v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-29 21:03:12    
চীনের শেনসি প্রদেশের তাইওয়ানবাসী বিষয়ক কার্যালয়ের পরিসেবার কাহিনী

cri
    গত কয়েক বছরে তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের স্বদেশবাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুই তীরের আদান-প্রদান বেড়েই চলেছে । এখন আরো বেশি তাইওয়ানবাসী চীনের মূল ভূখন্ডে ব্যবসা ও লেখাপড়া করতে এসেছেন । মাতৃভূমির মূলভূখন্ডের স্নেহ-মমতা অনুভব করার জন্যে চীনের বিভিন্ন স্থানের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়গুলো নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে

    শেন সি হচ্ছে পশ্চিম চীনে অবস্থিত ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এক প্রদেশ । সেখানকার ছিন রাজবংশের রাজকীয় কবরস্থান , সৈনিক ও ঘোড়ার মুর্তি , তা ইয়ান পেগুডা ও সিয়াও ইয়ান পেগুডার মত সুবিখ্যাত পুরাকীর্তি প্রতিবছর বহু তাইওয়ানবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । শেন সি প্রদেশের রাজধানী সি আনের ফা মেন মন্দরে বৌদ্ধ ধর্মের একটি পবিত্র জিনিস সংরক্ষিত রয়েছে । তা হলো ১৯৮৭ সালে ভূগর্ভ থেকে উদ্ধারকৃত শ্যাকিয়ামুনির আংগুলের হাড়ের ধ্বংসাবশেষ । তাইওয়ানের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের স্বপ্ন ছিল এ ধ্বংসাবশেষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা । মানুষের মন পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যে বহু বছর ধরে তাইওয়ানের বৌধধর্ম মহল সবসময় এ ধ্বংসাবশেষকে তাইওয়ানে নিয়ে যাওয়ার জন্যে উদ্যোগ নিয়েছে । তাইওয়ানবাসীদের আশা পুরণের জন্যে ২০০২ সালে মূলভূভাগ এ ধ্বংসাবশেষকে তাইওয়ানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন । তাইওয়ানের বিশিষ্ট ব্যক্তি লিয়াও চেং হাও আজ এ ঘটনা স্মরণ করে তার আবেগ দমিয়ে রাখতে পারেন নি । তিনি বলেছেন ,

    শ্যাকিয়ামুনির আংগুলের হাড়ের ধ্বংসাবশেষ তাইওয়ানে ৩৭ দিন ধরে রাখা হয়েছিল । তাইওয়ানের ৪০ লাখেরও বেশি লোক তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন । পথে ঘাটে অপেক্ষমান জনসাধারণের সংখ্যা তো এতে ধরা হয় নি । তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরে এমন ব্যাপক বেসরকারী তত্পরতা এই প্রথম ।

    শ্যাকিয়ামুনির আংগুলের হাড়ের ধ্বংসাবশেষকে তাইওয়ানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মিস্টার লিয়াও সংশ্লিষ্ট ছিলেন । তখনকার দৃশ্য এখনো তার মনে জাগরূক রয়েছে । এ ধ্বংসাবশেষ খুবই মূল্যবান বলে ভূগর্ভ থেকে উদ্ধার থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত কেবল ১৯৯৪ সালে থাইল্যান্ডের বৌদ্ধধর্ম মহলের অনুরোধে একবার থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । এছাড়া এ ধ্বংসাবশেষকে শে সি প্রদেশের বাইরে কোনোদিন নিয়ে যাওয়া হয় নি । সেসময় তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের মধ্যে ভাড়াটে বিমান চলাচলের ব্যবস্থা চালু হয় নি । এ ধ্বংসাবশেষ বহনকারী বিমানটি সিন আন থেকে রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর হংকংয়ে থামতে হতো । নিয়ম অনুসারে বিমান বদল করতে হতো । অথচ এ ধ্বংসাবশেসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে দুই তীরের সংশ্লিষ্ট মহলের পরামর্শের পর বিমান বদল না করার সিদ্ধান্ত নিলো । কেবল ফ্লাইট নম্বর পরিবর্তিত করে বিমানটি সরাসরি হংকং থেকে তাইওয়ানে গেলো । এ ধ্বংশাবশেষ তাইওয়ানে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সমাদর পেয়েছে ।

