v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-12-01 10:56:42    
চীনের কৃষকরা গ্রামীণ শিক্ষায় অনুরাগী

cri
    দীর্ঘকাল ধরে চীনের অনুন্নত অঞ্চলের গ্রামীণ স্কুলে যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষার অর্থের অভাব ছিল । ওখানের ছাত্রছাত্রীরা শহরের ছাত্রছাত্রীদের মতো একই ধরনের শিক্ষা উপকরণ ও অধিকার ভোগ করতে পারতো না । এই অবস্থার পরিবর্তন করার জন্য অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা গ্রামীণ শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন । লি ইউয়ান ছাং তাদের মধ্যে একজন । গত ছ' বছরে তিনি উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের প্রায় ২ শোটি স্কুল পরিদর্শন করেছেন এবং ৪২টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন । তিনি দরিদ্র ক্ষুদ্র গ্রামগুলোতে গ্রামীণ শিক্ষা উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ।

    উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশে ইয়াও ওয়ে চি নামে একটি গ্রাম আছে । ওখানের গ্রামবাসীরা সূর্যোদয়ের সময় পরিশ্রম শুরু এবং সূর্যাস্তের সময় পরিশ্রম শেষ এমন ঐতিহ্যিক জীবনযাপন করে থাকেন । তারা পরিশ্রমের বিরতির সময় বাচ্চাদের বই পড়ার শব্দও শুনতে পছন্দ করেন । লি ইউয়ান ছাংয়ের বয়স ৫৭ । এই ক্ষুদ্র গ্রামে তার জন্ম । ছোট বেলায় তিনিও বই পড়তে পছন্দ করতেন । জীবনে যত কষ্ট থাকুন হোক না কেন তিনি কখনো লেখাপড়া পরিত্যাগ করেন নি । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন । তিনি বলেছেন , তিনি একজন গ্রামীণ শিক্ষক । কৃষকদের বাচ্চরা অর্থাভাবে লেখাপড়া থেকে যে বঞ্চিত হয় , তাতে তিনি খুব মর্মাহত ।

    তিনি তার ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের নিজের বাচ্চা বলে মনে করেন । তাই তিনি নিজের ছাত্রছাত্রীদের খুব আদর করেন । ক্লাসের একজন ছাত্র পারিবারিক দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া থেকে বিরত হয়েছিল । সে কৃষিকাজ শুরু করল । তার লেখাপড়া আবার শুরু করার জন্য তিনি ঐ ছাত্রের বাবা মাকে ৫ থেকে ৬ বার পরামর্শ দিয়েছেন । অবশেষে তার বাবা মা রাজী হয়েছেন ।

    লি ইউয়ান ছাং ১৯৮৫ সাল থেকে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক স্কুলে চীনা ভাষা পড়াতে শুরু করলেন । তখন থেকে তিনি গ্রামীণ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ চীনা ভাষা পড়ানো পদ্ধতির সংস্কার চালান । তিনি বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলকে ছাত্রদের ক্লাসরুম বলে গণ্য করেন এবং সামাজিক অনুশীলনে আত্মনিয়োগ করার জন্য তাদের উত্সাহ দেন । ফলে কৃষি ক্ষেত এমন কি দৈনন্দিন জীবনে তার পড়ানো তথ্য ব্যবহার করা যায় । লি ইউয়ান ছাংয়ের সহকর্মী শিক্ষক ওয়াং ওয়ে তার এই প্রচেষ্টাকে খুব সমর্থন করেন । তিনি বলেছেন ,

    শিক্ষক লি'র পড়ানোর কর্মসূচী ও পদ্ধতি হলো জন্মস্থানের জন্য যোগ্য শ্রমজীবিদের প্রশিক্ষণ দেয়া । তিনি তাদের স্কুল ও ক্লাসরুম শুধু ছোট ক্লাসরুম ও স্কুল বলে মনে করেন । তিনি ছাত্রদের সামাজিক অনুশীলনের ওপর খুব গুরুত্ব দেন । তিনি সামাজিক জীবনধারণকে বড় স্কুল ও ক্লাসরুম বলে অভিহিত করেন । কৃষিকাজ চর্চা করার জন্য তিনি ছাত্রদের ধান ক্ষেতেও নিয়ে গিয়েছিলেন ।

