একটি হঠাত্ সুযোগে চীনের লান চৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক মাও শি ছাং ভারতে যান। তিনি ভারত সম্পর্কে খুবই আগ্রহী। তাঁর চেষ্টায় তিনি তিন বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন। কেন তিনি ভারতকে এতো পছন্দ করেন?
আমার প্রতি ভারতে আসা একটি স্বপ্ন ছিল। আজ এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। যখন স্বপ্নটি বাস্তবায়িত হয়, তখন খুবই খুশি হয়েছি। আমি ভারত সম্পর্কে খুবই আগ্রহী।
৫০ বছর বয়সী মাও শি ছাং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, ছোট বেলা থেকেই ভারত সম্পর্কে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। প্রথমে তিনি ভারতের চলচ্চিত্র, গান , সংস্কৃতি পছন্দ করতে শুরু করেন। তারপর তিনি চীনের থাং রাজবংশের বিশিষ্ট বৌদ্ধ পন্ডিত হিউয়ান -শাংয়ের বৌদ্ধশাস্ত্র আনতে ভারতে যাওয়ার গল্প জেনেছেন। ফলে তিনি ভারত সম্পর্কে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর মাও শি ছাং লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী ভাষা বিভাগে ইংরেজী ও মার্কিন সাহ্যিত্যের শিক্ষক হন। কিছু দিন পর তিনি গবেষক শিক্ষার্থী হিসেবে ভারতে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে খুবই আনন্দ হন। তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
যদিও ভারতের অবস্থা চীন থেকে অনেক তফাত আছে, তবুও সুন্দর নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা তার কাছে চমত্কার লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের বাইরে শিক্ষক মাও ভারতের গান ও নাচ উপভোগ করতে খুবই পছন্দ করেন। তিনি সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ করেন। তিনি মনে করেন, ভারতে থেকে তিনি আরামে আছেন।
নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মাও শি ছাং প্রধানত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, বিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে চীনের দীর্ঘসম্পর্ক ছিল ।
আমার জানা আছে, সুং রাজবংশ থেকে চীন ও ভারতের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীন সফরের পর চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান আবার শুরু হয়।
শিক্ষক মাও মনে করেন, ভারতের সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ । এ সমৃদ্ধ সংস্কৃতি কবি রবীন্দ্রনাথকে সৃষ্টি করেছে। তাই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষণার আগে ভারতের সংস্কৃতি জানা উচিত। তিনি ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে আলাপের সময়ে বলেছেন, তিন বছর ধরে আমি ভারতে আছি। আমার ছোট বেলার ভারতে আসার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি।
আমি ভারতের সংস্কৃতিকে পছন্দ করি। এখানে থেকে আমার ভালো লাগছে। আমি সুন্দর কাপড় না পরলেও নিজের গবেষণা থেকে আনন্দ পাচ্ছি।
চীনের একজন পন্ডিত হিসেবে শিক্ষক মাও চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের পথিকৃত্ থান ইয়ুন শানের ওপর খুবই শ্রদ্ধা করেন।
চীনের থাং রাজবংশের হিউয়ানশাং চীন ও ভারতের সংস্কৃতি ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। আধুনিককালে থান ইয়ুন শান এই দু'টি সংস্কৃতিকে আবার সংযুক্ত করেছেন। হিউয়ানশাং ভারতের সংস্কৃতি আহরণ করেছেন। থান ইয়ুন শান ভারতে চীনের সংস্কৃতি প্রচার করেছেন। তাই তিনি আমার কাছে চির-সম্মানিত।
বর্তমানে নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ছাড়া, প্রত্যেক সপ্তাহে শিক্ষক মাও নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা শেখাচ্ছেন। এর পাশা পাশি তিনি অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। গবেষণামূলক প্রবন্ধে তিনি চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান সম্পর্কে নিজের বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, থান ইয়ুন শান-এর মত দু'দেশের সাস্কৃতিক আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে তিনি নিজের অবদান রাখতে ইচ্ছুক।
আমি চীন-ভারত সংস্কৃতির দূত হতে ইচ্ছুক। ভারতের সংস্কৃতি যত বেশি সম্ভব চীনাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছুক।
|