিতায় তিনি খুবই পূরণ এবং সংযম হন। এবারের এশীয় গেমসে তিনি শক্তিশালী চীনা খেলোয়াড় চাও স্যুয়ে আর কাতারের খেলোয়াড় চু ছেনকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
চীনা দাবা দলের কোচ ইয়ে চিয়াংছুয়ান কোনেরু হাম্পিকে মুল্যায়ন করেছেন, তিনি বলেছেন, 'তিনি একজন বিশ্বের প্রথম পর্যায়ের খেলোয়াড়, খুবই শক্তিশালী ও স্থিতিশীল। তাঁর ভাবনা খুবই পরিষ্কার। তাঁর জয়ী করার কারণ আছে।'
ভারতের দাবা দলের প্রধান ভারাট সিন্ঘ ছাউহান মনে করেন কোনেরু হিম্পা একজন সহজ এবং শান্ত মেয়ে। তিনি কখনো অন্য মানুষের সঙ্গে রাগ করেন না। কোনেরু হিম্পার মার মতে তিনি একজন শান্ত এবং বাধ্য মেয়ে। তিনি বলেছেন, 'সে একজন সাধারণ মেয়ে, খুবই সাধারণ। সে খুবই ছোট থেকে দাবা শিক্ষে। তার বাবা যে আদেশ দেন, সে তা মেনে চলবে। এখনো এ রকম।'
কোনেরু হিম্পা একজন আদুরে এবং একটু লজ্জা মেয়ে। তিনি অন্যান্য মেয়ের মত বই পড়া, ব্যায়াম করা ও ভারতের ছবি দেখা পছুন্দ করেন।
তিনি বলেছেন, তাঁর মনে একটি বিষয় সারা জীবনে ভূলে যাবে না। এ বিষয় হল, ২০০১ সালে তিনি বিশ্ব যুব দাবা চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। ভবিষ্যতে পরিকল্পনা ও লক্ষ্য সম্বন্ধে তিনি বলেছেন তাঁর বহু লক্ষ্য আছে, কিন্তু বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্য হল সিঙ্গাপুর গ্র্যান্ড মাস্টার প্রতিযোগিতায় তাঁর পর্যায় আরো উন্নয়ন চেষ্টা করা, স্বদেশের জন্য মার্যাদা অর্জন করা।
|