চীনে কিরগিজ জাতি অন্যতম কম লোকসংখ্যা জাতি । তারা প্রধাণতঃ উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কেজিলাসু কিরগিজ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে বাস করেন । কিরগিজ ভাষায় কিরগিজ কথাটা মানে পাহাড়ের পশুপালক । ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে পশুপালনকারী কিরগিজ জাতির নিরক্ষরতার হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ছিল । অর্ধ শতাব্দির বেশি সময় ধরে বিকশিত হওয়ার পর এখন কিরগিজ জাতি আধুনিক জাতির সারিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । কিরগিজ জাতির বিকাশের ব্যাপারে শিক্ষা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে ।
সংবাদদাতা সিনচিয়াংয়ের কেজিলাসু কিরগিজ স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের আতুশি শহরের একটি সাধারণ মানুষের পরিবারে সাক্ষাত্কার নিতে গিয়েছিলেন । কিরগিজ জাতির অধিবাসীরা শিক্ষার ওপর যে কেমন গুরুত্ব দেন , তিনি তা লক্ষ্য করেছেন ।
গৃহকর্তা আবদুল কাদের ও তার স্ত্রীর চার ছেলে ও মেয়ে আছে । জ্যেষ্ঠ কন্যা আলিমা সদ্য সিংচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হয়েছেন । মেজো কন্যা মধ্য চীনের উ হান শহরের হুয়া চুং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন । সেজো কন্যা গুলিমিরে সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়ছেন । তাদের কনিষ্ঠ ছেলে এরিসবেক সিনচিয়াংয়ের সিহোচি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকল্ কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ছেন । কিরগিজ জাতির একটি সাধারণ পরিবারে কিভাবে চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী আছেন ? এই প্রসঙ্গে গৃহকর্তা আবদু কাদের বলেছেন ,
কিরগিজ জাতি একটি পশুপালক জাতি । আগে সাংঘাতিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অর্থাভাবের দরুণ সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করতো না । তার দাদা কখনো স্কুলে পড়েন নি । কিন্তু তার বাবাকে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়ার জন্য দাদা নানা রকমের বাধা-বিঘ্ন মোকাবেলা করেছেন । তখন কিরগিজ বিভাগে রাস্তা ছিল না । কাশি শহরের নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে যাওয়ার জন্য বাবা ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার হেঁটে যেতেন । সুতরাং ছোট বেলা থেকে তিনি লেখাপড়ার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে আসছেন ।
সেজন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স পাস করার জন্য বাবাও আবদুকে অনেক সাহায্য দিয়েছেন । ফলে আবদু একজন শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন ।
গৃহকর্ত্রীর পরিবারও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয় । আগে কিরগিজ জাতির ছেলেদের মধ্যেও বেশি লোক মাধ্যমিক স্কুলে পড়তো না । কিন্তু তার বাবা মা ঐতিহ্যিক ধারণা ও চাপ উপেক্ষা করে তাকে একজন কিন্ডারগার্টনের শিক্ষিকা হওয়ানোর চেষ্টা করেছেন ।
গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর অভিজ্ঞতায় তারা পুরোপুরি শিক্ষার গুরুত্ব ও তাত্পর্য অনুভব করেছেন । ফলে তারা নিজেদের সন্তান সন্ততিদের লেখাপড়ার সুযোগের ওপরও গভীর গুরুত্ব দেন ।
