মানবাধিকার ত্বরান্বিত করুন এবং সুষম বিশ্ব গড়ে তুলুন শীর্ষক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সেমিনার তিন দিন চলার পর ২৪ নভেম্বর পেইচিংয়ে শেষ হয়েছে । সেমিনারে প্রায় ২০টি দেশের ও অঞ্চলের সত্তর জনেরও বেশি মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ মানবাধিকার ত্বরান্বিত করা এবং সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার সম্পর্কিত বিষয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন । তারা মনে করেন যে , মানবাধিকারের বিকাশ ত্বরান্বিত করা অসামঞ্জস্য নিরসন করা এবং সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি কার্যকর পথ ।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের ৬০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি এবং যৌথ সমৃদ্ধিশালী সুষম বিশ্ব গড়ে তুলুন শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন । ফলে সুষম বিশ্ব গড়ে তোলা বিষয়ক ধারণা দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞগণের একটি আকর্ষণীয় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এবারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা মানবাধিকার ত্বরান্বিত করা ও সুষম বিশ্ব গড়ে তোলা সম্পর্কের ওপর গভীরভাবে আলোচনা করেছেন ।
থিয়ান চিন শহরের নান খাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ছাং চিয়ান চীনের বিশেষজ্ঞগণের পক্ষ থেকে তার মন্তব্য প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেছেন , মানবাধিকারের নিশ্চয়তা সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু ও ভিত্তি । সুষম বিশ্ব মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য ও পূর্বশর্ত । তিনি বলেছেন , সমরসজ্জা প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার রাজনীতি , একতরফাবাদী , সন্ত্রাস , নতুন নাত্সী , দক্ষিণ-উত্তর দরিদ্র ও ধনীর ব্যবধান এবং পরিবেশ নষ্ট করা সুষম বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্তরায় । সুষম বিশ্ব গড়ে তুলতে চাইলে সংলাপ ও সহযোগিতা বেশী প্রয়োজন , বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষের প্রয়োজন নেই ।
সুষম বিশ্ব গড়ে তুলতে হলে প্রধানতঃ বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব ও সমতা নীতির প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে । রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরস্পরকে মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে , অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরস্পরকে উত্সাহিত করতে হবে , সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরস্পরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে , নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা চালাতে হবে এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে ।
চীনের মানবাধিকার গবেষণাগারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি লি ইউন লুং সেমিনারে বলেছেন , সুষম বিশ্ব গড়ে তুলতে হলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সংলাপ ও সহযোগিতা চালাতে হবে । মানবাধিকার সংলাপও সুষম বিশ্ব স্থাপনের জন্য অনুকূল হবে ।
বেশ কয়েকজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ তার এই মন্তব্যের স্বীকৃতি দিয়েছেন । আর্জেন্টিনার রবার্টো সাবা বলেছেন ,
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবাধিকার ক্ষেত্রে কিছু ধারণা ও ব্যবস্থার পরিবর্তন করা দরকার । মানবাধিকার নিয়ে সংলাপের ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে । মানবাধিকার যে লংঘিত হচ্ছে , তার মূলে রয়েছে তথ্য বিনিময় ও পারস্পরিক সমঝোতার অভাব । সংলাপ এই সমস্যা সমাধানের একটি মূল পদ্ধতি।
ভিয়েতনামের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ থাং ইউন চি এই মত প্রকাশ করেছেন যে , মানবাধিকারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করার উদ্দেশ্য হল প্রত্যেকের মর্যাদা নিশ্চিত করা । মানবাধিকার বিষয়ক শিক্ষা ও সংলাপ জোরদার করার মাধ্যমে মানবাধিকার সম্পর্কিত ধারণা স্থাপন করা ।
চীনের মানবাধিকার গবেষণাগারের ভাইস চেয়ারম্যান চিন চেই সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেছেন ,
প্রতিনিধিরা মনে করেন যে , সুষম বিশ্বের ক্ষেত্রে গভীর বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত । সুষম বিশ্ব মানব জাতির সর্বশ্রষ্ঠ চাহিদার পরিচায়ক । পৃথিবীতে মানবাধিকারের পুরোপুরি মর্যাদা ও নিশ্চয়তা না পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৈচিত্র্যময়তায় অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয় । সুতরাং মানবাধিকারের বিকাশ ত্বরান্বিত করার লক্ষে অসামঞ্জস্যতা দূর করা এবং সুষম বিশ্ব গড়ে তোলা হচ্ছে সত্যিকারের কার্যকর পথ ।
|