v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-24 15:04:07    
ইরাকের জনসাধারণ হচ্ছে সর্বাধিক শিকার(ছবি)

cri

  ইরাকের রাজধানী বাগদাদের পূর্বাংশের সাদর নগরে ২৩ নভেম্বর ধারাবাহিক বোমা হামলা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৫০ জন নিহত ও ২৩৮ জন আহত হয়েছে। সাদর নগর হচ্ছে শিয়া-মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল। তারা এখানে প্রায়ই সুন্নি সম্প্রদায়ের সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলার শিকার হয়। এটা ধর্মীয় সংঘর্ষের একটি উষ্ণ জায়গা। ইরাক যুদ্ধ অবসানের তিন বছর পর ইরাকের অভ্যন্তরে বলপ্রয়োগ তত্পরতা বন্ধ হওয়ার কোন ইঙ্গিত নেই। বরং বহু নিরীহ নাগরিক নানা সংঘর্ষ ও আক্রমণে হতাহত হচ্ছেন। তাঁরাই হচ্ছে ইরাকের উশৃঙ্খল পরিস্থিতির সর্বাধিক শিকার ।

 ২২ নভেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ বছরের অক্টোবরে মোট ৩৭০৯ জন নীরিহ ইরাকী নাগরিক নানা ধরনের সহিংস ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধ শুরুর পর এ মাসে নিহত নীরিহ ইরাকী নাগরিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার ইরাকী স্বদেশ থেকে পালিয়েছে।

 জাতিসংঘের এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরাকের নীরিহ নাগরিকদের ওপর সর্বাধিক হুমকী হচ্ছে ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যকার বলপ্রয়োগ সংক্রান্ত সংঘর্ষ। এ বছরের ফেব্রুয়ারীতে শিয়া সম্প্রদায়ের পবিত্র স্থান আলি আল-হাদি মসজিদের বিস্ফোরণ ঘটনার দরুণ ইরাকের শিয়া সম্প্রদায় আর সুন্নি মুসলমানের মধ্যে বড় আকারের ধর্মীয় সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়েছে। দু'পক্ষের সশস্ত্র ব্যক্তিরা পরস্পরকে আঘাত হানে এবং প্রতিপক্ষের জনসাধারণের ওপর আক্রমণ চালায়। সিএনএন এর খবরে জানা গেছে, ইরাকের পুলিশ পক্ষ ২০ থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বাগদাদ ও তার আশেপাশের অঞ্চলে মোট ১৪০টিরও বেশি লাশ আবিষ্কার করেছে। অনুমান অনুযায়ী, তারা ধর্মীয় আঘাতে প্রাণ হারিয়েছে।

 বিশ্লেষকরা মনে করেন, ধর্মীয় সংঘর্ষ ছাড়া, মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্বাধীন বহু দেশীয় বাহিনীও স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর সরাসরি হুমকির সৃষ্টি করছে। ইরাকের পুলিশ পক্ষ ২৩ নভেম্বর জানিয়েছে, একই দিন ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী বাগদদাদের পূর্বাংশের সাদর নগরে একটি মিনি বাসে গুলি করে ৪ জনকে হত্যা আর ৮ জনকে আহত করেছে। তা ছাড়া, ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনী সেখানের মার্কিন বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই আক্রমণের ফলে প্রায়ই নীরিহ ইরাকী জনসাধারণের হতাহতের সৃষ্টি করে।

 ইরাকের নাগরিকদের নিরাপত্তার ওপর আরেকটি হুমকী হচ্ছে সাংগঠনিক অপরাধ। ইরাক সরকার দেশের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। অপরাধীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাহসের সঙ্গে অপরাধ করে। ১৪ নভেম্বর পুলিশের কাপড় পড়া কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি ইরাকের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১০০ জনেরও বেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অপহরণ করেছে। ২০০৩ সালে সাদ্দাম সরকার উত্খাতিত হওয়ার পর ইরাকে অপহরণ ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন ইরাকে রোজ ৫ থেকে ৩০টির মত অপহরণের ঘটনা ঘটে। এ সংখ্যা কলোম্বিয়া, মেক্সিকো ও ব্রাজিলসহ বিশ্বে অপহরণ ঘটনা সবচেয়ে বেশী ঘটানো দেশগুলোর চেয়েও বেশি। অপরাধীদের অপহরণের লক্ষ্য, অপহরণ কার্যকরী করা, পরিবহন, জিম্মীকে তত্ত্বাবধান করা এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করাসহ ধারাবাহিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, ইরাকের দাঙ্গাহাঙ্গামা নিরাপত্তা পরিস্থিতির দরুণ জনসাধারণের জীবন অতি কঠিন অবস্থায় পড়েছে। ইরাক সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দিনে দিনে শক্তিশালী হতে থাকা বেসরকারী সশস্ত্র ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে নিরস্ত্রীকরণ করা, সাংগঠনিক অপরাধ ও দুর্নীতির ওপর আঘাত হানা, নিরাপত্তা বাহিনীকে জোরদার করা, তেল ভাগাভাগির সমস্যার সমাধান করা উচিত, যাতে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক পুনর্মিলন বাস্তবায়ন করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক নীতির পরিবর্তনও দরকার। তাদের ইরাকের জনমত অনুযায়ী সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সূচী প্রণয়ন করে ধাপে ধাপে ইরাক থেকে সরে যাওয়া উচিত। এর পাশাপাশি ইরাকের প্রতিবেশী দেশ , অন্যান্য আরবীয় দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দূর্দশাক্লিষ্ট ইরাকী জনগণের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কঠিন অবস্থা দূর করার জন্য সাহায্য করা উচিত।