কোরিয় উপদ্বীপের পরমানু সমস্যা সংক্রান্ত ছয় পক্ষীয় বৈঠক পুনরায় শুরুর জন্য সম্প্রতি চীন উত্তর কোরিয়া , যুক্তরাষ্ট্র , দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের প্রতিনিধি দলের নেতারা পেইচিংয়ে দ্বিপক্ষীয় বা বহু পক্ষীয় বৈঠক করেছেন । সি আর আইয়ের সংবাদদাতাদের দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন , গত মাসে চীন , উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিভিন্ন পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে পুনরায় ছ' পক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । পাঁচটি দেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠক ছ' পক্ষীয় বৈঠক পুনরায় অনুষ্ঠানের আরেক কুটনৈতিক প্রচেষ্টা ।
২৯ নভেম্বর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে , ২৮ ও ২৯ নভেম্বর চীন , উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা পেইচিংয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন । তিন দেশের প্রতিনিধিরা ত্রিপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ছ' পক্ষীয় বৈঠক নিয়ে খোলা মনে মত বিনিময় করেছেন এবং পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন । তিন পক্ষই ছ'পক্ষীয় বৈঠক অচিরেই আয়োজনের জন্য মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে একমত হয়েছে । চীনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষণাগারের প্রফেসর চিন লিন ফো মনে করেন , চীন, উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য আছে । তিনি বলেছেন , ছ' পক্ষীয় বৈঠকের বিরতির এক বছরে উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতির বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে । উত্তর কোরিয়া পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষেপনাস্ত্র উত্ক্ষেপন করেছে এবং পারমানবিক পরীক্ষা চালানোর কথা ঘোষণা করেছে । এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে । কাজেই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে । যদিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ ও পরমানু পরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে , তবু সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যদি পুনরায় এ বিষয় নিয়ে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা না চালায় , তাহলে এ সমস্যা নিষ্পত্তির নতুন আশা দেখা দেবে না । এই অর্থে ছয়পক্ষীয় বৈঠক পুনরায় অনুষ্ঠানের কুটনৈতিক প্রচেষ্টা , বিশেষ করে চীন , যুক্তরাস্ট্রও উত্তর কোরিয়ার বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণতাত্পর্য আছে ।
চীন , উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক ছাড়া , জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতারাও ২৬ ও ২৭ নভেম্বর পেইচিং সফর করেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। প্রফেসর চিন লিন পো মনে করেন , উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে কোরিয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যার দুটি প্রধান পক্ষ , তবে দীর্ঘকাল ধরে দুপক্ষ পরস্পরকে বিশ্বাস করে না এবং প্রধান প্রধান বিষয়ে দু পক্ষের অবস্থানের মতভেদ বেশি । এই কারণেই নতুন দফা কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় ছয়পক্ষীয় বৈঠক পুনরায় অনুষ্ঠানের তারিখ স্থির করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো মতৈক্যে পৌছতে পারে নি । তিনি বলেছেন , আলোচনা বৈঠকগুলোতে নতুন দফা ছ' পক্ষীয় বৈঠকের তারিখ স্থির করার ক্ষেত্রে মতৈক্যে পৌছতে না পারার প্রধান কারণ হলো নতুন দফা ছয়পক্ষীয় বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ও লক্ষ্য সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার অবস্থানের ব্যবধান এখনও বড় এবং দু দেশের বৈরীতা এখনও প্রকট ।
চিন লিন পো বলেছেন , গত অক্টোবর মাসে উত্তর কোরিয়া ভূগর্ভ পরমানু পরীক্ষা চালানোর পর পরমানু অস্ত্রের অধিকারী দেশ হিসেবে ছয়পক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তার বিরুদ্ধে আর্থিক শাস্তি তুলে নেয়ার দাবী জানিয়েছে । যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী দেশ হিসেবে ছপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে দিতে রাজি নয় । এটা উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রধান মতপার্থক্য ।
কিছু দিন আগে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চিয়ান ইয়ু বলেছেন , চীন আশা করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো গঠনমূলক ও নমনীয় মনোভাব পোষন করে ছপক্ষীয় বৈঠক পুনরায় অনুষ্ঠানের শর্ত সৃষ্টি করবে ।
|