v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-07 21:03:35    
ছিংচেন পাহাড় ও তুচিয়াং বাঁধ

cri

 সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেনতু থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে গাড়ি করে প্রায় এক ঘন্টার পর ছিংচেন পাহাড়ে পৌঁছা যায়। ছিংচেন পাহাড় হচ্ছে চীনের দেশীয় ধর্ম --- তাও ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উত্সের অন্যতম। তাও ধর্মের মূল তত্ত্ব হচ্ছে মানুষ ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থান। ১৮০০ বছর আগে তাও ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা চাং লিং চেন ছিংচেন পাহাড়ের সবুজ ও শান্ত প্রকৃতি পছন্দ করেছেন। ফলে এখানে তাও ধর্মের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন।

 তাও ধর্ম প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ সময় চীন তথা পূর্ব এশিয়ায় একটি প্রভাবশালী ধর্ম ছিল। পথনির্দেশক কাং ইয়ু জানিয়েছেন, এখন ছিংচেন পাহাড়ে ১০০'রও বেশি তাওধর্মবাদী আছেন। তাঁরা কড়াকড়িভাবে ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী জীবন কাটান। কিন্তু তাও ধর্ম প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে এমন অবস্থা ছিল না। তিনি বলেছেন, "সেই সময় তাওধর্মবাদী বাসায় ধর্মীয় নিয়ম পালন করা হত। তাঁরা বিয়ে করতে পারতেন, বাচ্চা গ্রহণ করতে পারতেন, মদ ও মাংস খেতে পারতেন। তাঁরা মনে করতেন, ধর্মীয় তত্ত্ব মনে রেখে ভালো কাজ করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। কিন্তু এখন ছিংচেন পাহাড়ে বসবাসকারী তাওধর্মবাদী মন্দিরে থাকতে হয় এবং মদ ও মাংস খেতে পারে না, বিয়ে ও বাচ্চা গ্রহণ করাও নিষেধ।"

 তাও ধর্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয় শোনার পর আমরা এখানকার স্থাপত্য বিশিষ্ট উপভোগ করবো। এখন ছিংচেন পাহাড়ে অপেক্ষাকৃত ভালোভাবে সংরক্ষিত রয়েছে কয়েক ডজন তাও মন্দির ও বহু পুরার্কীর্তি । তাও ধর্মাবলম্বীরা সরল প্রকৃতি সমর্থন করেন। ফলে অধিকাংশ তাও মন্দির গভীর পাহাড়ের ঘন ঘন বনে লুকিয়ে আছে এবং ভালোভাবে চার পাশের পাহাড় , বন ও ঝর্ণার সঙ্গে মিশে গেছে। বহু তাও মন্দিরের মধ্যে শাংছিংকোং নামে মন্দির সবচেয়ে সমৃদ্ধ। এই মন্দির পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত। এই মন্দিরে তাও ধর্মের পূর্বপুরুষ লাওজিকে উত্সর্গ করা হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীরা বলেন, শাংছিংকোন মন্দিরের দেবতা অদ্ভুত । তার কাছে কোন প্রার্থনা করলে তা বাস্তবায়িত হয়। ফলে অসংখ্য তীর্থযাত্রীএখানে আসেন। মন্দির ভবনের সামনে সারা দিন আগড়বাতি ও মোমবাতি জ্বালায়।

 অধিকাংশ পর্যটক কেবল ছিংচেন পাহাড়ের সামনের দ্বার দিয়ে পাহাড়ে প্রবেশ করেন। তাঁরা জানেন না, পাহাড়ের পিছনের থাইআন প্রাচীন নগরও একটি বিশ্রাম নেয়ার ভালো জায়গা।

