v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-06 20:27:19    
মাতৃনদী সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের কাহিনী

cri
    চীনের হোয়াং হো নদী ও ইয়াং সি নদীর অববাহিকায় হাজার হাজার বছর ধরে অসংখ্য চীনারা বসবাস করে আসছেন । এ দুটো নদী চীনের মাতৃনদী বলে সপরিচিত । তবে গত কয়েক বছরে হোয়াং হো ও ইয়াং সি নদীর দুই তীরে অনেক কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এসব কারখানা চীনের অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি এ দুটো নদীর পরিবেশকেও দুষিত করেছে । ১৯৯৯ সালের পর চীনে মাতৃনদী সংরক্ষণ তত্পরতা চালানো হয় । কোটি কোটি তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা চীনের নদ-নদী ও হ্রদগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । গত বছর এ তত্পরতা জাতি সংঘের প্রথম "পৃথিবীর রক্ষীর পুরস্কার" লাভ করেছে ।

    চীনের যুবকদের সংগঠন - চীনা কমিউনিস্ট যুব লীগ , চীনের জাতীয় পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরো ও অন্যান্য বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত একটি কল্যাণমূলক তত্পরতা । সংগঠনটির লক্ষ্য হচ্ছে হোয়াং হো ও ইয়াং সি নদীর মত নদ-নদী সংরক্ষণ করা । চীনা কমিউনিস্ট যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন কর্মকর্তা হে চুন খে এ তত্পরতা সম্পর্কে বলেছেন ,

    গত ৭ বছরে ৩৫ কোটি কিশোর-কিশোরী মাতৃনদী সংরক্ষণ তত্পরতায় যোগ দিয়েছেন । দেশ বিদেশের কাছ থেকে মোট ৩৮ কোটিরও বেশি ইউয়ান চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছে । চীনের বড় বড় নদীর অববাহিকায় ২ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে ২ হাজারেরও বেশি বনানী বলয় নির্মাণ করা হয়েছে । ফলে কার্যকরীভাবে এসব নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত হয়েছে ।

    গত ৭ বছরে আরো বেশি তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা হোয়াং হো ও ইয়াং সি নদী সংরক্ষণের এ তত্পরতায় শামীল হয়েছেন । ২৮ বছর বয়সের মা সিউ পিং তাদের অন্যতম । হোয়াং হো নদীর উচ্চ অববাহিকায় অবস্থিত উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিং হাই প্রদেশের তা থুং জেলা তাঁর জন্মভূমি । গত কয়েক বছরে তা থুং জেলায় পর পর কাগজ তৈরি কারখানা ও ধাতু ধালাই কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় । কয়েকটি কারখানা দুষিত পানি শোধনের কোনো ব্যবস্থা না করে নদীতে নিষ্কাশন করেছে । এটি সরাসরি এ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হোয়াং হো নদীর শাখা নদী পেই ছুয়ান নদীর ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে ।

    মা সিউ পিং হচ্ছেন তা থুং জেলার পরিবেশ তত্ত্বাবধান বিভাগের একজন কর্মী । তার প্রতিদিনের কাজ হলো বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত দুষণ তত্পরতার ওপর তত্ত্বাবধান করা । তিনি বলেছেন ,

    আমি ও আমার সহকর্মীরা সবসময় লক্ষ্য করছি যে , কারখানাগুলোর দুষিত পানির নিষ্কাশন পেই ছুয়ান নদীকে দূষিত করে কি না । এ রকম সমস্যা দেখা দিলে আমরা যথা সময় অকুস্থলে গিয়ে পরিবেশ দুষিত করার তত্পরতা বন্ধ করা এবং তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নেই ।

