v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-07 20:45:14    
চীন-আসিয়ানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার স্বর্ণ যুগ

cri

 এ বছর হচ্ছে চীন ও আসিয়ানের সংলাপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ১৫তম বার্ষিকী। কিছু দিন আগে চীন আর আসিয়ানের দশটি সদস্য দেশের নেতারা চীনের কুয়াংসি চাং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী নাননিং শহরে সম্মিলিত হয়েছেন। তাঁরা ভবিষ্যত উন্নয়নের উজ্জ্বল পরিকল্পনা করেছেন। ২০১০ সালে চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দৃঢ়প্রতিজ্ঞার কথাও তারা প্রকাশ করেছে।

 ১৫ বছর আগে চীন আর আসিয়ানের মধ্যে সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন থেকেই দু'পক্ষের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। পরিবহন নেটের স্বয়ংসম্পূর্ণতাআর ক্রমানুসারে শুল্ক কমানোর ফলে ১৫ বছরে চীন আর আসিয়ানের বাণিজ্যিক মূল্য ১৫ গুণ বেড়েছে। আসিয়ান চীনের চতুর্থ বড় বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে।

 অক্টোবর মাসের শেষ দিকে কুয়াংসিয়ের নাননিংয়ে অনুষ্ঠিত চীন ও আসিয়ানের সংলাপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ১৫তম বার্ষিকী স্মারক শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান আসিয়ানের পালাক্রমিক সভাপতি রাষ্ট্র ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট গ্লোরিয়া ম্যাকাপাগাল আরোয়ো বলেছেন, "চীন আর আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতি দিনই বেড়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, আসিয়ানে চীনের পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়বে। বিশ্বের মঞ্চে চীন আর আসিয়ান একসঙ্গে আবির্ভূত হয়েছে। এমন পরিবর্তনের সুগভীর তাত্পর্য আছে। বিভিন্ন দেশের নেতারা চীন ও আসিয়ানের অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীন ও আসিয়ানের যোগাযোগ গভীরতর হওয়াকে স্বাগত জানায়।"

 ২০০২ সালের নভেম্বর মাসে কাম্পুচিয়ার রাজধানী নমপেনে অনুষ্ঠিত চীন ও আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে চীন--আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ অবাধ বাণিজ্য অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চীন, ব্রুনেই, কাম্পুচিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ মোট ১১টি দেশ, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনসংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি। জিডিপি দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 বেশ কয়েক বছর আলোচনার পর চীন আর আসিয়ানের মধ্যে "পণ্য বাণিজ্য চুক্তি" আর "বিবাদ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চুক্তি" স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাস থেকে চীন আর আসিয়ানের সাত হাজার রকমেরও বেশি পণ্যের শুল্ক হার যথাক্রমে হ্রাস হয়েছে। ২০১০ সাল পর্যন্ত চীন আর আসিয়ানের ৯০ শতাংশেরও বেশি পণ্যের শুল্ক হার শূন্য হবে।

 কুয়াংশি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তুংসিং শহর চীন ও ভিয়েতনামের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এ শহর হচ্ছে চীন ও ভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বাণিজ্য বন্দর। ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী হো ওয়েন পিং এখানে দশ বছর ধরে ব্যবসা করেছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের আসবাবপত্র বাজার পরিদর্শনের পর ভিয়েতনামের উত্পাদিত রোজ্-উড আসবাবপত্র চীনে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেছেন , "আমি চীনা ব্যবসায়ীর সহযোগিতা করে রোজ-উড আসবাবপত্রের ব্যবসা করতে চাই। আমার চীনা অংশীদার ভিয়েতনামের রোজ-উড আসবাবপত্র চীনে বিক্রি করার জন্য আমাকে সাহায্য করবেন। তাছাড়া আমি চীনে একটি রোজ-উড আসবাবপত্রের কারখানা স্থাপন করতে চাই।"

 তুংসিং শহরে হোর মতো আরো অনেক ব্যবসায়ী আছেন। এ বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তুংসিং বন্দর দিয়ে যাতায়াতকারী লোকসংখ্যা ২০ লাখের বেশি হবে। আমদানি ও রপ্তানী পণ্যের মোট মূল্য প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার।

 স্থিতিশীল রাজনৈতিক সম্পর্ক, বিশাল ভোগ্যপণ্য বাজারের দরুণ চীন আসিয়ানের মধ্যকার পুঁজি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সহযোগিতা ক্রমে ক্রমে শ্রেষ্ঠ যুগে প্রবেশ করেছে। ১৫ বছরে আসিয়ান দেশগুলো চীনে বিদেশী পুঁজির গুরুত্বপূর্ণ উত্স স্থানে পরিণত হয়েছে এবং চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশে যাওয়া প্রথম বাছাই অঞ্চলের অন্যতম। ২০০৫ সালের শেষ দিক পর্যন্ত আসিয়ান দেশগুলো চীনে মোট ৩৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। আসিয়ানের দশটি দেশে ১০০০টিরও বেশি চীনের নানা ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে।

 বার্ষিক চীন-আসিয়ান মেলা হচ্ছে চীন ও আসিয়ানের মধ্যকার পুঁজি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। চলতি বছরের মেলায় আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আসিয়ানের বিভিন্ন দেশ চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অনেক সুবিধাজনক নীতি চালু করেছে। যেমন ভিয়েতনামের কিছু প্রদেশে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জমি ভাড়া আর আংশিক কর আদায় মওকুফ করেছে। মালয়েশিয়া যন্ত্রপাতি নির্মাণ বিষয়ক চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে দশ বছর করমুক্ত সুবিধা দিয়েছে।

 ভিয়েতনামের হো চিন মিন শহরের পুঁজি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ত্বরান্বিত কেন্দ্রের নির্বাহী কর্মকর্তা দুইয়োলান বলেছেন, "পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য ও নীতিসহ নানা ক্ষেত্রের পরিসেবা দেয়ার জন্য আমরা বিশেষ করে পুঁজি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ত্বরান্বিত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। শিক্ষা ও বাণিজ্যিক সেবাসহ সবই আমাদের পছন্দনীয় পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র।"

 তা ছাড়া, টিকা প্রকল্প আর শ্রম রপ্তানী ক্ষেত্রে চীন ও আসিয়ানের সহযোগিতাও অব্যাহতভাবে উন্নতি হয়েছে। এখন আসিয়ান হচ্ছে বিদেশে চীনের গুরুত্বপূর্ণ টিকা ও শ্রমিক বাজার। ২০০৫ সালের শেষ দিক পর্যন্ত আসিয়ান দেশগুলোতে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকা প্রকল্প ও শ্রম চুক্তির মোট মূল্য ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।

 চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী বো শি লাই চীন আর আসিয়ানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী। তিনি বলেছেন, "বিগত কয়েক বছরে চীন আর আসিয়ানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দ্রুতই বিকশিত হয়েছে। প্রতি বছরের প্রবৃদ্ধির হার অতি উচু। চলতি বছরে বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশেরও বেশি হবে। ২০১০ সাল পর্যন্ত চীন ও আসিয়ানের বাণিজ্যিক মূল্য ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে।"