    এ ধ্বংসাবশেষকে তাইওয়ানে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় শেন সি প্রদেশের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় উদ্যোগের সংগে পুরাকীর্তি ও ধর্মীয় বিভাগের সংগে যোগাযোগ করে যথেষ্ট সহায়তা করেছে । তাইওয়ানের বিশিষ্ট ব্যক্তি লিয়াও চেং হাও বলেছেন , এ রকম আদান-প্রদানের তত্পরতা তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের স্বদেশবাসীদের মনকে কাছাকাছি এনে দিয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    এ রকম তত্পরতা স্বাভাবিকভাবে আমাদের দুই তীরের স্বদেশবাসীদের মনকে সংযুক্ত করে রেখেছে । সি আনের ফা মেন মন্দিরের ভূগর্ভস্থ ভবনে সংরক্ষিত পুরাকীর্তিগুলোকে নিয়ে গিয়ে তাইওয়ানে প্রদর্শনের জন্যে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি । সফল হলে তাইওয়ানবাসীরাও আমাদের পুর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া সুন্দর ও সমৃদ্ধ পুরাকীর্তি উপভোগ করতে পারবো । আমার মনে হয় , এ রকম তত্পরতা বেশি করে আয়োজন করা উচিত ।

    প্রকৃতপক্ষে দৈনন্দিন জীবনেও মূলভাভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগ মাতৃভূমির স্নেহ-মমতা অনুভবের জন্যে নানা উপায়ে তাইওয়ানবাসীদের সহায়তা করছে ।

    ১৯৯৭ সালের পর থেকে আরো বেশি তাইওয়ানী ব্যবসায়ী শেন সি প্রদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করতে এসেছেন । এ সময়ের মধ্যে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের স্বার্থজড়িত কলহ ও মামলা দেখা দেয় । তাইওয়ানবাসীদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে শেন সি প্রাদেশিক সরকার কিছু স্থানীয় আইন ও বিধি জারি করেছে ।

    তাইওয়ানবাসীদের পরিসেবার জন্যে শেন সি তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় তাইওয়ানবাসীদের অভিযোগ সমন্বয় বিভাগ স্থাপন করেছে । এই বিভাগের পরিচালিকা চাং পিং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , ২০০০ সালে স্থাপিত হওয়ার পর এ বিভাগ ৮০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি করেছে । এ বিভাগ মামলা গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংগে যোগাযোগ করে তদন্ত চালায় । আইন-বিরোধী আচরণ থাকলে তা শুধরে নেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে প্রস্তাব উত্থাপন করবে । আইনগত প্রণালীতে চলতে থাকলে এ বিভাগ আদালতের কাছেও নিজের প্রস্তাব উত্থাপন করবে ।

    শেন সি প্রদেশের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয়ের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের আগাম আইনগত পরিসেবা প্রদান করা । এ কার্যালয়ের অভিযোগ সমন্বয় বিভাগের পরিচালিকা চাং পিং বলেছেন , অনেক তাইওয়ানী ব্যবসায়ী মূলভূভাগের আইন ও বিধি সম্পর্কে বেশি জানেন না । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে তার বিভাগ তাদের জন্যে প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে । তিনি বলেছেন ,

    ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর আমরা তিনটি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করি । কোর্সে প্রধানত মূল ভূভাগের শুল্ক বিভাগ , শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগ , কর বিভাগ , স্বাস্থ্য বিভাগ , শ্রমের নিশ্চয়তা বিধান বিভাগ এবং পণ্য যাচাই বিভাগের আইন ও বিধি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হয় ।

    তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরের আদান-প্রদান সম্প্রসারণের সংগে সংগে বিশেষ করে ২০০৫ সালে চীনের কোওমিনটাং পার্টির চেয়ারম্যান লিয়ান চান ও ছিন মিন পার্টির চেয়ারম্যান সুং ছু ইয়ুর শেন সি সফরের পর তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের প্রতি শেন সি প্রদেশের আকর্ষণ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । তাদের মধ্যে শেন সি প্রদেশে পুঁজি বিনিয়োগ ও ভ্রমণের হিড়িক পড়েছে । কেবল গত বছর ২৯টি তাইওয়ানী শিল্পপ্রতিষ্ঠান শেন সে প্রদেশে কোম্পানি খুলেছে এবং ১ লাখ পর্যটক এখানে বেড়াতে এসেছেন ।