v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-30 19:54:21    
এ্যমেই-ল্য পাহাড়ের ভ্রমণ(ছবি)

cri

                 এ্যমেই পাহাড়ের মেঘনা সাগর

 এ্যমেই পাহাড় "চীনের প্রথম পাহাড়" বলে পরিচিত। কথা আছে, চতুর্থ শতাব্দীতে ভারতীয় সন্ন্যাসী পাও চাং এ্যমেই পাহাড় ভ্রমণের পর তাকে "চেনতানের প্রথম পাহাড়" বলে উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেন। "চেনতান" মানে সূর্য উদয়ের জায়গা। এটা হচ্ছে প্রাচীন ভারতের চীনকে দেয়া সম্মানিত নাম। এরপর থেকে এ্যমেই পাহাড় "চীনের প্রথম পাহাড়" নামে সারা বিশ্বে এর নাম ছড়িয়ে যায়।

 চীনের বিখ্যাত পাহাড়ের মধ্যে এ্যমেই পাহাড়ের সমুদ্রতল থেকে উচ্চতা ৩০০০ মিটারের বেশি। পাহাড়ের চূড়া আর উপত্যকার মধ্যের তাপমাত্রার ব্যবধান অনেক। এটা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের জন্য সুন্দরতম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ্যমেই পাহাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এ সংখ্যা গোটা ইউরোপের উদ্ভিদের মোট সংখ্যার প্রায় সমান। পাহাড়ের মধ্যে হাঁটাহাঁটির সময় দেখা যায় শুধু হালকা সবুজ ও গভীর সবুজ রঙের নানা রকম গাছের পাতা। আবহাওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন স্বাদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ্যমেই এই শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে মেয়ের ভ্রূ। এ শব্দের অর্থ থেকে এ্যমেই পাহাড়ের সৌন্দর্যকে কল্পনা করা যায়।

 এ্যমেই পাহাড়ের একটি বৈশিষ্ট্যময় দিক হচ্ছে তার গভীর বৌদ্ধ ধর্মীয় সংস্কৃতি। প্রথম শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্ম ভারত থেকে এ্যমেই পাহাড়ে সম্প্রসারিত হয় এবং এখানে চীনের প্রথম বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর এর আশেপাশের অন্যান্য মন্দিরগুলো প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে এ্যমেই পাহাড় যথাক্রমে চীনের বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম প্রধান পবিত্র স্থানে পরিণত হয়েছে।

 এ্যমেই পাহাড়ে সামানতাবান্দ্রা বুদ্ধ পূজা করে। সামানতাবান্দ্রা হচ্ছে অসীম পৃথিবীর বুদ্ধের বড় ছেলে। যে জায়গায় বুদ্ধ আছে, সে জায়গায় অবশ্যই সামানতাবান্দ্রা থাকবে। এখন এ্যমেই পাহাড়ে প্রায় ৩০০ জন সন্ন্যাসী আছেন। ৩০টি মন্দির আছে।

 এ্যমেই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সোনালী পর্বতশৃঙ্গ হচ্ছে এ্যমেই পাহাড়ের শ্রেষ্ঠ দৃশ্য। এখানে তিনটি উজ্জ্বল মন্দির ভবন ছাড়া ৪৮ মিটার উচু একটি দশ মুখ বিশিষ্ট সামানতাবান্দ্রা বুদ্ধের সোনালী মূর্তি আছে। পথনির্দেশক ইয়াং থাও বলেছেন, "এই সামানতাবান্দ্রা বুদ্ধের মাথায় সোনালী কিরীট পড়ানো। বুদ্ধ ছয়টি দাতধারী একটি সাদা রঙের হাতির ওপর বসে আছেন। তার মুখে আনন্দ, ক্রোধ, দুঃখ ও উত্ফুল্ল এই চার রকম আবেগ-এর প্রকাশ নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। এটা হচ্ছে চীনের একমাত্র দশ মুখ বিশিষ্ট সামানতাবান্দ্রা বুদ্ধ মূর্তি। আমরা যে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর মুখ দেখতে পাই। তিনি সকলের শুভ কামনা করেন এবং কল্যাণ বয়ে আনে।"

