শ্রোতাবন্ধুরা, ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় নয়া দিল্লীতে ভারত সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ও ভারতের প্রেসিডেন্ট এ পি জি আব্দুল কালামের সঙ্গে চীন ও ভারতের ২০০ তরুন প্রতিনিধি সাক্ষাত্ করেছেন। দু'নেতা এ সময় যুবকযুবতীদের চীন ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া এবং দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখতে উত্সাহ দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের হোটেলের বাগানে সাক্ষাত্ হয়েছে। পাখির কলরবের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় যুব প্রতিনিধি ভিদ্যা শাহ ভারতীয় কবি সুব্রামানিয়া ভারতীয় বিখ্যাত কবিতা দিয়ে তৈরী গান গেয়েছেন। গানের কথা হচ্ছে, ভারত আর ভারতীয় সভ্যতার প্রতি ভালোবাসা আর গর্ব নিজের বাবা-মার প্রতি ভালোবাসার চেয়েও কম নয়। ভিদ্যা শাহ বলেছেন, চীন ও ভারত উভয়ই সহস্রাব্দের সভ্যতাধারী প্রাচীন রাষ্ট্র। এই কবিতা দিয়ে চীন আর চীনের সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসাও প্রকাশ করা যায়। এ বছরের অক্টোবরে ভিদ্যা শাহ ১০০ জন ভারতীয় যুবকযুবতীর সঙ্গে চীন সফর করেছেন।
দু'দেশের পূর্ণ যৌবনের স্ফূর্তিসম্পন্ন যুবকযুবতীদের দেখে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের ২২ বছর আগেকার স্মৃতি জেগে উঠে। তখন তিনি চীনের জাতীয় যুব ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে চীনের যুব প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারতে মৈত্রী সফর করেন। তিনি বলেছেন, দু'দেশের যুবকদের মত বিনিময় ত্বরান্বিত করা এবং চীন ও ভারতের জনগণের মৈত্রী বংশপরম্পরায় বজায় রাখার জন্য চীন সরকার পরবর্তী পাঁচ বছরে ৫০০ জন ভারতীয় যুবকযুবতীকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেছেন, "যুবকযুবতীরা হচ্ছেন দেশের প্রত্যাশা এবং মানবজাতির ভবিষ্যত। চীন ও ভারতের ভবিষ্যত উন্নয়নে তোমাদের অংশগ্রহন দরকার। চীন ও ভারতের ভবিষ্যত সম্পর্কের দিকে তোমাদের সৃষ্টি দেয়া দরকার। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, চীন ও ভারতের যুবকদের বিনিময় জোরদার হবে, মৈত্রী বাড়বে, পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করবে, সহযোগিতা ত্বরান্বিত করবে, মিলিতভাবে দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নতুন অধ্যায় লিখবে। এর মাধ্যমে এশিয়া ও বিশ্বের আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি করবে।"
ভারতের প্রেসিডেন্ট কালাম বলেছেন, "চীনের উন্নয়নের মহত পরিকল্পনা আছে। অর্থাত্ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং সুষম সমাজ গড়ে তোলার পাশাপাশি চীন কনফুসিয়াস যুগ থেকে সংরক্ষিত ঐতিহ্যিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ করে যাবে। ভারতেরও নিজ দেশ উন্নয়নের মহত্ পরিকল্পনা আছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২০ সালের আগে ভারতকে শিল্পোন্নত দেশে পরিণত করা, বৌদ্ধ ধর্ম সম্প্রসারণের আগে থেকে প্রচলিত ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি অব্যাহত রাখা। বর্তমান বিশ্বে যুবকদের কাজ হচ্ছে এক উন্মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। এর জন্য নীতিনিষ্ঠ নাগরিক দরকার। চীন ও ভারত বিশ্বের দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যুবকদের জ্ঞান সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরো ভালভাবে সম্পদ কাজে লাগানো যায়, বিভিন্ন দেশের বিকাশের ভারসাম্যহীনতা দূর করা যায় এবং শান্তি বাস্তবায়ন করা যায়। "
দু'দেশের নেতাদের কথা শুনে ভারতের যুব প্রতিনিধি , ভারতের নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের স্নাতক ছাত্র রাকেশ রন্জান আনন্দচিত্তে সংবাদদাতাকে বলেছেন, "আজ আমার খুব ভাল লাগছে। আমার একটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। আমি কেবল ভারতের প্রেসিডেন্ট ও চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার সুযোগ পেয়েছি তাই নয়, বরং আমি সামনের লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁদের সঙ্গে করমর্দন করেছি। আজ চীনের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, পরবর্তী পাঁচ বছরে তিনি ৫০০ জন ভারতীয় যুবককে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানাবেন। আমরা অত্যন্ত খুশি। পরে আমাদের চীনে যাওয়ার সুযোগ হবে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের তত্পরতা অব্যাহত থাকবে। চীন ও ভারতের মৈত্রী ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হবে।"
|