v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-01 15:35:41    
চীনের হানচৌ শহরের বোন নামে বোনা সমিতি

cri
    হাতে বোনার কাজ বললে হয়ত অনেকে মনে করবেন যে , কাজটা সময় কাটাবার এক দারুণ শখ । কিন্তু কোনো কোনো এলাকায় হাতে বোনার কাজ কিছু পরিবারের জন্য আয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় । পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হানচৌ শহরের লাওতুং রোডের আবাসিক এলাকার বোন নামে বোনা সমিতি অনেক কর্মচ্যুত নারী শ্রমিককে জীবনযাপনের অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে ।

    বোন নামে বোনা সমিতি ২০০২ সালের মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় । এখন সমিতিতে প্রায় ৫০০ কর্মী কাজ করেন । স্যু ছিমিং সমিতির একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি । তিনি জানিয়েছেন, সমিতির শ্রমিকরা উলের সুতা দিয়ে সেলাইর কাজ করেন । যেমন পুতুলের কাপড়, টুপি,হাতে সেলাই করা চারুশিল্প ইত্যাদি । এখানে কাজের পরিমান হিসাবে বেতনের ব্যবস্থা চালু হয়েছে । যত বেশি কাজ করা যায় তত বেশি বেতন পাওয়া যায় ।যিনি সবচেয়ে বেশি এবং ভাল কাজ করেন তিনি মাসে দু'হাজারেরও বেশি রেনমিনপি পান । মাদাম স্যু ছিমিং বলেন, যারা প্রত্যেক দিন আমাদের এখানে কাজ করতে আসেন, তারা মাসে কমপক্ষে এক হাজার ইউয়ান পেতে পারেন । বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ও বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্যে কোনো কোনো কর্মী উপকরণ নিয়ে বাসায় বোনার কাজ করেন । এমনি ভাবে তারা মাসে ৫০০-৬০০ ইউয়ান এমনকি ১০০০ইউয়ান পেতে পারেন ।

    বোনা সমিতিটি এক দাতব্যমূলক সমিতি । সমিতির এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী অনেক নারী শ্রমিক থাকেন । তারা কর্মচ্যুতির পর বাসায় বসে থাকেন । বয়স বেশি , কম পড়াশুনা করেছেন এবং কোনো দক্ষতা নেই বলে তাদের জন্য কাজ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন । কর্মচ্যুত নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধানের জন্যে এই এলাকার কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার তাদের বাসায় গিয়েছেন । এক দিন তারা লক্ষ্য করেছেন যে , এক বেকার নারী শ্রমিকের বাড়ির দেয়ালে ঝুলে আছে হাতে বোনা কারুকার্যময় জিনিস । এটি দেখার পর এলাকার কর্মকর্তারা কর্মচ্যুত নারী শ্রমিকদের নিয়ে হাতে বোনা সমিতি গড়ে তোলার সাড় তোলেন ।

    কয়েক দিনের মধ্যেই আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে হাতে বোনা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় । সমিতির নাম হল "বোন বোনা সমিতি" ।যারা সবচেয়ে আগে সমিতিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন চাং ইউয়ুনকু তাদের মধ্যে একজন । তিনি বলেছেন, প্রথম দিকে বোনা সমিতিতে মাত্র ৪-৫জন নারী কাজ করতেন । সমিতির কোনো উপকরণ ছিল না । আমরা শুধু পুতুলের কাপড় ও বেণী বানাতে পারতাম । আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হাতের কাজ পছন্দকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি । অনেক নারী আমাদের মধ্যে যোগ দিয়েছেন , তারা নিজেদের সেলাই মেশিন সঙ্গে নিয়ে আসেন । আমাদের সমিতি দিনদিন সম্প্রসারিত হয়ে ওঠে ।

    নারী শ্রমিকরা নানা ধরণের রঙবেরঙের হাতের চারুশিল্প বানিয়েছেন । কিন্তু কোথায় এগুলো বিক্রি হবে ? এ সময় খুব কাছেই হো ফাংচিয়ে রাস্তার কথা তাদের মনে পড়ে । হো ফাংচিয়ে হাংচৌ শহরের এক বিখ্যাত পুরাতন জিনিস বিনিময়ের পর্যটন রাস্তা । বোন বোনা সমিতির বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর হাতে বোনা কারুশিল্প এই রাস্তার আকর্ষণীয় বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । বেশ কয়েকটি দোকান তাদের বোনা কাজ বিক্রি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ।

