v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-24 15:16:55    
ডঃ ইউনুসের সাক্ষাত্কার-- দুই(ছবি)

cri

 প্রশ্নঃ আচ্ছা আপনারা এই যে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকেন। সেই ঋণ গ্রহীতাদের কোন প্রকার ইন্টারেষ্ট বা সুদ দিতে হয় কিনা?

 উঃ এতে চারটা সুদের ব্যাপার আছে। একটা হলো আয় উপার্জনকারী যে ঋণ নেয় সেটার সুদ হলো ২০ শতাংশ। এবং গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য হলো ৮ শতাংশ। ছাত্রদেরও আমরা ঋণ দেই শিক্ষা ঋণ দিই। যারা উচ্চ শিক্ষায় যাচ্ছে, গ্রামীন ব্যাংকের বহু ছেলে মেয়ে এখন কেউ ডাক্তার হচ্ছে, কেউ ইন্জিনিয়ার হচ্ছে, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তাদেরকে আমার সমস্ত লেখা পড়ার খরচ চালানোর আমাদের তরফ থেকে ঋণ দিয়ে থাকি। যত দিন পড়াশুনা চালায় ততদিন তাদের কোন সুদ দিতে হয় না। পড়াশুনা শেষ হয়ে গেলে ৫ শতাংশ করে দিতে হয়। আর একটা সুদের হার আছে সেটা হলো ভিক্ষুকদের জন্যে। ভিক্ষুকদেরও আমরা ঋণ দেই। সেটা সুদ মুক্ত। সেটা শূন্য। এই চার রকমের সুদের হার ঋণ দেয়ার বেলায়। আর যখন লোকে আমাদের কাছে টাকা জমা রাখতে আসে তখন তাদেরকে আমরা আবার সুদ দেই। আমাদের সর্বনিম্ন সুদের হার হলো সাড়ে আট শতাংশ এবং সর্বোচ্চ সুদের হার হলো ১২ শতাংশ। এই সুদের হার দিয়ে আমরা টাকাটা সংগ্রহ করি এবং আমরা যে সুদের হারের কথা বললাম সেই সুদের হারে টাকাটা ঋণ দেই।

 প্রশ্নঃ যদি কোন ঋণ গ্রহিতা কোন ক্রমে আপনাদের ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা কি থাকে?

 উঃ মূল চেষ্টাটা হলো তাকে প্রতিষ্ঠিত করা, কাজেই একবার যদি ফেল করে তাকে আবার চেষ্টা করা হয় যাতে ভবিষ্যতে আর ফেল না করে। তাকে আবার তুলে ধরা। সে জন্য আমাদের বহু রকমের পদ্ধতি আছে। যাতে করে তাকে আবার তুলে ধরা যায়। তাকে বাতিল করা আমাদের লক্ষ নয়। আমাদের লক্ষ হলো নানা আপদ আসে মানুষের জীবনে। যেমন ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয় বন্যার সময়। বহুলোক ব্যর্থ হয় তাদের ঋণ পরিশোধে। তাদেরকে আমরা ছেড়ে অন্য কাজে চলে যাই না। তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নানা উপায়ে কাজ করি। আবার তাদেরকে নতুন করে ঋণ দেই যাতে করে সে নিজের জীবন আবার শুরু করতে পারে।

 প্রশ্নঃ বিশ্বের কোন কোন দেশে আপনার এই ক্ষুদ্র ঋন ব্যবস্থা চালু হয়েছে?

 উঃ সোজা কথায় বলা যাবে, দুনিয়ার সব দেশেই এখন ক্ষুদ্র ঋণ চালু হয়েছে। কোথায় চালু হয় নি তা আমাদের খুঁজে বের করতে কষ্ট হবে। কোনটা ধনীদেশ, মধ্যম আয়ের দেশ, নিম্ন আয়ের দেশ, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ। যে রকম দেশই হোক, এই ক্ষুদ্র ঋণ আছেই।

 প্রশ্নঃ ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা চীনেও চালু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রামীন ব্যাংক ও গ্রামীন ট্রাস্টের কি কি ভূমিকা আছে চীনের ব্যাপারে?