আবদু কাদের মনে করেন যে , জাতি ও দেশের জন্য শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষায় কাজকর্মে উন্নত না হলে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া সম্ভব হবে না । এখন কিরগিজ জাতির লোকদের জীবনযাত্রার মান দিন দিন উন্নত হচ্ছে । সুতরাং তিনি আশা করেন যে , তার বাচ্চাদের লেখাপড়া করতে হবে , উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং জ্ঞান অর্জন করে কিরগিজ জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সেবা করতে হবে ।
বাড়িতে চারজন ছেলে মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন । এটা একটা আনন্দের বিষয় । কিন্তু একই সঙ্গে চারজন ছেলেমেয়ের শিক্ষার ফি বহন করাও একটি বিরাট চাপ । শিক্ষক হিসেবে আবদু ও তার স্ত্রীর আয় বেশি নেই । এই বিরাট বোঝা মোকাবিলা করার জন্য আবদুল ও তার স্ত্রী ঘরোয়া তহবিল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তিনি বলেছেন , ১৯৮২ সালে তার বড় মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন । তখন তার মাসিক বেতন মাত্র ৫৮ ইউয়ান ছিল । মেয়ের ভবিষ্যতের লেখাপড়ার জন্য তিনি ও তার স্ত্রী ব্যাংকে মাসে তিরিশ ইউয়ান সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত নিন । জীবনযাপনের কত অসুবিধা থাকুক হোক না কেন তিনি বাধ্যতামূলকভাবে এই অংকের টাকাপয়সার সঞ্চয় করতেন । এখন তার বেতন ২ হাজার ৪ শো ইউয়ানেরও বেশি । ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য তিনি ব্যাংকে মাসে দেড় শো ইউয়ানের সঞ্চয় করে থাকেন ।
গৃহকর্তা সংবাদদাতার কাছে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সংক্রান্ত তিনি ও তার স্ত্রীর কার্যক্রম সম্পর্কে বলেছেন , লেখাপড়ার করতে চারজন ছেলেমেয়েকে অর্থ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে । যখন তাদের অর্থের গুরুতর অভাব হয় , তখন তারা ব্যাংক থেকে ঋণও করেছেন । তারা সিদ্ধান্ত নেন যে , তাদের যত অসুবিধা থাকুক হোক না কেন , লেখাপড়া করতে ছেলেমেয়েদের সমর্থন করবেন । কিরগিজ জাতির লোকরা সূচীকর্মসহ মেয়েদের গৃহকর্ম শেখা ও চর্চার ওপরও খুব গুরুত্ব দেন । কিন্তু আবদু ও তার স্ত্রী মেয়েদের গৃহকর্ম করতে দেন না । তারা তাদের লেখাপড়ার ওপর খুব মনোযোগ দেন ।
আবদুর ছেলেমেয়েরা ব্যাপকভাবে ঘরোয়া ঐতিহ্য উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করেছে । বড় মেয়ে আলিমা বিয়ে করেছেন । তাদের একটি ছেলে আছে । তিনি ও স্বামী তার বাবা মায়ের মতো ছেলের লেখাপড়ার জন্য ব্যাংকে মাসে ৩ শো ইউয়ান জমা রেখেন ।
আবদু ও তার স্ত্রী ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক কষ্টে করেছেন । ছেলেমেয়েরাও একাগ্রচিত্তে পড়েছেন এবং সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন । তাদের শেখার বিষয় খুব আকর্ষণীয় । তারা যে সব বিষয় শিখছেন , সেগুলো কিরগিজ জাতিসহ সমগ্র দেশের উন্নয়নের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ । তিনি বলেছেন , জ্যেষ্ঠ মেয়ে বিশ্ব সম্পর্ক আরো বেশি জানার জন্য ইংরেজী শিখছেন । আবদু ও তার স্ত্রী শিক্ষক বলে তাদের মেজো মেয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। সেজো মেয়ে হাইটেকের উন্নয়নের চাহিদার জন্য তথ্য প্রকল্প বিষয় শিখছেন । এবং ছেলে অন্যদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিকিত্সা শিখছেন । তাদের সবার লেখাপড়ার ভবিষ্যত এই যুগের বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ।
আবদু ও তার পরিবারের অভিজ্ঞতায় কিরগিজ জাতির বিকাশ ফুটে উঠেছে । শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়ায় কিরগিজ জাতি সমগ্র চীনা জাতির আধুনিকায়নের পদক্ষেপের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে ।
|