    ৪৮ বছর বয়সী ছাই লিনছুং বোন বোনা সমিতির একজন সদস্য । তিনি একজন প্রতিবন্ধী , ২০০৩ সালে তিনি কর্মচ্যুত হয়েছেন । তার স্বামীও প্রতিবন্ধী মানুষ , মাসে মাত্র এক হাজার বেতন পান । তাদের ছেলে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পড়ছে । স্বামীর বেতন দিয়ে গোটা পরিবারের সংসার চালানো অত্যন্ত কঠিন । কয়েক মাস পর মাদাম ছাই বোনা সমিতি থেকে উপকরণ নিয়ে বাসায় বোনার কাজ করতে শুরু করেন । বোনা সমিতির নমনীয় ব্যবস্থার কারণে তিনি বোনার কাজের পাশাপাশি বাড়ির কাজও করতে পারেন । মাদাম ছাই বলেছেন, আমার বুড়ি খালাম্মা আমাদের সঙ্গে থাকেন । দুপুরে তার জন্যে রান্না করতে এবং ওষুধ খাওয়াতে হয় । যদি সারা দিন বোনা সমিতিতে কাজ করি তাহলে খালাম্মার দুপুরের খাওয়ার সমস্যা হবে । মাদাম ছাই এখন মাসে ১০০০ ইউয়ান পান । এই এক হাজার ইউয়ান তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তিনি এই কাজের খুব গুরুত্ব দেন ।

    বোনা সমিতির দায়িত্বশীল ব্যক্তি মাদাম সুং ছিমিং বলেছেন , বোনা সমিতিতে নারী শ্রমিকরা শুধু নতুন কাজ পাননি বরং তারা তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন ।এখন "বোন বোনা সমিতির" নাম দিন দিন বিখ্যাত হয়ে ওঠেছে । অন্য আবাসিক এলাকার নারীরাও এখানে কাজ করতে আসেন ।

    ৬০ বছর বয়সী বুড়িমা চাং সমিতির নাম শুনে এখানে আসেন । এখন তিনি বোনার কাজ শিখছেন । তিনি বলেছেন, বাড়িতে একা একা ভাল লাগে না । এখানে লোক বেশি , আনন্দ পাই । আগে হাতে বোনা কাজ জানতাম না । এখন আমি শিখেছি ।

    নারী শ্রমিকদের মিলিত প্রচেষ্টায় " বোন বোনা সমিতি"র কাজ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং লাভও দিনদিন ভাল হয়েছে । মাদাম স্যু ছিমিং বলেছেন, আগে এক বছরে সমিতির আয় এক লাখেরও কম । আমাদের প্রচেষ্টায় গত বছর কেবল শ্রমিকদের দেয়া বেতনের পরিমানই ৭ লাখ ইউয়ান ।

    বোনা সমিতির বোনার কাজের গুণগতমান উন্নত এবং সময়মতো দ্রব্য হস্তান্তর করার কারণে সমিতি গ্রাহকদের আস্থা ও প্রসংশা পেয়েছে । এ বছর চেচিয়াং প্রদেশের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বোনা সমিতি তাদের সঙ্গে খেলনা, পোশাক প্রক্রিয়াকরণের দীর্ঘদিনের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ।তাছাড়া

    সমিতির বোনার কাজ যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, জাপান সহ বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হয় ।

    কাজের অর্ডার দিন দিন বেড়ে যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে ২০জন নারী শ্রমিক এজেন্টের কাজও করেন । তারা হাংচৌয়ের আশেপাশের ফু-ইয়াং, সিয়াও শান, ছিয়েনতাও হ্রদ সহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় গ্রামীণ নারীদের বোনার কাজ সংগঠন করেছেন । অধিক থেকে অধিক নারীরা বোনার কাজ থেকে লাভবান হচ্ছেন ।