 থাইআন প্রাচীন নগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ক্ষুদ্র রাস্তার দু'পাশে অববাহিত জলস্রোত এই নগরের প্রত্যেক পরিবারের সামনে দিয়ে চলে গেছে। সেই রাস্তায় হাঁটার সময় পানির শব্দ কানে আসে। এমন নগরের রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটা উচিত। রাস্তার দু'পাশে অধিবাসীদের বাড়ী আছে, দোকানপাট আছে। বাড়ীঘর সবই সাদা রং দেওয়াল, নীল রং টালি, খোদাই করা দরজা। প্রত্যেক দোকানে লবণে জারিত মাংস ঝুলানো থাকে। দোকানের টেবিল কয়েক রকমের শাকসব্জী দিয়ে সাজানো। বড় আকারের কাঁচের পাত্রে ঘরে তৈরি মদ আছে।

 এ ধরনের একটি দোকানে প্রবেশ করে এক কাপ সবুজ চা হাতে নিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরি চেয়ারে বসে পাহাড়ী দৃশ্য উপভোগ করা যায়। কি আরামদায়ক ব্যাপার। চীনের কুয়াংচৌ শহর থেকে আসা চিত্রকর হুয়াং ওয়েই ছি থাইআন প্রাচীন নগরে এসে বেশ কয়েক দিন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আমি পাহাড় ও নদনদীর ছবি আঁকি। ছিংচেন পাহাড় হচ্ছে সহজে তাও ধর্মের বিশিষ্ট্য উপভোগ করার ভাল জায়গা। এখানকার মানুষ ও মানুষের সম্পর্ক সরল ও স্বাভাবিক। যদি সময় থাকে, আমি প্রতি বছর এখানে এক মাস থাকতে চাই।"

 ছিংচেন পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গভীর তাও ধর্মের সংস্কৃতি দেখার পর আমি এখানকার আরেকটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান তুচিয়াং বাঁধের পরিচয় দেবো। তুচিয়াং বাঁধ আর ছিংচেন পাহাড়ের দুরত্ব খুব কম। এই বাঁধ হচ্ছে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত সবচেয়ে ঐতিহাসিক জলসেচ প্রকল্প।

 তুচিয়াং বাঁধ মিন নদীর মধ্য অববাহিকায় অবস্থিত। ২০০০ বছর আগে স্থানীয় কর্মকর্তা লি বিং এই প্রকল্প নির্মাণ করেছেন। বিশ্বের নামকরা প্রাচীন জলসেচ প্রকল্পের মধ্যে প্রাচীন ব্যাবিলন ও রোমের কৃত্রিম বাঁধ অনেক আগে বিধ্বস্ত হয়েছে। কেবল তুচিয়াং বাঁধ এখনো ব্যবহার করা যায়।

 তুচিয়াং বাঁধ নির্মাণের আগে প্রতি বছরের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে বন্যা হতো। তুচিয়াং বাঁধের স্থপতি মিন নদীকে দুই ভাগ করেন।এভাবে এক দিকে বন্যা এড়ানো যায়, অন্য দিকে ক্ষেতে পানি দেয়া যায়। পথনির্দেশক চৌ টিং জুন বলেছেন, তুচিয়াং বাঁধ প্রকল্পের সবচেয়ে চমত্কার অংশ হচ্ছে মিন নদীর মাঝখানের পানি ভাগ করার বাঁধ। এই বাঁধ দেখতে নদীর মধ্যে এক বিশাল মাছের মতো। তা দিয়ে মিন নদীকে আভ্যন্তরিন নদী ও বহিঃস্থ নদীতে ভাগ করা হয়েছে। আভ্যন্তরিন নদীর দায়িত্ব হচ্ছে ক্ষেতে পানি দেয়া। বহিঃস্থ নদীর দায়িত্ব হচ্ছে বন্যার পানি নিষ্কাশন করা।

 মার্কিন পর্যটক কেন বোয়দ তুচিয়াং বাঁধের চমত্কার নকশা ও প্রাচীনকালের চীনা জনগণের বুদ্ধির ভূয়শী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, "এই প্রকল্প ২০০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে জেনে আমি অবাক হয়েছি। এই প্রকল্প সুনিপুণভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করেছে। যার ফলে শুকনো মৌসুমে যথেষ্ট পরিমাণ পানি থাকে, কৃষকরা উপকার পায়। বর্ষাকালে বন্যাও এড়ানো যায়।"