 মিঃ লি গেন ইউয়েন একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তিনি সামানতাবান্দ্রা বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এখানে এসেছেন। তিনি বলেছেন, "এ্যমেই পাহাড়ে এসে এত বড় একটি সামানতাবান্দ্রা বুদ্ধ মূর্তি দেখে আমি সত্যি সত্যি মনে করেছি, চীন একটি বিস্ময়কর দেশ। আমি এই বুদ্ধ মূর্তির দশটি মুখের সামনের মাটিতে দশবার কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করেছি। তাছাড়া কিছু দানও করেছি। দানের পরিমাণ বেশি না হলেও আমার ইচ্ছা এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। "

 সোনালী পর্বতশৃঙ্গে পূজার জায়গা ছাড়াও সূর্যোদয় ও মেঘনা সাগর দেখার শ্রেষ্ঠ স্থান। ভোর বেলায় সেখানে দাঁড়িয়ে হাজার মাইলব্যাপী ছবির মতো ছড়িয়ে থাকা সোনালী রঙের পাহাড়গুলোকে দেখা যায়।

 সৌভাগ্য হলে পর্যটকরা "বৌদ্ধ কিরণ" দেখার সুযোগ পান। বৌদ্ধ কিরণ হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ প্রাকৃতিক পদার্থের বিকিরণের দৃশ্য। দেখতে একটি রঙ ধনুর সূক্ষ্ম প্রভার মতো। মানুষ এই সূক্ষ্ম প্রভার ভিতরে থাকলে বৌদ্ধ কিরণের আকার ও রং মানুষের সঙ্গে মিশে যায়। দেখতে সত্যিই বিস্ময়কর। কিন্তু বৌদ্ধ কিরণের আবির্ভাব সূর্যালোক ও ভৌগলিক নানা উপাদান প্রয়োজন।

 বৌদ্ধ ধর্ম উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় এ্যমেই পাহাড়ের সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সেখানের বহু মন্দির ও বুদ্ধ মূর্তি এ্যমেই পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে আছে। এর জন্য ইউনেস্কো এ্যমেই পাহাড়কে বিশ্বের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

 এ্যমেই পাহাড় ভ্রমণের পর আপনি এর পশ্চিম দিকের ৩০ কিলোমিটার দূরের ল্য পাহাড়ে যেতে পারেন। সেখানে বিশ্বের বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি --- ল্য পাহাড় বুদ্ধ মূর্তি আছে। এই মূর্তির উচ্চতা ৭০ মিটারেরও বেশি। তার কাঁধের বিস্তার ২০ মিটারেরও বেশি। তার মাথা পাহাড়ের সমান, তিনি যেন নদীর উপর দাঁড়িয়ে আছেন। দুই হাত হাঁটুর উপরে রাখা। মুখ অতি শান্তভাব। কেউ কেউ বলেন, এই পাহাড় একটি বুদ্ধ মুর্তি, এই বুদ্ধ মুর্তি একটি পাহাড়। কিন্তু এমন বড় একটি বুদ্ধ মুর্তি কে নির্মাণ করেছেন, কেন নির্মাণ করেছেন? এর পিছনে একটি কাহিনী আছে। পথনির্দেশক উ লি পাং বলেছেন, "ল্য পাহাড়ের এ বড় বুদ্ধ মুর্তি থাং রাজবংশের সময় নির্মিত হয়েছে। তখন সিছুয়ানে ভ্রমণকারী হাইথোং নামে একজন সন্ন্যাসী ল্য পাহাড়ের আশেপাশের নদীতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটাছে বলে এই দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য তিনি একটি বড় আকারের বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি চাঁদা সংগ্রহের জন্য চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে যান। "

 এরপর তার দুই প্রজন্মের বংশধরের প্রচেষ্টায় ল্য পাহাড়ের বুদ্ধ মূর্তি অবশেষে সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হয়। এটি নির্মাণ করতে প্রায় ৯০ বছর লেগেছে।