v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-22 16:39:17    
চীনের শহুরে তরুণদের  প্রেমের নতুন পদ্ধতি

cri
    চীনের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের সংগে সংগে শহরে বসবাসকারী কোনো তরুণ -তরুণী বেড়ে যাওয়া শহরের ব্যাপকতায় অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের জীবনের অবকাশের সংকীর্ণতাও গভীরভাবে অনুভব করছে । তারা প্রতিদিন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন । জীবনের অন্য ক্ষেত্রের ওপর নজর দেয়ার সময়ও তাদের নেই । সাদাসিধে প্রেমও তাদের কাছে বাহুল্য বলে মনে হচ্ছে । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা দুনিয়া থেকে আমদানি করা প্রেমের নতুন পদ্ধতি - ৮ মিনিট সাক্ষাত চীনের বড় বড় শহরে এবং কিছু নির্দিষ্ট জনতার মধ্যে প্রচলিত হয়ে এসেছে । আজকের অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে কিছু বলছি আমি শি চিং উ ।

    গ্রষ্মকালের এক সন্ধ্যায় সারা দিন খরতাপে কেটে যাওয়া পেইচিং শহরে তখনো সরগরম ছিল । ব্যস্ত থাকার পর লোকজন স্রোতের মত শহরের আনাচে-কানাচে ছুটে যাচ্ছে । চীনের উচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কেন্দ্র- চুং কুয়ান ছুনের নিকটে এক উন্নতমানের অফিস ভবনে ৮ মিনিট সাক্ষাতের তত্পরতা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ।

    তোমার সামনে বসা ভদ্র লোকদের -শ্রেষ্ঠ বলে মনে করলে তোমরা তাদের যোগাযোগের ঠিকানা লিখে নাও । তোমার জীবনের প্রতি মিনিট আঁকড়ে ধরো । ঠিক আছে , এখন প্রথম ৮ মিনিট শুরু হচ্ছে । আশা করি , সবাই আনন্দ পাবে ।

    চাং চিং হচ্ছেন পেইচিং আনন্দ উদ্যান ক্লাবের পরিচালিকা । তিনি সেই সন্ধ্যার ৮ মিনিট সাক্ষাত অনুষ্ঠানের সংগঠক । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , ৮ মিনিট সাক্ষাতের জন্যে নির্দিষ্ট সাংগঠনিক রূপের দরকার । অনুষ্ঠান কক্ষে সাধারণত কয়েকটি ছোট টেবিল বসানো হয় । প্রতিটি টেবিলের দু পাশে পৃথক পৃথকভাবে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে বসে । অনুষ্ঠান শুলু হলে এক টেবিলের ছেলেমেয়ে ৮ মিনিট ধরে আলাপ করে । ৮ মিনিট পার হলে মেয়েটি বসে থাকবে । ছেলেটি ঘন্টা চলার দিক অনুসারে টেবিল বদল করে । অপরের টেবিলের মেয়েটির সংগে আবার ৮ মিনিট ধরে আলাপ করবে । এমনি চললে প্রত্যেক ছেলেমেয়ে অনুষ্ঠান কক্ষের অন্য সকলের সংগে আলাপ করার পরই কেবল অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে । ৮ মিনিট সাক্ষাতের সুবাদে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক বন্ধুর পরিচয় পেতে পারে ।

    চাং চিং বলেছেন , আমাদের ক্লাবে অনেক সদস্য রয়েছে । সুযোগ তো অনেক আছে । ছেলেমেয়ে তো কেউ মন্দ নয় । সবই ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে । সবাই প্রত্যাশা করছে ।

    ২০০৩ সালে চাং চিংয়ের আনন্দ উদ্যান ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় । বর্তমানে তার ক্লাবের সদস্যদের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার । তাদের অধিকাংশই পেইচিংয়ে কর্মরত কর্মচারী । প্রতিদিন সন্ধ্যায় চল্লিশজন ছেলেমেয়ে তার ক্লাবে আসে এবং নিজেদের প্রেম পেতে চায় ।

    আরো বেশি সুযোগ দেয়ার জন্যে ক্লাবটি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে অনুষ্ঠান কক্ষে এক রকম বাড়ির পরিবেশ সৃস্টি করেছে । অনুষ্ঠান কক্ষের আলো বেশ নমনীয় । বাতাসের মধ্যে ভেসে যাচ্ছে কফির সুগন্ধ। সংগীতের শ্রুতিমধুর সুর কক্ষের আনাচে -কানাচে শোনা যাচ্ছে । ৩০ বর্গমিটার কক্ষটিতে সুশৃংখলভাবে বসানো রয়েছে ৮টি ছোট টেবিল । প্রতিটি টেবিলে রাখা হয় একটি করে রংবেরংয়ের সেকেলের টেবিল বাতি । এক এক বইয়ের শেলফ এ টেবিলগুলোকে পৃথক করে তুলেছে । বইয়ের শেলফগুলোতে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পত্রিকা।

