মার্কিন কংগ্রেসের অধীনস্থ " ইরাক সমস্যা সংক্রান্ত গবেষণা গ্রুপ" ৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তার গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । প্রতিবেদনে প্রস্তাব করা হয়েছে , মার্কিন সরকার কূটনৈতিক উপায়ে ইরাক সমস্যার সমাধান করবে এবং ২০০৮ সালের প্রথম দিকের আগে ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে ।
এক শ'রও বেশি পৃষ্ঠাবিশিষ্ট এ প্রতিবেদনে জর্জ বুশের বর্তমান ইরাক সংক্রান্ত নীতির সরাসরি সমালোচনা করা হয়েছে । প্রতিবেদনে এ মত প্রকাশ করা হয়েছে যে, ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর এবং দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে । ইরাকের ভেতরে ঘন ঘন সহিংস আক্রমণ ঘটছে । মার্কিন সৈনিকদের হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে । ইরাকের নিরীহ নাগরিকরা দু:খদুর্দশায় জর্জরিত রয়েছেন । ইরাকের নতুন সরকার দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না । ইরাকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে । বুশের ইরাক সংক্রান্ত নীতিতে কোনো সুফল পাওয়া যায় নি । ইরাকের ভেতরে মার্কিন প্রভাব বিলুপ্তির পথে রয়েছে । প্রতিবেদনে মোট ৭৯টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে । তবে এ গবেষণা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা , কংগ্রেসের সাবেক ডেমোক্রেটিক সদস্য লি হামিল্টন বলেছেন , এ ৭৯টি প্রস্তাবের মধ্যে তিনটি প্রস্তাব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । এ তিনটি প্রস্তাব পরস্পরের সংগে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ।
এ তিনটি প্রস্তাব হচ্ছে : প্রথমত ইরাকে মার্কিন বাহিনীর দায়িত্বের পরিবর্তন করা হবে , যাতে মার্কিন বাহিনী ইরাক থেকে সরে যেতে পারে । ইরাকে মার্কিন বাহিনীর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এই হওয়া উচিত যে, ইরাকী বাহিনীকে সহায়তা করা , ইরাকী বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া , সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করা এবং তাদের কাছে প্রস্তাব দেয়া । একই সংগে ইরাকের বাস্তব অবস্থা অনুসারে মার্কিন বাহিনী ২০০৮ সালের প্রথম তিন মাসের আগে ইরাক থেকে সরে যেতে শুরু করবে । ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী পর্যায়ক্রমে দ্রুত প্রতিঘাত বাহিনী বা বিশেষ বাহিনীতে রূপান্তরিত হবে । তাদের প্রধান দায়িত্ব হবে ইরাকের ভেতরকার আল কায়দার ওপর আঘাত হানা ।
দ্বিতীয়ত ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ,বিশেষ করে জাতীয় সমঝোতার ক্ষেত্রে আরো বেশি পরিবর্তন আনার জন্যে পদক্ষেপ নিতে ইরাক সরকারকে তাগিদ দেয়া হবে । যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে ইরাক সরকারকে উত্সাহিত করতে হবে । ইরাকী বাহিনীকে লড়াইয়ের প্রধান দায়িত্ব পালনে সাহায্য করতে হবে ।
তৃতীয়ত ইরাকে ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে নতুন কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হবে । প্রতিবেদনে এ মত প্রকাশ করা হয়েছে যে, ইরাকের সমস্যা সমাধান করতে হলে ইরাকের সমস্ত প্রতিবেশী দেশকে শরীক হওয়ার সুযোগ দিতে হবে । তার মধ্যে ইরান , সিরিয়া , মিশর এবং জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য দেশ , জাতি সংঘ মহাসচিব ও ই ইউর প্রতিনিধিকে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত ।
একই দিনের এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা গ্রুপের কর্মকর্তা , মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যামস বাকের বলেছেন , গবেষণা গ্রুপ বুশ সরকারের জোর দেয়া প্রচলিত নীতিতে অটল থাকার পরিকল্পনাকে সমর্থন করে না , বুশ সরকারের ইরাকে আরো সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাবকে সমর্থন করে না । গবেষণা গ্রুপ অবিলম্বে ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারকেও সমর্থন করে না এবং মনে করে যে , আগামী কিছু দিনের জন্যে মধ্যে ইরাকে ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ একই দিন বলেছেন , তিনি গবেষণা গ্রুপের প্রস্তাব নিষ্ঠার সংগে বিবেচনা করবেন । তবে তিনি পুরোপুরিই এসব প্রস্তাবে রাজী নাও হতে পারেন । মার্কিন হোয়াইটহাউসের মুখপাত্র টনি স্নো বলেছেন , হোয়াইটহাউস এখন এ প্রতিবেদনের পর্যালোচান ও মূল্যায়ণ করছে । তবে এ গ্রুপের প্রতিবেদন হোয়াইটহাউসের অভিমতের প্রতিনিধিত্ব করে না । হোয়াইটহহাউস বলেছে , এসব প্রস্তাব মূল্যায়ণ করার পর বুশ আগামী কয়েকি সপ্তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নেবে ।
|