v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-24 19:33:09    
আগামীকাল আমি তোমাকে বিয়ে করব

cri
মাত্র এক দিন পর উত্তর আনহুই প্রদেশের মেয়ে লিউ ছাংয়ের বিয়ে হবে । কিন্তু লিউ ছাং কিছুতেই খুশি নন । কারণ তার বাবা মা এখনো তার ছেলে বন্ধু চাং রুসিংকে গ্রহণ করেননি । কেন এবং এর পরিণাম কি ?

লিউ ছিয়াংয়ের মা কেঁদে কেঁদে তাকে বলেন , চাং রুসিংয়ের বাড়ির অবস্থা এত খারাপ যে, ঘর , কৃষি জমি এমনকি কিছুই নেই তাদের । তার সঙ্গে বিয়ের পর তুমি কোথায় থাকবে ? রাস্তায় থাকবে ? এ সময় কোম্পানি দেউলিয়াপনা হয়েছে বলে চাং রুসিংর কোনো উপার্জনও নেই । লিউ ছাং মাকে বলেন, ধনী হতে চাইলে নিজের পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করতে হয় । এখন গরিব ,এর অর্থ এই দাঁড়াবে না যে , সে চিরকালই গরিব থাকবে ।

চাং রুসিং গরিব, এটা শুধু ব্যাপারটির এক দিক ।যে বিষয়ে লিউ ছাংয়ের বাবামা অসন্তুষ্ট, সেটি হল চাং রুসিং যে কোনো সময় লিউ ছাংকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । তারা কোনো মতেই তা সহ্য করতে পারেন না । বিশ্বে এমন কোনো বাবা মা নেই , যে বাবামা নিজের আদরের মেয়েকে এক মুমুর্ষূ রোগীর সঙ্গে বিয়ে দিতে চান । চাং রুসিং আনহুই প্রদেশের প্রথম রোগী, তিনি লিভার ট্র্যানস্প্লান্ট করেছেন । শল্যচিকিত্সার পর নানা কারণে তার শরিরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ । তার পরে লিভার ট্র্যানস্প্লান্ট করা কয়েক জন রোগী পরপর মারা গেছেন । তাই লিউ ছাং তাকে তাড়াতাড়ি এক বিয়ের অনুষ্ঠানে নিতে চান । তার ভয় যে , মৃত্যু বিয়ের আগে আসবে । তিনি সংবাদদাতাকে জানান , তার অবস্থা এতই খারপ , আমরা দুজন যে পরস্পরের উপর নির্ভর করছি তার মধ্যে শুধু প্রেম আছে তা নয় , আছে পরিবারপরিজনের চেয়েও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ।

লিউ ছাং বারবার চিন্তাভাবনা করেছেন এবং স্থির করেছেন যে , তিনি পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিয়ে করে নিজের আট বছরের প্রেমিক চাং রুসিংকে একটি বাড়ি দেবেন । মা রাগ করে বলেন , বিয়ে করলে তুমি আর আমার মেয়ে নও । পরে তুমি এই বাড়িতে আর ফিরে আসবে না । লিউ ছিং বলেন, ঠিক আছে ,আমি আর ফিরে আসব না । মা কেঁদে কেঁদে বলেন , তোমাকে মানুষ করে তুলেছি . এখনো তোমার কিছু প্রতিদান পাইনি । কথাটা বলে মা লিউ ছাংয়ের গালে এক চড় মেরেছেন । তার পর মা লিউ ছাংয়ের কাপড়চোপড় বাইরে ফেলে দেন ,লিউ ছাংকে তাড়িয়ে দেন এবং বলেন, যাও , তুমি যাও , কোনো দিনই ফিরে আসবে না তুমি ।

প্রথমে মা লিউ ছাংকে বাইরে যেতে বাধা দেন আর লিউছাং বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন । যখন মা সত্যি তাকে তাড়িয়ে দেন তখন লিউ ছাংয়ের দু'পা এত ভারি যে , তিনি এক ধাপও এগোতে পারেন না । দুঃখ ভাড়াক্রান্ত বাবা মাকে দেখে লিউ ছাং অস্থির ও অনুতাপগ্রস্ত হলেন । তিনি মনে মনে ভাবলেন , বাবামার অনুমোদন ছাড়া তার বিয়ের অনুষ্ঠান হবে না । বাবা মাকে আমি আর রাগাব না । কিন্তু কিভাবে প্রেমিক চাং রুসিংকে এ কথা জানাব ?