    ক্লাসরুমের বাইরে যাওয়ার পর ছাত্ররা স্বচক্ষে প্রকৃতি ও সমাজ দেখেছে এবং বেশ কিছু বিষয়ে একাগ্রচিত্তে অবলোকন করেছেন । ফলে ছাত্রদের সামাজিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা বেড়ে গেছে । এর ভিত্তিতে প্রবন্ধ রচনা করার জন্য লি ইউয়ান ছাং তার ছাত্রদের অনুরোধ করেন । লি ইউয়ান ছাং বলেছেন , যদিও গ্রামাঞ্চলের লেখাপড়ার পরিবেশ অনুন্নত , কিন্তু তাতে ছাত্রদের অধ্যয়ন ক্ষমতার উন্নতি ক্ষুন্ন হতে পারে না । অনুশীলনে প্রমাণিত হয়েছে যে , এই ধরনের শিক্ষার পদ্ধতি সফল হয়েছে । লি ইউয়ান ছাং বলেছেন ,

    তার জন্মস্থান সুংহুয়াচিয়াং নদীর ধারে অবস্থিত । ভূগর্ভে প্রচুর পাথর ও বালি আছে । পাথর ও বালি বাড়িঘর নির্মাণের সামগ্রী । দাম বেশি । সুতরাং বিক্রি করার জন্য ওখান থেকে বেশি পাথর ও বালি বাইরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে । ফলে নদীর ধারে কৃষি ক্ষেত ধীরে ধীরে পতিত হয়ে গেছে । লি ইউয়ান ছাংয়ের একজন ছাত্র অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে ওখানে তদন্ত চালিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করেছে । প্রবন্ধে বলা হয়েছে , অর্থের আকর্ষণে অতিরিক্তভাবে পাথর ও বালি খনন করা হলে বিপুল কৃষি ক্ষেত নষ্ট হবে । ফলে বংশধরদের চাষাবাদের কৃষি ক্ষেত থাকবে না এবং তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভুগবে । প্রবন্ধে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক খনন কার্যকলাপ বন্ধ করার আহবান জানানো হয়েছে। এই প্রবন্ধ দেখে গ্রামের ক্যাডাররা এই ব্যাপারে খুব মনোযোগ দিয়েছেন । শ্রমিকরা যাতে পাথর ও বালির অতিরিক্ত খননের সাংঘাতিক পরিণাম লক্ষ্য করতে পারেন , সেজন্য গ্রামের কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একটি সভার আয়োজন করা হয় । সভায় ক্যাডার ও শ্রমিকরা ছাত্রটির প্রবন্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং পাথর ও বালি কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

    জানা গেছে , লি ইউয়ান ছাংয়ের ছাত্রদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন । কেউ কেউ স্থানীয় আদর্শ কৃষি কারিগর আর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত কর্মীতেও পরিণত হয়েছেন । তা ছাড়া তার ছাত্ররা যে প্রবন্ধ সংগ্রহ রচনা করেছেন , তাকে চিলিন প্রদেশে ছাত্রদের প্রবন্ধ রচনা সংক্রান্ত আদর্শ পাঠ্যপুস্তক বলে ব্যবহার করা হচ্ছে । লি ইউয়ান ছাংয়ের ছাত্র ইয়ান চাও তুং সংবাদদাতাকে বলেছেন , তিনি লি ইউয়ান ছাংয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন ।

    লি ইউয়ান ছাং তাকে শুধু জ্ঞানই দিয়েছেন তাই নয় , একটি আসলে এক ধরনের সামর্থ্য ও জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতি । এই সামর্থ্য তার জন্য আজীবনের ব্যবহারযোগ্য ।

    কিন্তু দুঃখের বিষয় যে , ছ' বছর আগে লি ইউয়ান ছাং গুরুতর রোগে আক্রন্ত হয়েছেন । তিনি বাধ্য হয়ে তার ছাত্রদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন । এখন স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি প্রাদেশিক চীনা ভাষা পড়ানো বিষয়ক অধ্যয়ন কাজকর্মে নিয়োজিত আছেন । তার প্রচেষ্টায় গ্রামীণ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য চিলিন প্রদেশের ন'টি অঞ্চলে ৪২টি আদর্শ গ্রামীণ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । ফলে বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ শিক্ষকদের পড়ানোর মান উন্নত হয়েছে ।