ধর্মবিশ্বাস আর পুঁজি বিনিয়োগ দুটি ভিন্ন কাজ। কিন্তু তাইওয়ানী ব্যবসায়ী হো শান সি প্রথমে বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাস করেন বলে মূলভূভাগে এসে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। ধর্মবিশ্বাসের জন্য হো শান সি পশ্চিম চীনের শেনশি প্রদেশের রাজধানী সিআনে তাঁর ব্যবসার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। হো শান সি ১৯৫৮ সালে তাইপেইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ প্রথম বার তাইওয়ানের অধিবাসীদের মূলভূভাগের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার সুযোগ দেয়। তখন হো শান সি সংবাদদাতা হিসেবে আত্মীয়স্বজনদের পরিদর্শন দলের সঙ্গে পেইচিংয়ে এসেছেন। তখন থেকে তিনি প্রায় প্রতি বছর মূলভূভাগে আসেন। মূলভূভাগের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তীব্রভাবে তাকে আকর্ষণ করে। যদিও হো শান সি চীনের অনেক শহরে গিয়েছেন। কিন্তু সবশেষে তিনি অন্তর্দেশীয় শহর সিআনে পুঁজিবিনিয়োগ এবং ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন । হো শান সি এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন, "তিন বছর আগে, আমি একটি কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছি। এটি ছিল সিআনের ফামেই মন্দিরের সারিরা তাইওয়ানে পাঠানো। তখন আমি প্রচার গ্রুপের প্রধান ছিলাম। এ তত্পরতার মাধ্যমে আমার সিআনের অনেক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার ধারনা জন্মে, শানসি একটি ভালো জায়গা। তাইওয়ানে ফিরে আসার পর আমরা কয়েক বন্ধু একসঙ্গে সিআনে আসার সিদ্ধান্ত নেই।" হো শান সি একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তিনি বিশ্বাস করেন, দু'তীরের ধর্মীয় বিনিময় তত্পরতা সিআনের সঙ্গে তার এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সত্যি সত্যি ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে পুঁজি বিনিয়োগ পরিবেশ বিবেচনা করতে হয়। সিআনে আসার আগে হো শান সি আর তাঁর অংশীদার পেইচিং, শাংহাইসহ নানা বড় শহর পরিদর্শন করেন। কিন্তু বড় বড় শহরের অপেক্ষাকৃত দামি জমি ও জনশক্তির তুলনায় তাঁর অর্থনৈতিক শক্তি তেমন ছিল না। ফলে নিম্ন ব্যয়বহুল সিআন শহরে তিনি বাস্তব ব্যবসার সুযোগ দেখতে পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, "তাইওয়ানবাসীদের ধারণায় সিআন একটি অপেক্ষাকৃত পশ্চাত্পদ জায়গা । আমাদের ধারনা ছিল, এখানে কেবল পীত-মাটির মালভুমি আছে, যা অত্যন্ত অনুন্নত। কিন্তু আসার পর দেখেছি জায়গাটি তেমন খারাপ নয়। আসলে এখানকার বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা দল খুব শক্তিশালী।" হো শান সি মনে করেন, প্রবল বৈজ্ঞানিক ও গবেষণার সামর্থ্য হচ্ছে সিআনের । তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের যথাযথ পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বাজার উন্নয়নের দক্ষতা আছে। এ দুটো জিনিস সংযুক্ত হলে খুব ভালো বাণিজ্যিক সুযোগ পাওয়া যাবে। ফলে ২০০৩ সালে তিনি সিআনে সাশ্রয়ী পণ্য গবেষণার একটি হাই টেক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিন বছর প্রচেষ্টার পর এ কোম্পানির পণ্যদ্রব্য দশ বারোটি দেশ ও অঞ্চলে বিক্রি করা শুরু হয়। