v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-24 15:29:18    
চীনের কৃষকরা তাদের ঐতিহ্যিক চাষাবাদের পদ্ধতির পরিবর্তন করছেন

cri
    চীনের শান সি প্রদেশের কৃষক শি তে সিংয়ের বয়স ৬৯ বছর । আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পেলেন , তিনি ক্ষেতের মাথায় বসে দেখছিলেন , একটি যুক্ত ফসল কাটা যন্ত্রপাতি গমের জমিতে ঘোরাফেরা করছে । কিছুক্ষণের মধ্যে ০.১৬ একর জমির গম কাটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে । তিনি তাড়াতাড়ি তার কৃষির কাজে ব্যবহৃত তিনচাকার মোটর গাড়ি চালিয়ে ক্ষেতের মাঝখানে গেলেন এবং অল্প দশ মিনিটের মধ্যে সমস্ত কাটা গম গাড়িতে ভরাট করে দিলেন ।

    যুক্ত ফসল কাটা যন্ত্রপাতি জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ার সংগে সংগে উত্তর চীনের কৃষকদের গম তোলার কাজ আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে ওঠেছে । বাস্তব ক্ষেত্রে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং নতুন প্রযুক্তি চীনের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সংগে সংগে কৃষি উত্পাদন আগের চেয়ে অনেক হাল্কা হয়ে ওঠেছে। অতীতে চীনের কৃষকরা সবসময় মাথার ঘাম পায় পড়ে ক্ষেতে যে রকম কঠোরভাবে পরিশ্রম করতেন , এখন ধাপে ধাপে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে ।

    চীনের শান সি প্রদেশের একজন স্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন , প্রতি বছরের গ্রীষ্মকালীন উত্পাদন ছিল চীনের কৃষকদের কাছে সবচেয়ে মাথাব্যাথার ব্যাপার । গম কাটার সময় কৃষকরা পুরোপুরই দুই হাত ও কাস্তের ওপর নির্ভর করতেন । তখন উত্পাদন কার্যকরীতা খুবই নীচু ছিল । শি তে সিং বলেছেন , অতীতে আমরা সবসময় জুন মাসে গম কাটার কাজ শুরু করতাম । তখন সেই কাজ সম্পন্ন করতে এক মাসেরও বেশি সময় লাগতো । এখন আমরা অডার দিয়ে ফসল কাটার যন্ত্রপাতি ডেকে আনি । আমরা শুধু কাটা গম গাড়িতে ভরাট করার কাজ করি ।

    দীর্ঘদিন ধরে বিরাটাকারের কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ব্যয় বেশি ছিল এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না । তার ওপর চীনের মাথাপিছু জমির আয়তন কম ছিল বলে নির্দিষ্ট মাত্রায় চীনে কৃষির যান্ত্রিকীকরণের প্রচলন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল । তবে গত কয়েক বছরে এ রকম অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে ।

    জানা গেছে , ১৯৯৫ সালের পর চীনের কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং এর প্রাণবন্ত বিকাশ ঘটেছে । একই বছর চীনের বিভিন্ন প্রদেশের সীমা ভংগ করে যুক্ত ফসল কাটা যন্ত্রপাতি যে কোনো অঞ্চলে কাজ করার নীতি গ্রহণ করা হয় । এ নীতি গ্রহণের কল্যাণে প্রতি বছর ফসল কাটা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দিন ৭ থেকে ১০ দিন থেকে প্রায় এক মাসে উন্নীত হয়েছে । এভাবে কৃষকদের উত্পাদন কার্যকরীতা বহুলাংশে বেড়েছে ।

    এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , এখন চীনে মোট ৭ হাজারেরও বেশি ফসল কাটা যন্ত্রপাতি দল চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করছে । অনেক সময় একদিনই ২ লাখ ৩০ হাজার যন্ত্রপাতি ক্ষেত-খামারে কাজ করে ।