    সবেমাত্র সমাপ্ত একদফা ৮ মিনিট সাক্ষাতের মাধ্যমে আই টি পেশায় নিয়োজিত মিস চাং সিয়াও ও মিস্টার লি হান সংক্ষিপ্ত কথাবার্তার মধ্যে তাড়াহুড়া করে পরস্পরের সংগে পরিচয় হল ।তারা আমাদের সংবাদদাতাকে এ রকম সাক্ষাতের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন । চাং সিয়াও বলেছেন ,

    আমার সংগে এক টেবিলে বসা ছেলেটি বেশ ভালো । খুব নিষ্ঠাবান । আমরা প্রধানত আমাদের কাজ ও পেশা নিয়ে আলাপ করেছি । আমরা কেন এখানে এসেছি । তার কারণ নিয়ে কথাবার্তা বলেছি । সবসময় একা একা লাগছে । তাই প্রেমের অনুভূতি খুঁজে বের করতে চাই ।

    মিস্টার লি হান বলেছেন , আমার মনে হয় , এ সাক্ষাতের পদ্ধতি ছেলেমেয়েদের বেশি সুযোগ দেয় নি । অথচ অন্ততপক্ষে অন্যদের সংগে মেলামেশার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে । তুমি সত্যিকারভাবে সুযোগ আঁকড়ে ধরেছো কি না , তা তো অন্য ব্যাপার । তবে অন্ততপক্ষে এক ভালো সুযোগের সৃস্টি হয়েছে ।

    তিনি আরো বলেছেন , তিনি আশা করেন যে, এ দুর্লভ সুযোগের সদ্বব্যবহার করে ভালো পাত্র পাবে ।

    আনন্দ উদ্যান ক্লাবের পরিচালিকা চাং চিং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত বেশ কিছু ছেলেমেয়ে সুযোগ আঁকড়ে ধরে নিজেদের প্রেমের সুখ ভোগ করছে । তিনি আমাদের কাছে এক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন । তিনি বলেন ,

    আমাদের ক্লাবের একজন সদস্য একজন আইনজীবি । চমতকার লোক । একটি মেয়ে সবেমাত্র তিন মাস আগে পেইচিংয়ে এসেছে । সে আমাদের ক্লাবে এসে আরো বেশি বন্ধু পেতে চায় । প্রথম সাক্ষাতে তারা পরস্পরের প্রতি সন্তুষ্ট হয় । আমি শুনেছি , এ বছরের শেষ দিকে তারা বিয়ে করবে ।

    চীনা সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর পরিবার ও বিয়ে গবেষণা বিভাগের উপপরিচালক অধ্যাপক ওয়াং চেন ইয়ু মনে করেন যে, প্রমের এ নতুন ধরণের পদ্ধতি আধুনিক সমাজের মানুষের জীবনের দ্রুত ছন্দের সংগে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বলেছেন ,

    আমার মনে হয় , এটি বর্তমান উচ্চ ফলনশীল সমাজের সংগে সংগতিপূর্ণ । এ পদ্ধতি কাজে ব্যস্ত লোকজনের সংগে খাপ খায় । তাদের কাজের পরিসর অত্যন্ত সংকীর্ণ । অন্যদের সংগে মেলামেশার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার সময়ও তাদের নেই । তারা এ সুযোগে আরো বেশি বন্ধুকে পেতে চায় । যেহেতু এ রকম ক্লাবে যোগ দিলে বেশি সময় ও টাকা লাগবে না । তাই এ নতুন পদ্ধতি কিছু লোকের চাহিদা মিটিয়েছে ।

    যেমন এ অধ্যাপক বলেছেন , ব্যস্ততম জীবন দ্রুত বন্ধুত্ব স্থাপনের পদ্ধতির প্রচলন সম্ভব করে তুলেছে । ৮ মিনিট সাক্ষাত ছাড়া ইন্টারনেট ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রমিক-প্রেমিকাকে খোঁজার উদ্যোগও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ।

    তবে চীনা সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর অধ্যাপক ওয়াং চেন ইয়ু সতর্ক দিয়ে বলেছেন , প্রেমের এসব নতুন পদ্ধতি তরুণ-তরুণীদের পরিচয় হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে । সেগুলো রাতারাতি প্রেমে পরিণত হবে না ।