চাং রুসিংয়ের সঙ্গে তার প্রথমবারের সাক্ষাতের কথা লিউ ছাংয়ের মনে পড়ে । যখন সুগঠন চাং রুসিংয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয় তখন তার মতে চাং রুসিং বড় ভাইর মতো । ছোটো বেলা থেকেই তিনি এক বড় ভাই চেয়েছেন । তাই পরিচিত হওয়ার তিন মাস পর লিউ ছাং ও চাং রুসিং দুজনের প্রেমিক-প্রেমিকা সম্পর্ক স্থাপন করেন । এর পর যদি এক দিন দেখা না হয় তাহলে লিউ ছাংয়ের মতে যেন চাং রুসিংয়ের সঙ্গে তিন বছর দেখা হয়নি । তখন তিনি ভাবতে পারেন, সে এখন কোথায় ? সে কি করছে ? আর চাং রুসিং লিউ ছাংকেও খুব ভালবাসে । তিনি প্রত্যেক দিন লিউ ছাংকে সকালের খাবার কিনে দেন । চাং রুসিংয়ের ভালবাসায় লিউ ছাং খুব সুখি মনে করেন ।

সময় তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে । চাং রুসিং ভাইবোনদের সাহায্যে লিউ ছাংয়ের জন্যে এক উষ্ণ ও আরামদায়ক বাড়ি তৈরী করছে । ঠিক এই সময় চাং রুসিংয়ের স্বাস্থ্যের সমস্যা হয়েছে । পরীক্ষায় জানা গেছে , তিনি শেষ পর্যায়ের লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন । চাং রুসিং ভাবলেন , আমার বয়স ত্রিশ বছর হয়নি আর জীবন শুরু হয়নি । পরে কি হবে ? অনেক চিন্তাভাবনা করার পর চাং রুসিং লিউ ছাংকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি লিউ ছাংকে বলেছেন , আমার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ , অবশেষে মরে যাব । আমার কাছে থাকলে তুমি শুধু কষ্ট ও অসুবিধা হবে ।

এক রাতে লিউ ছাং অনেক চিন্তাভাবনা করেছেন । চুপেচুপে তাকে ছেড়ে চলে যাই না সাহসের সঙ্গে তার কাছে থেকে যাই । কিন্তু রুসিংয়ের অবস্থা এত খারাপ । আমি গেলে রুসিংয়ের কি হবে ? কে তাকে দেখাশোনা করবে ? অবশেষে লিউ ছাং থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

লিউ ছাংয়ের সিদ্ধান্ত শুনে মা খুব রাগ করেন । কিন্তু লিউ ছাং বারবার ব্যাখ্যা করে অবশেষে মাকে রাজী করালেন ।

চাং রুসিং রক্ত বমি করতে শুরু করেন এবং মাঝেমাঝে তার শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হয় । এই অবস্থায় থাকলেও তিনি সর্বদাই লিউ ছাংকে সান্ত্বনা দেন । লিউ ছাং ভাবেন , আমি তার ব্যথার কিছু ভাগ বহন করতে পারলে কত ভাল হত ।

হয়ত লিউ ছাং ও চাং রুসিংয়ের প্রেমের কাহিনী মুগ্ধকর । মেডিক্যালবিজ্ঞানে নতুন সাফল্য অর্জিত হয়েছে । চাং রুসিং আনহুই প্রদেশের প্রথম রোগী, যিনি লিভার ট্র্যানস্প্লান্ট করেছেন । কিন্তু শল্যচিকিত্সার পর চাং রুসিংয়ের শারিরীক অবস্থা তেমন ভাল নয় , তার কয়েক রোগী বন্ধু পরপর মারা গেছেন । এ কারণে লিউ ছাং খুব অস্থির । তাই তিনি চাং রুসিংকে এক বিয়ের অনুষ্ঠান দিতে চান । তাদের ৮ বছরের প্রেমকে ধরে রাখার জন্য একটি উষ্ণ বাড়ি দিতে চান । নইলে তিনি চিরকালই অস্থির অবস্থায় থাকবেন । লিউ ছাং তার এই আশা পূরণ করতে মাকে অনুরোধ করেছেন । লিউ ছাং মাকে বলেছেন , আমাদের ৮ বছরের সম্পর্ক আছে। এখন সে গুরুতর রোগে আক্রান্ত। ছোটো বেলায় সে মা হারিয়েছে । আপনি তাকে দয়া করেন না ? মেয়ের কথা শুনে লিউ ছাংয়ের মা মেয়ের মন বুঝেছেন এবং তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনে রাজী হয়েছেন ।

বিয়ের দিনে গ্রামের জানা অজানা লোকেরা এসে তাদের বিয়ের শুভ কামনা করেন । বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজন সুখী জীবনযাপন শুরু করেন । তাদের কাহিনী চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক অজানা লোক চাঁদা সংগ্রহ করে তাদের সুখ-শান্তি কামনা করেন । এতে লিউ ছাং ও চাং রুসিং খুব মুগ্ধ হন । এক বছর পর স্বামী-স্ত্রী দুজন এক সুন্দর ছেলে পান । এখানে আমরাও তাদের সুখী জীবনযাপন কামনা করি ।