v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-04 20:49:49    
চীন চিকিত্সাবিদ্যা ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক বিনিময় আদানপ্রদান সক্রিয়ভাবে চলছে

cri
    বিশ্বের অনেক দেশেরই নিজেদের চিকিত্সাবিদ্যা ব্যবস্থা আছে। এর মাধ্যমে জনগণের রোগ প্রতিকার করার ক্ষেত্রে চিকিত্সাবিদ্যার বৈজ্ঞানিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে ।

    চীনা চিকিত্সাবিদ্যা মূলতঃ আকুপাংচার, ভেষজ ওষুধপত্র, ছিকোং (এক ধরণের চীনা শরীর চর্চা) এবং পথ্যের সমন্বয়ে তাত্বিক ও ব্যবহারিকভাবে বিকশিত হয়েছে শতাব্দি শতাব্দি ধরে।

    চীনা চিকিত্সাবিদ্যা সাধারণভাবে বলতে গেলে চীনের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী যেমন হান, তিব্বতী, মংগোলীয় আর উইগুরবাসীদের সার্বিক চিকিত্সা ব্যবস্থা বোঝায়। এগুলোর মধ্যে হান জাতির চিকিত্সা ব্যবস্থা সমগ্র চীনে এবং বিশ্বের বহুস্থানে প্রভূত প্রভাব বিস্তার করেছে। হান জাতির চিকিত্সা ব্যবস্থাকে উন্নয়নকারী প্রাচীণতম সংস্কৃতি বলা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দিতে পশ্চিমা চিকিত্সাবিদ্যা জনপ্রিয় হবার সময় চীনা চিকিত্সাবিদ্যা প্রাচ্যের চিকিত্সাবিদ্যা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। চীনের রাষ্ট্রীয় চিকিত্সাবিদ্যা প্রশাসন ব্যুরোর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের প্রধান শেন চিসিয়াং বলেছেন:" বিশ্বের অনেক দেশগুলোরই নানা ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যা আছে, তবে এর মধ্যে চীনা চিকিত্সাবিদ্যার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। দেশে-বিদেশে তা অনেক জনপ্রিয়।"

    চীন ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যা ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক বিনিময় চলছে। চীনের চিকিত্সাবিদ্যা সারা বিশ্ব এখন ভালভাবেই জানে । গত শতাব্দীর ৭০ দশকে চীন সরকারের সহযোগিতায় চীনা চিকিত্সাবিদ্যা দ্রুতভাবে বিশ্বের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, বর্তমান চীনা চিকিত্সাবিদ্যা মোট ১৩০টিরও বেশি দেশে চালু করা হয়েছে। বৈদেশিক চীনা চিকিত্সাবিদ্যা সংস্থা রয়েছে মোট ৫০ হাজারেরও বেশি।

    চীনা চিকিত্সাবিদ্যার ডাক্তাররা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন , যাতে রোগীদের পরিপূর্ণ ও বিশদ তথ্য পাওয়া যায় এবং তাদের চিকিত্সায় দিক-নির্দেশনা দেয়া যায়। তারা পর্যবেক্ষণ, শ্রবণ ও স্পর্ষ করেন এবং গন্ধ শুঁকেন। তারা রোগীর সঙ্গে বা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা পর্যবেক্ষণ হৃত্পরীক্ষা ও ঘ্রাণ বিদ্যা, প্রশ্নোত্তর এবং নাড়ী দেখা ও স্পর্শানুভূতির পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেন। প্রধান চার পদ্ধতি বলে পরিচিত এই পদ্ধতিগুলোর প্রত্যেকটির স্পষ্ট ব্যবহারিক গুণ আছে এবং ডাক্তাররা এ সব পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে রোগের-বিশ্লেষণ করতে পারেন।

    চীনা চিকিত্সাবিদ্যা বিশ্বকে অবহিত করা ছাড়া ও চীন সরকার আরো ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যার আইন প্রণয়ন, প্রশাসন এবং তা রাষ্ট্রীয় চিকিত্সা সিস্টেমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করার উপর গুরুত্ব দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মৌলিক ঔষধ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যা বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মালেবোনা মাতসোসো বলেছেন, " ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উপস্থাপিত " বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যা উন্নয়ন কৌশলে" বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোকে ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যা উন্নয়নের নীতি নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশ নিজের দেশের অবস্থা অনুযায়ী, ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যা দেশের চিকিত্সা সিস্টেমে অন্তর্ভূক্ত রাখবে।"

    চীনা ভেষজ ওষুধের লক্ষ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিত্সা করা। এটি প্রধানতঃ চীনা প্রাকৃতিক ওষুধপত্র এবং উত্পন্ন ওষুধ নিয়ে গঠিত , যেমন ভেষজ, প্রাণীজ, খনিজ, কিছু রাসায়নিক এবং জৈব পদার্থ নিয়ে তৈরি ওষুধ। চীনা ওষুধের আবিস্কার ও প্রয়োগের ইতিহাস হাজার বছরের । তবে চীনা চিকিত্সাবিদ্যা কথাটি চীনে পশ্চিমা চিকিত্সাবিদ্যার প্রবেশের পরই পরিচিত হয়েছে। চীনা চিকিত্সাবিদ্যার লক্ষ্য হচ্ছে পশ্চিমা চিকিত্সাবিদ্যার সঙ্গে তার পার্থক্য নিরূপন করা।

    ভবিষ্যতে চীনা চিকিত্সা আর ওষুধের বর্তমান ধারা বজায় রেখে চীন উত্কৃষ্টতর ভেষজ উদ্ভিদের চাষ করবে। তাতে আইসোটোপ আর জৈব প্রকৌশল ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি, যষ্টিমধুর শেকড়, বড় পুস্পবিশিষ্ট স্কালক্যাপের শেকড় এবং চীনা থরোওয়াক্সসহ বিভিন্ন ধরণের চাহিদা সম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদের উত্পাদন বাড়ানো হবে। বীজের বিলুপ্তি রোধ এবং নতুন ভেষজ উদ্ভিদ চাষের উপর গবেষণাও বাড়ানো হবে। চীনের রাষ্ট্রীয় চীনা চিকিত্সাবিদ্যা প্রশাসন ব্যুরোর উপপ্রধান লি তানিং বলেছেন" চীন হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশ, তার দায়িত্ব হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাবিদ্যার উন্নয়নকে সক্রীয়ভাবে ত্বরান্বিত করা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতার বিনিময় করা । বিশেষ করে চীন নির্দিষ্ট দেশের অবস্থা অনুযায়ী, চিকিত্সাবিদ্যার উন্নয়নে বেশি অবদান রাখবে।"

    চীনা চিকিত্সাবিদ্যা প্রয়োগের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। চীনা ওষুধ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি চীনা সংস্কৃতির সঙ্গে বেশ সঙ্গতিপূর্ণ। এর অধিকাংশ উপকরণ প্রাকৃতিক উত্স থেকে নেয়া হয় বলে তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই বা খুব সামান্য। বনাজী ওষুধে বহু ধরণের উপকরণ থাকে বলে তা দিয়ে বহু ধরণের রোগ নিরাময় করা যায়। চীনা ওষুধের আরেকটি গুণ হচ্ছে, তা প্রধানতঃ যৌগ। বিভিন্ন ধরণের উপকরণ যথোপযুক্ত অনুপাতে সমন্বিত করে ওষুধ তৈরী করলে ন্যূনতম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসহ জটিল রোগের চিকিত্সা করা যায়।