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন, এখন কোম্পানীটি সাশ্রয়ী নানোমিটার কাঁচ গবেষণা করছে। তিনি বলেছেন, "কারণ চীনের পুর্ত মন্ত্রণালয় নানোমিটার কাঁচকে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য কাঁচ হিসেবে নির্ধারণ করেছে। বর্তমান স্থাপত্য কাজে ব্যবহৃত কাঁচ সাশ্রয়ী নয়। আমরা আশা করি, আমাদের গবেষণালব্দ নানোমিটার কাঁচ আলোকে রোধ করার পাশাপাশি উষ্ণতাও রক্ষা করতে পারবে।" হো শান সি নিজের কোম্পানী ভালোভাবে পরিচালনার পাশাপাশি কিছু কারখানা বা অফিস ভবন নির্মাণ করে অন্যান্য তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এরপর তিনি ভেবেছেন, একটি হাই-টেক শিল্প বাগান নির্মাণ করলে কেমন হয়? তাঁর চিন্তাধাবনা শেনসি প্রদেশ আর সিআন সরকারের সমর্থন পেয়েছে এবং দ্রুত বাস্তবায়িত হয়েছে। অনুমান অনুযায়ী , এ বছরের ডিসেম্বরে এই শিল্প বাগান চালু হবে। এর আয়তন প্রায় ৭০ হেক্টর, পুঁজি বিনিয়োগের মোট মূল্য ১২০ কোটি ইউয়েন রেনমিনপির বেশি। এখানে নানোমিটার কাঁচ, অবাধে বিদ্যুত্ পরিবাহি চুল্লিসহ বিশটি হাই-টেক প্রকল্প স্থাপিত হবে। সিআনের পৌর সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, এ শিল্প বাগানে আসা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আংশিক মূল্য সংযোজন কর পুরস্কার হিসেবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেয়া হবে এবং তাদেরকে কম দামে বিদ্যুত সুবিধা দেয়া হবে। সিআন শহরের মেয়র চেন পাও গেন মনে করেন, হাই-টেক শিল্প বাগান সিআন আর তাইওয়ানের প্রাধান্য সম্পদ সকলের জন্য লাভ বয়ে আনবে। তিনি বলেছেন, "প্রথমত, সিআনের জ্বালানি সম্পদ আর দক্ষ জনবল অপেক্ষাকৃত বেশি। দ্বিতীয়ত, এখন সিআন হাই-স্পিড প্রবৃদ্ধির যুগে আছে, এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার। তাইওয়ান বিপুল পরিমাণ অর্থ পুঁজি বিনিয়োগ করার জন্য ভাল সুযোগ খুঁজছে। তৃতীয়ত, তাইওয়ানের সফটওয়্যার শিল্প উন্নত। এটা সিআনের কৌশলগত বিকাশ ক্ষেত্রও বটে। " তাইওয়ানের পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সিআনে নানা সমস্যা মোকাবেলা ও ভালোভাবে সমাধানের জন্য হো শান সি তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের নিয়ে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছে। এ সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রায়ই তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের মতামত স্থানীয় সরকারকে জানান। কিছু দিন আগে সিআনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় প্রণালীর দু'পারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ও সহযোগিতা ফোরামে স্থানীয় তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি শেনসি প্রদেশের উপ-গর্ভণর ইউয়ান ছুন ছিংয়ের কাছে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার সমস্যা অবহিত করেছেন এবং সরকার এই সমস্যা সমাধান করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে ইউয়েন ছুন ছিং স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন যে, "আমি মনে করি, মিঃ হোর উত্থাপিত সমস্যা অনেক তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের মনের কথাও বটে। সম্প্রতি আমাদের প্রাদেশিক সরকার গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বড়, মাঝারী ও ছোট আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রেডিট নিশ্চয়তাবিধান সংস্থার নির্মাণকাজ জোরদার করা হবে। মাঝারী ও ছোট আকারের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণদানের জন্য সরকারী তহবিল বাড়ানো হবে।" মহত্ পশ্চিম চীনের উন্নয়ন কৌশল জারি করার পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিম চীনের শেনশি প্রদেশে তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের মধ্যে পুঁজি বিনিয়োগ প্রবণতা দেখা দিয়েছে। হো শান সির কাহিনী কেবল এর মধ্যে একটি উদাহরণ। শেনসিতে বসবাসরত বহু তাইওয়ানী ব্যবসায়ী মনে করেন, যদিও শেনসির গোটা পুঁজি বিনিয়োগ পরিবেশ পূর্ব চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে। তবে এখানে ভবিষ্যত বিকাশের সুপ্ত শক্তি বিরাট।
|