    যেসব কৃষক কৃষি যন্ত্রপাতি কিনেন ও ব্যবহার করেন , সেসব কৃষক সরকারের কাছ থেকে কিছু ভর্তুকীও পান । চীনের শান তুং ও হোপেই প্রদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি বেশি করে ব্যবহার করা হয় বলে সেখানকার কৃষকরা একটি বিরাট কৃষি যন্ত্রপাতি কিনলে ৫০ শতাংশের ভর্তুকী পেতে পারেন । চীনের শান সি প্রদেশ খাদ্যশস্যের প্রধান উত্পাদনকারী প্রদেশ না হলেও সেখানকার কৃষকরা কৃষি যন্ত্রপিতি কিনলে ৩০ শতাংশের ভর্তুকী পেতে পারেন । কৃষকদের ও কৃষি উত্পাদনের ওপর তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব লাঘবের জন্যে চীন সরকার বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করেছে ।

    আজ গম , ভূট্টা ও তুলোর মত প্রধান প্রধান ফসলের বপন ও চাষাবাদের ক্ষেত্রে মোটামুটিই যান্ত্রিকীকরণ বাস্তবায়িত হয়েছে । চীনের গ্রামাঞ্চলের শ্রম শক্তি জমি থেকে মুক্ত হতে শুরু করেছে ।

    এবার চীনের গ্রামাঞ্চলে সুপার মার্কেট জাতীয় দোকান খোলার উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু বলছি ।

    নানা ধরণের প্রচুর পরিমাণ পণ্যদ্রব্য সরবরাহ এবং পণ্যদ্রব্যের উন্নত মানের জন্যে অল্প দু মাসের মধ্যে চীনের কান সু প্রদেশের তুন হুয়াং শহরে খোলা প্রায় এক শ' গ্রামীন দোকান স্থানীয় জনসাধারণের সমাদর পেয়েছে । কৃষকরা নিজেদের বাড়ির কাছে খোলা দোকানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

    আমাদের সংবাদদাতা তুন হুয়াং শহরে গেলে সর্বত্রই গ্রামাঞ্চলে এ রকম দোকানের প্রশংসার কথা শুনেছেন । অনেক কৃষক বলেন , অতীতে জিনিসপত্র আসল , না নকল , আমরা কিছু জানতাম না । তবে এখন আমরা শহুরে লোকদের মত নিশ্চিন্তে কিনাকাটা করতে পারি ।

    চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চীনের হাজার হাজার গ্রামে গ্রামীন দোকান খোলার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে । এ পরিকল্পনা অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চীনের গ্রামাঞ্চলের মহকুমা ও গ্রাম পর্যায়ে আধুনিক সুপার মার্কেট জাতীয় ২ লাখ ৫০ হাজার গ্রামীন দোকান খুলবে । বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তুন হুয়াং শহরকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরীক্ষামূলক স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে । এ পর্যন্ত তুন হুয়ান শহরে এ রকম ৯৬টি গ্রামীন দোকান খোলা হয়েছে । এসব দোকানে দৈনন্দিন জিনিসপত্র , কৃষিজাত দ্রব্য ও কৃষি উপকরণ কিনতে পাওয়া যায় ।

    কান সু প্রদেশের তুন হুয়াং শহরের বাণিজ্য বিভাগের পরিচালক তাং সিং হাই বলেছেন , হাজার হাজার গ্রামে দোকান খোলার উদ্যোগ একদিকে কৃষকদের জন্যে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত পণ্যদ্র্য সরবরাহ করবে , অন্যদিকে চীনের গ্রামাঞ্চলের ব্যয় বাড়িয়ে দেবে । এ দুটো ক্ষেত্রে তুন হুয়ান উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে ।

    চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক পরিকল্পনা অনুসারে কান সু প্রদেশ প্রথমে ১৮টি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীন দোকান খোলার কাজ চালিয়েছে । এসব দোকান কৃষকদের জন্যে অনেক সুযোগ সুবাধা দিয়েছে ।