ভারত সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ২২ নভেম্বর সকালে নয়া দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ' হাতে হাত মিলিয়ে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করে মিলিতভাবে সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি করুন ' শিরোনামে একটি বক্তৃতা দিয়েছেন। হু চিন থাও বলেছেন, চীন আর ভারতের মৈত্রী দু'পক্ষের জন্য কল্যাণকর। এমনকি এশিয়া তথা বিশ্ব তাতে উপকৃত হবে। চীন-ভারত সম্পর্ক শুধু দ্বিপক্ষীয় নয় তা বিশ্বব্যাপী তাত্পর্যসম্পন্ন। এখন শুনুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো একটি রির্পোট। ভারতের বিজ্ঞান ভবন হচ্ছে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আর সেমিনার আয়োজনের জায়গা। এই ভবনের বিশাল বক্তৃতা হলে ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের বক্তৃতা শুনেছেন। হু চিন থাও বলেছেন, দুটো প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীন আর ভারতকে নিজ নিজ অর্থনীতির উন্নয়ন করতে হবে এবং জনগণের জীবনের মান আরো উন্নত করতে হবে। উভয় দেশের শান্তিময় ও স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও সুপ্রতিবেশীসুলভ পরিবেশ দরকার। বিশ্বের দুটো বড় দেশ হিসেবে চীন আর ভারত এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা ত্বরান্বিত করা এবং এশিয়ার উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব বহন করে। চীন আর ভারত দুটো বড় উন্নয়নশীল দেশ। বিশ্বের বহুমুখীকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রকরণ সহ বিভিন্নগুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিশয়ে দু'দেশের মধ্যে ব্যাপক অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। হু চিন থাও তাঁর ভাষণে বলেছেন, ভারতের উন্নয়ন এশিয়ার সার্বিক শক্তি আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মযার্দা বাড়ানোর জন্যে কল্যাণকর, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য কল্যাণকর, আঞ্চলিক আর বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্যে কল্যাণকর, চীন-ভারত সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতা গভীরতর করার জন্যে কল্যাণকর এবং উভয়ের বিজয় বাস্তবায়নের জন্যে মূল্যবান সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করেছে। দু'দেশের কৌশলগত সহযোগিতা সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে হু চিন থাও তাঁর ভাষণে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। প্রথমত: পারষ্পরিক রাজনৈতিক আস্থা জোরদার করে দু'দেশের সম্পর্কের ভিত্তি সুসংবন্ধ করা, দ্বিতীয়ত: আর্থ-বিণিজ্যিক সহযোগিতা গভীরতর করে দু'দেশের সম্পর্কের অন্তনিহিত ইচ্ছেকে সম্পূর্ণ করা, তৃতীয়ত: মানবিক আদান-প্রদান সম্প্রসারন করে দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক ভিত্তি মজবুত করা, চতুর্থত: সংলাপ ও পরামর্শ জোরদার করে সীমান্ত সমস্যার আশু সমাধান করা এবং পঞ্চমত: বহুমুখী সহযোগিতা উন্নয়ন করে মিলিতভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সঙ্গতঅধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা ।
হু চিন থাও তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন , চীন উন্নয়ন চায় এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুষম সহাবস্থান , পারস্পরিক উপকারিতা ও সহযোগিতা এবং যৌথ উন্নয়ন করতে ইচ্ছুক । আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির যত পরিবর্তনই হোক না কেন , চীন শান্তি , উন্নয়ন ও সহযোগিতার পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পররাষ্ট্র নীতিতে অবিচল থাকবে , অবিচলিতভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথ বেয়ে চলবে , পারস্পরিক উপকারিতা ও উভয়ের কল্যাণে উন্মুক্ত কৌশল বাস্তবায়ন করবে এবং বিশ্ব শান্তি সুরক্ষার মাধ্যমে যেমন নিজকে বিকশিত করবে , তেমনি নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ত্বরান্বিত করবে । বাস্তব থেকে বোঝা যায় যে , চীনের উন্নয়ন শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন , উন্মুক্ত উন্নয়ন ও সহযোগিতার উন্নয়ন । চীন চিরকালই বিশ্ব শান্তি সুরক্ষা করা ও যৌথ উন্নয়নের মজবুত শক্তি হবে ।
হু চিন থাও তাঁর বক্তৃতার উপসংহারে দু'দেশ ও দু'দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে হাতে হাত মিলিয়ে দু'দেশের কৌশলগত অংশিদারিত্বপূর্ণ সম্পর্কের আরো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে , দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও যৌথ সমৃদ্ধিশালী সুষম বিশ্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং সম্মিলিতভাবে দু'দেশ ও দু'দেশের জনগণের আরো সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি করবে । তিনি বলেছেন ,
দু'দেশের বর্তমান যুগের লোক হিসেবে পূর্বপুরুষদের সৃষ্ট ইতিহাস উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার পাশিপাশি আগামী বংশধরের জন্যও ইতিহাস সৃষ্টি করতে হবে । দু'দেশ ও দু'দেশের জনগণের বন্ধুত্ব একটি দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম । এই কার্যক্রম সুসম্পন্ন করতে চাইলে বংশপরম্পরায় প্রচেষ্টা চালাতে হবে ।
ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাইরন সিং শেখাওয়াত এবং প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও বিজ্ঞান ভবনে বক্তৃতা দিয়েছেন । ভাইরন সিং শেখাওয়াত হু চিন থাও'র ভারত সফর এবং দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন । তিনি বলেছেন , দু'দেশের উত্সাহব্যঞ্জক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে । দু'দেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । আজ দু'দেশের অর্থনীতি আরেকবার সারা বিশ্বের আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । দু'দেশের নেতৃবৃন্দ এশিয়ার শতাব্দীব্যাপী কর্মসূচী গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন , তা আশাব্যঞ্জক । দু'দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিমুখী কৌশল ও সহযোগিতামূলক অংশিদারিত্বের সম্পর্ক যেমন দু'দেশের বর্তমান প্রজন্ম ও আগামী বংশধরের জন্য সুফল বয়ে আনবে তেমনি এই অঞ্চলসহ বিশ্ব স্থিতিশীলতার জন্যও তা অনুকূল হবে ।
|