চীনের দরিদ্র অঞ্চলের অধিবাসীদের রোগে আক্রান্ত হওয়া সবচেয়ে বড় সমস্যা। রোগে আক্রান্ত হলে বেশি টাকা নেই বলে অনেকে চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারে না। কিছু কিছু লোকের অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে , কিন্তু স্থানীয় চিকিত্সা ব্যবস্থা পূর্ণাংগ হয়নি। ফলে তারা যথাযথ চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারে না।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ সচেতন হয়েছে। এখন চিকিত্সা ক্ষেত্রে পুঁজিবিনিয়োগ জোরদার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বেশি অর্থ চিকিত্সা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। চীন দরিদ্র অঞ্চলের চিকিত্সা ব্যবস্থা উন্নীত করার জন্যে প্রচেষ্টা চালাতে ইচ্ছুক ।

   শিচিয়াজুয়াং হচ্ছে চীনের উত্তরাঞ্চলের একটি শহর। তার লোকসংখ্যা প্রায় ৯০ লাখেরও বেশি। সেখানের অধিবাসীদের চিকিত্সা নিশ্চিত করতে শিচিয়াজুয়াং শহর অনেক সার্বজনীন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে।

    বর্তমান শিচিয়াজুয়াং শহরের স্বাস্থ্য পরিসেবা সংস্থার মোট ১৯৭টি কেন্দ্র আছে। স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০ । স্থানীয় জনগণ এই হাসপাতাল যেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। শিচিয়াজুয়াং শহরের কেন্দ্রীয় হাসপাতালের ভাইসপ্রধান জেং ফানওয়েন বলেছেন " আমাদের হাসপাতালে সাধারণ রোগী ও আর্থিকভাবে আমথ রোগীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই একই পরিসেবা গ্রহণ করতে পারে।"

    চীন সরকার গ্রামীণ অঞ্চলের চিকিত্সা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্যে এই নতুন ধরণের গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু করেছে । এটি হচ্ছে প্রতিবছর প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী কৃষক ২০ ইউয়ান এবং স্থানীয় সরকার আরো ২০ ইউয়ান জমা দেয়। গ্রামীণ অধিবাসীরা শুধু নিজের ১০ ইউয়ান দিয়ে সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিল গড়ে তুলতে পারে। তারা রোগে আক্রান্ত হলে সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিল থেকে তাদের চিকিত্সা ব্যয় বহন করা হয়। এই ব্যবস্থা তাদের অসুস্থতো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য হয়েছে। এ পর্যন্ত, শিচিয়াজুয়াংয়ের প্রায় ৭৮.৫ শতাংশ গ্রামীণ অধিবাসী এই সহযোগিতামূলক চিকিত্সায় অংশ নিয়েছে।

    একজন অধিবাসী হু কুইছিও রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার মোট ৭ হাজার ইউয়ান খরচ হয়েছে। সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিল তার ৫ হাজার ইউয়ানের বেশি ব্যয় বহন করেছে । তার অনেক আনন্দ লাগে। তার পরিবারের সবাই এই নতুন ধরণের গ্রামীণ সহযোগিতামূলক চিকিত্সায় অংশ নেয়। সবাই মনে করে যে এই চিকিত্সা ব্যবস্থা খুবই ভাল এবং স্বাগত জানিয়েছে। " আমি শুধু ১ হাজারেরও বেশি ইউয়ান খরচ দিয়েছি, আসলে আমার মোট ৭ হাজার ইউয়ান খরচ হয়েছে । সহযোগিতামূলক চিকিত্সা তহবিল আমার জন্য ৫ হাজার ইউয়ানের বেশি ব্যয় বহন করেছে । আমি দিলে নিশ্চয়ই আমার অনেক অসুবিধা হবে ।"

    নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা সুফল অর্জন করায় চীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে , এবছর থেকে সহযোগিতা চিকিত্সা তহবিলে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের জন্য সরকারী ভর্তুকী ও অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য পরীক্ষামূলক আওতা ধাপে ধাপে সম্প্রসারিত হবে । আগামী ৫ বছরে এই ব্যবস্থা মোটামুটিভাবে সমগ্র চীনের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে । শিচিয়াজুয়াং শ্রমিক ও সামাজিক সুনিশ্চিত ব্যুরোর প্রধান সিয়াও শিজে বলেছেন: " ২০০৮ সালে আমাদের গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা সার্বিকভাবে চালু হলে , আমাদের শিচিয়াজুয়াংয়ের অধিবাসীরা চিকিত্সা সুনিশ্চিত সিস্টেম সবাই গ্রহণ করতে পারবে । এখন এ কাজ চলছে "

    কিছু দিন আগে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় পরবর্তী ৫ বছর মেয়াদী উন্নয়নের একটি কার্যক্রম পেশ করেছে । কার্যক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে যে , পরবর্তী ৫ বছরে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য রক্ষার বুনিয়াদী ব্যবস্থার নির্মাণ খাতে চীন সরকার ২০ বিলিয়ন ইউয়ান রেন মিন পি বরাদ্দ করবে । এই কার্যক্রম অনুযায়ী , জেলা , থানা ও গ্রাম এই তিন পর্যায়ের গ্রামীণ চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য রক্ষার পরিসেবা আর ইন্টারনেট বিশেষ করে থানার ক্লিনিক আর জেলার হাসপাতালের নির্মাণকাজ সুসংবদ্ধ আর পূর্ণাংগ করে তোলা হবে । এর সংগে সংগে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের চিকিত্সা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ জোরদার করা হবে , থানা ও গ্রাম এই দুই পর্যায়ের চিকিত্সকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কোর্স প্রণয়ন করা হবে , গ্রামাঞ্চলের চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক কর্মীদের জ্ঞানের মান ও পরিসেবার সামর্থ্য উন্নত করা হবে এবং গ্রামাঞ্চলে চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের সামর্থ্য পূর্ণাংগ করে তোলার জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েক হাজার জন দক্ষ চিকিত্সা কর্মী পাঠানো হবে ।