    তা থুং জেলা পরিবেশ তত্ত্বাবধান বিভাগের হস্তক্ষেপে এ জেলার দশ বারোটি কারখানা বন্ধ হয়েছে কিংবা অন্যত্র সরে গেছে । তবে মা সিউ পিং এসব সাফল্যে সন্তুষ্ট হন নি । তাঁর উদ্যোগে এ জেলায় কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে পেই ছুয়ান নদী সংরক্ষণ সংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবক দল গঠিত হয় । তারা নিজেদের টাকা দিয়ে গাছ লাগানো , প্রাকৃতিক পরিবেশ সংক্রান্ত গ্রীষ্মকালীন শিবির , এ সংক্রন্ত হস্তলিপি ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতার মত তত্পরতা চালান ।

    মা সিউ পিং বলেছেন , তিনি সবাইকে জানাতে চান যে, আমাদের কাছের হোয়ং হো নদীর পানিকে দুষণ থেকে রক্ষা করার বিশ্বব্যাপী তত্পর্য রয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    হোয়াং হো নদীকে রক্ষা করার কাজ যেমন আমাদের জন্মভূমিকে রক্ষা করার কাজ , তেমনি আমাদের একই পৃথিবীকে রক্ষা করার কাজ । আমাদের মাতৃনদীকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে আমাদের পৃথিবীকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যাবে ।

    মা সিউ পিং ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের তত্পরতা তাঁর জন্মভূতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে । আরো বেশি লোক পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন । এখন প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং হোয়াং হো নদীর উত্পত্তির পানির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা স্থানীয় জনসাধারণের একটি সচেতন আচরণে পরিণত হয়েছে ।

    চীনের অন্তমঙ্গোলিয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ছেং খৌ জেলাও হোয়াং হো নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত । এখানেও হোয়াং হো নদীর পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে কিছু তরুণ স্বেচ্ছাসেবক তত্পর রয়েছেন । ছেং খৌ জেলায় হোয়াং হো নদীর পঞ্চাশ কিলোমিটারেরও বেশি নদী পথ রয়েছে । তবে এ নদী পথের মরুকরণ খুবই গুরুতর ।

    ৩০ বছর বয়সের কাও ইয়ুং হচ্ছেন ছেং খৌ জেলার এ স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্তা । তিনি বলেছেন , তাঁর জীবনের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের প্রবল জোয়ারে আরো বেশি সংখ্যক কিশোর-কিশোরীদের সমাবেশিত করা । তাঁর সুপারিশে ও সংগঠনে স্থানীয় তরুণরা মাতৃনদী সংরক্ষণ তত্ত্বাবধান কেন্দ্র স্থাপন করেছে । তাদের কাজ হলো সারা বছর হোয়াং হো নদীর পানির উত্কর্ষ ও পলিমাটি তত্ত্বাবধান করা । প্রতি বছরের বসন্তকালে তারা গাছ ও ঘাস লাগিয়ে মরুভূমি সবুজীকরণের কাজে যোগ দেন । কাও ইয়ুংয়ের পরিচালনায় কিছু কিছু তরুণ মরুভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ সংক্রান্ত অর্থনীতি উন্নয়নের কাজও শুরু করেছে । কাও ইয়ুং বলেছেন ,

    আমরা একদিকে অনাবাদী জমি ও মরুভূমিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংস্কারের কাজ চালাই । অন্যদিকে এর মধ্য দিয়ে আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকেও কিছু লাভবান হচ্ছি । আমরা প্রধানত এসব জমিতে মরুভূমিতে আবাসযোগ্য গাছ লাগাই । মাতৃনদী সংরক্ষণে আমাদের প্রধান কাজ হলো পলিমাটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা , যাতে পলিমাটি কোনোক্রমে হোয়াং হো নদীতে না যায় ।

    হোয়াং হো নদী বরাবর এমন আরো অনেক লোক আছেন যারা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে নানা উপায়ে মাতৃনদী সংরক্ষণের কাজে যোগ দিচ্ছেন ।

    হোয়াং হো নদীর মধ্য অববাহিকায় অবস্থিত হো নান প্রদেশের ইয়ে লান চীনা ভাষার হস্তলিপি ও ফটো তোলায় পারদর্শী । তিনি প্রায়সই এ দুটো উপায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন ।