ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্যে ফ্রান্স , ব্রিটেন , জার্মানী , যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক মহাপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তারা গত মংগলবার প্যারিসে বৈঠক করেছেন । বৈঠকশেষে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক ইস্তেহারে বলা হয়েছে , ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের বিষয়ে ছটি দেশ সারগর্ভ অগ্রগতি অর্জন করেছে । তবে ছটি দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নি ।
ইস্তেহারে বলা হয়েছে , ছটি দেশ চায় যে, জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কার্যকরী অবরোধ সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করুক । তারা মনে করে যে , অবরোধের লক্ষ্য সন্দিহান পারমাণবিক তত্পরতা বন্ধ করা । অথচ কিছু কিছু খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সমস্যা রয়ে গেছে । এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা অচিরে অনুষ্ঠিত হবে ।
এর আগে ফ্রান্স , জার্মানী ও ব্রিটেন গত ২৮ নভেম্বর ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ সংক্রান্ত জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাব প্রণয়ন করেছিল । মতামত সংগ্রহের জন্যে প্রস্তাবটি চীন , রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাঠানো হয় । এ খসড়া প্রস্তাব অনুসারে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে , বিদেশে ইরানী নাগরিকদের ভ্রমণ সীমিত রাখা হবে ইরান কর্তৃপক্ষের পারমাণবিক তত্পরতায় ব্যবহৃত হতে পারে বিদেশে এমন ইরানী নাগরিকদের আমানত ফ্রিজ করা হবে । কূটনীতিকদের সূত্রে জানা গেছে , ইরানের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বরাবরই মতভেদ রয়েছে । ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের সমস্যায় জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ ও জার্মানীর মধ্যে যাতে বিভেদ সৃষ্টি হতে না পারে , তার জন্যে এ সমস্যায় সেই প্রস্তাবের কথাগুলো লক্ষ্যনীয়ভাবে দুর্বল হয়ে গেছে । তা সত্ত্বেও রাশিয়া ও অন্য দেশ মনে করে যে , ইরানের বিরুদ্ধে ই ইউয়ের উত্থাপিত অথনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপের কথা বেশি অনমনীয় হয়েছে । অপর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে , এ অবরোধের প্রাবল্য যথেষ্ট নয় ।
বিশ্লেষকদের মতে এবারের অধিবেশনে যে কোনো চুক্তি হয় নি , তার কারণ হচ্ছে এই যে, ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের সমস্যায় ছয়টি দেশের মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে ।
ফ্রান্স সবসময় কূটনৈতি উপায়ে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী । ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়ান বাপ্টিস্ট মাটেই সম্প্রতি বলেছেন , ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়া আমাদের লক্ষ্য নয় । আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা এবং ছয়টি দেশের ইতিবাচক প্রস্তাবের ভিত্তিতে আলোচনা চালানো ।
চীনও বহবার ঘোষণা করেছে যে, চীন আশা করে , এবারের অধিবেশন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে ইরানের পরমাণু সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে সহায়তা করবে ।
রাশিয়া বলেছে , সে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপের পক্ষপাতী নয় । রাশিয়া ফ্রান্স , ব্রিটেন ও জার্মানীর খসড়া প্রস্তাব পাওয়ার পর বলেছে , সে ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধের বিরোধী নয় । তবে এ অবরোধ যথার্থ হওয়া উচিত । দেশটি মনে করে যে, খসড়া প্রস্তাবে লিপিবদ্ধ অবরোধমূলক ব্যবস্থা বেশি কঠোর হয়েছে । রাশিয়া ইরানী নাগরিকদের ওপর যে কোনো অবরোধমূলক ব্যবস্থার বিরোধিতা করে । সে এ অবরোধের সময়সীমা রাখার দাবি জানিয়েছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব অনমনীয় হলেও যখন ইরাক সমস্যা তার কাছে এক নম্বর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে , তখন সে উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, ইরাকের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ইরানও ইরাকের পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেবে না । এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সংগেও সংগতিপূর্ণ । মধ্যপ্রাচ্যের ওপর প্রবল প্রভাব বিস্তারকারী দেশ হিসেবে ইরাকের পরিস্থিতির স্থিতিশীলতার জন্যে ইরানের গুরুত্ব অপরিসীম । এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে বেশি দূরে যেতেও দ্বিধাবোধ করবে ।
|