 উঃ চীনে ক্ষুদ্র ঋণ চালু হয়েছে ১৩ বছর আগে। এটা আমাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিল এবং আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি বাংলাদেশে। তারা এসে এটা চালু করেছে। পরবর্তীতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী গ্রামীন ব্যাংক পদ্ধতি গ্রহণ করে তাদের উদ্যোগে ইয়ুন্নান প্রদেশে সেটা শুরু করলো। তারপর ক্রমে ক্রমে আরো বহু প্রতিষ্ঠান, এখানকার উইমেন নোয়িং অল বলে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, সরকারী কো-অপারেটিভ এটা। তারা এটা গ্রহণ করলো। এ রকম বহু রকমের প্রতিষ্ঠান আছে যারা এটা গ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত শুধু গ্রামীন ট্রাস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এমন ১৭টা প্রতিষ্ঠান আছে। গ্রামীন ট্রাস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা ছাড়াও অন্যরা করেছে নিজস্ব উপায়ে। তাদেরও বহু প্রতিষ্ঠান আছে। বর্তমানে চীনে ১০০টিরও বেশী প্রতিষ্ঠান চীনে ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনা করে। তাদের মাধ্যমে ১ লাখ পরিবারের কাছে এই ক্ষুদ্র ঋণ পৌঁছেছে এবং তাদের এখন চেষ্টা হচ্ছে এটাকে বিরাট পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়া। সরকারেরও উদ্যোগ আছে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে একটা ডেলিগেশন পাঠিয়েছে সম্প্রতি। যাতে সারা দেশ জুড়ে বড় আকারে এই ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা প্রচলন করা যায় , সেটা দেখা যায়।

 প্রশ্নঃ আচ্ছা আপনার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের কল্যাণে ভবিষ্যতে বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

 উঃ আমরা হরদমতো নতুন নতুন কাজ করছি। সর্বশেষ একটা তাও কাগজে পত্রে এসেছিল যে গ্রামীন ডানোন কোম্পানীর দুঠ তৈরী করার কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছি তার উদ্দেশ্য হলো যারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে দরিদ্র যে সব ছেলে মেয়েরা তাদের যে সব পুষ্টির অভাব রয়েছে সেই পুষ্টির উপাদান এই দইয়ের মধ্যে দেয়া। যাতে করে এই দই খেলে তাদের পুষ্টিহীনতা দূর হয়ে যায়। আমরা আগামী ৭ই নভেম্বর চালু করবো সেই কারখানাটা। সেটার উদ্বোধনের সময় ট্রাস্ট থেকে বহু নামকরা লোকজন আসবে তাদের মধ্যে একজন হলো জিদান। ফুটবল প্লেয়ার জিদান। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করবেন। তার সঙ্গে দেখা করার জন্যে বাংলাদেশের লোকজন উন্মুখ হয়ে আছে।

 প্রশ্নঃ আচ্ছা , আপনিতো বেশ কয়েকবার চীনে এসেছেন। তো আগের চীন সফরের অভিজ্ঞতা আর বর্তমান যে চীন সফর করছেন এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি খুঁজে পেয়েছেন? এবং বর্তমান চীন সফরে আপনার কি অনুভূতি হচ্ছে?

 উঃ এবারের চীন সফর একটু ভিন্ন অন্যবারের চাইতে। বিশেষ করে এখানে আসার ৭/৮ দিন আগে, আমি নোবেল পুরস্কার পেলাম। কাজেই এটা সকল পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে সবাই জানে। কাজেই এখানকার মিডিয়া আমাদের দিকে খুবই দৃষ্টি দিচ্ছে। যেহেতু এটা এমন একটা কাজ যেটা নোবেল পুরস্কার পেয়েছে এবং সরকারের উচ্চতর পর্যায়ের লোকজন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। কাজেই এবারে অনেকগুলো অর্জন হয়েছে। মিডিয়াতো সারাক্ষণ লেগেই আছে। পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশন হরদম আমাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছে এবং সর্বত্র মানুষ চিনছে। আজকে যে ঈদের নামাজ পড়তে গেলাম, সেখানে ঈদের নামাজের পরে ঘীরে ফেললো। শুধু ছবি তোলার জন্যে। কিন্তু আমাকেতো লোকের এরকম জানার কথা না। কিন্তু চেহারা দেখেই টের পেললো এই সেই লোক, কাজেই নাছোর বান্দার মত, অনেক সময় ওখানে কাটাতে হলো। বুড়ো মহিলারাও ছবি তোলার জন্য যে রকম দৌড়াদোড়ি করলো বৃদ্ধ পুরুষরাও সে রকম করলো। কিশোর বালক বালিকারাও যারা এখানে এসেছিল তারাও ছবি তোলার জন্য তোলপাড় করলো। কাজেই কি পরিমাণ বহুল প্রচার হয়েছে তা এই দৃশ্য দেখেই বোঝা গেলো।

 প্রশ্নঃ ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস , আমি আবারও সি আর আইয়ের ও বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে আপনার এই নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় অভিনন্দন জানাচ্ছি।

 উঃ ধন্যবাদ আপনাদের। একটা খবর এর মধ্যে সুযোগ হয় নি বলার তা আপনাদের মারফতে এবারের আলোচনার মধ্যে নতুন সংযোগ হয়েছে। চীন সরকার আমাদেরকে আহ্বান করেছে এই চীনে গ্রামীন ব্যাংক স্থাপন করার জন্য। কাজেই এটা বাংলাদেশের জন্য আনন্দের সংবাদ। তা আমাদের জন্যও আনন্দের সংবাদ।