৩০ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাইস ফিলিস্তিন-ইসরাইল অঞ্চল সফর করেছেন। এটা হল গত দু'বছরে এই অঞ্চলেরাইসের সপ্তম সফর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদিও কোন কোন আরব দেশ ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ নিষ্পত্তিতে চাপ সৃষ্টি করেছে তবু রাইসের এবার সফর এ অর্থ ব্যক্ত করে নি যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য প্রাচ্য নীতির কেন্দ্র বিন্দু ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিষয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। কারণ ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র কোণঠাসা হয়ে প্রড়েছে। পরবর্তী কিছু সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য প্রাচ্য নীতি ইরাক থেকে ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিষয়ে স্থানান্তরিত হতে পারবে।
গাজা অঞ্চলে যুদ্ধ-বিরতি বাস্তবয়নেউত্সাহ দেয়া রাইসের এবারের ফিলিস্তিন-ইসরাইল অঞ্চল সফরের প্রধান উদ্দেশ্য। ৩০ নভেম্বর ফিলিস্তিন আর ইসরাইলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় রাইস যে কথা বেশী করে বলেছেন তা হল যুদ্ধ-বিরতি বাস্তবায়নে দু'পক্ষ যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানানো। রাইস আরও বলেছেন, তিনি আশা করেন দু'পক্ষ এই সুযোগ নিয়ে পারস্পরিক আস্থা জোরদার করবে, যুদ্ধ-বিরতির পরিস্থিতি আরও সংসংবদ্ধ ও সম্প্রসারণ করবে এবং অবশেষে ' দু'দেশের কর্মসূচী ' বাস্তবায়নের জন্যে চেষ্টা করবে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, এবারের সফরে রাইস কয়েকটি নমনীয় আরব দেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তার মানে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।জদার্ন, মিসর , আর সৌদি আরব সহ আরব দেশসমূহ বহু বার ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যায় যথেষ্ট চেষ্টা না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রেরসমালোচনা করেছে। সম্প্রতি জর্দানের বাদশাহ আবলিও দ্বিতীয় জর্দান সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জজ ডাবলিও বুশকে বলেছেন, ফিলিস্তিন সমস্যা হল মধ্য প্রাচ্যের সমস্ত সমস্যার কেন্দ্রীয় বিষয়। ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না করা হলে ইরান সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এ সব দেশে উদ্বিগ্ন হয় যে ফিলিস্তিন-ইসরাইল লাগাতার সংঘর্ষের ফলে চরমপন্থী শক্তি আরও বিকাশিত ও সম্প্রসারিত হবে। এ সব শক্তির অস্তিত্বে ফিলিস্তিন-ইসরাইল এবং ইরাক সহ এই এলাকার সংঘর্ষ আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এ সব চরম শক্তি হয়তো অপেক্ষাকৃত নমনীয় আরব দেশসমূহের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করবে এবং এ সব দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর হুঁমকি সৃষ্টি করবে।
যদিও এ ধরনের চাপ বহন করেছে, তবু মার্কিন সরকারের কর্তকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তৃতা থেকে বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগী বিষয় ইরাক। প্রথম কারণ হল , বুশ সরকার যে অভ্যন্তরীণ চাপের সম্মুখীন হয়েছে তা ইরাক সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। বতর্মানে লক্ষাধিক মার্কিন সৈন্য ইরাকে মোতায়েন আছে। ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নিহত মার্কিন সৈন্যদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অধিক থেকে অধিকতর মার্কিন নাগরিক বুশ সরকারের ইরাক নীতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সুতরাং গত মাসে জজ বুশ মধ্যবর্তীকালীণ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
দ্বিতীয় কারণ হল, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যার নিষ্পত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর কর্মসূচী নেই। ২০০২ সালে প্রসিডেন্ট বুশ মধ্য-প্রাচ্য শান্তির রোড় ম্যাপ পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে ফিলিস্তিনী সশস্ত্র সংস্থাকে ইসরাইলের উপর আঘাত বন্ধ এবং জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের তত্পরত বন্ধ করতে হবে। তবে দু'পক্ষই এই পরিকল্পনার নির্ধারিত বিষয়বস্তু মেনে চলছে না। গত বছর ইসরাইল একতরফাভাবে গাজা থেকে তার সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে, চলতি বছর লেবানন-ইসরাইল যুদ্ধ এবং গাজা অঞ্চলে ইসরাইল সামরিক অভিযান চালিয়েছে। যার ফলে এই পরিকল্পনা এখনো কেবল নাম মাত্র।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ-বিরতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্র এক দিকে আব্বাসকে ইসরাইলের উপর ফিলিস্তিন সশস্ত্র ব্যক্তিদের আক্রমণে বাধা দিতে সাহায্য করবে , অন্য দিকে আরও আপোষ করার জন্যে ইসরাইলকে রাজি করাবে।
|