সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়ালেম ২০ নভেম্বর দু'দিনব্যাপী ইরাক সফর শেষ করেছেন । ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর এটাই সিরিয়ার কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার প্রথম ইরাক সফর । সফরকালে মুয়ালেম বলেছেন , সিরিয়া ইরাকের বর্তমান সরকারকে সমর্থন করে এবং ইরাকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইরাকী সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা চালাতে ইচ্ছুক । তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী বাহিনীকে ইরাক থেকে সরিয়ে নেয়ার একটি সময়সূচী প্রণয়নের জন্যও আবেদন জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন , এটা ইরাকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করা এবং ইরাকের অভ্যন্তরীণ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ কমানোর জন্য অনুকূল হবে । মুয়ালেমের এই দৃষ্টিভঙ্গী ইরাকের বিষয়ে সিরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে ।
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক দিক থেকে অধিক থেকে অধিকতর চাপ প্রয়োগ করছে । যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে সিরিয়া ও ইরানসহ কয়েকটি দেশকে তথাকথিত শয়তান দেশগুলোর একটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে , তার পর ইরাকের যুদ্ধোত্তর নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ইরাকে সশস্ত্র ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ বাধা না দেয়ার জন্য সিরিয়ার বিরুদ্ধে দোষারোপ করেছে । গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে লেবাননের সাবেক প্রধান মন্ত্রী রফিক আল হারিরির হত্যালীলায় লেবাননে সিরিয়া বিরোধীতা করার যে অভিযান চালানো হয়েছে , এই অজুহাতে লেবানন থেকে পুরোপুরি সৈন্য সরানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে । যুক্তরাষ্ট্রের এ সব কার্যকলাপের উদ্দেশ্য সিরিয়ার ঐতিহ্যিক শক্তির আওতা কমানো এবং মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার প্রভাবকে দুর্বল করা । কিন্তু এতে সিরিয়া কোন প্রকার নতি স্বীকার করে নি । সিরিয়া কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা করার চেষ্টা চালিয়েছে । মুয়ালেমের ইরাক সফর সিরিয়ার বেশ কিছু কূটনৈতিক কার্যক্রমের সর্বশেষ ব্যবস্থা ।
তাহলে সিরিয়া কেন ইরাকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে ? তার মূলে রয়েছে ইরাক সংক্রান্ত মার্কিন সরকারের বর্তমান নীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ জনমতের অভিযোগ এবং ইরাকে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি । সর্বপ্রথমে মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক পার্টির কাছে রিপাবলিকান পার্টি হেরে যাওয়ায় ইরাকের বিষয়ে বুশ সরকারের নীতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে । মার্কিন সরকারের কট্টর পন্থী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন । কংগ্রেসের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর বুশ সরকারের ইরাক বিষয়ক নীতিও বাধ্যতামূলকভাবে পরিবর্তন করা হচ্ছে । ইরাকে স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার জন্য সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস্ বেকার ও হ্যানরী কিসিঞ্জারসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনীতিকগণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য সিরিয়া ও ইরানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । এর আগে ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও বারংবার সিরিয়া ও ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহবানও জানিয়েছেন , যাতে ইরাকের ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষ রোধ করা যায় ।
অন্য দিকে ইরাকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণহীন বিপদজনক অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে , সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে এবং অপহরণ ও হত্যালীলা প্রায়ই ঘটেছে । ২০ নভেম্বর ইরাকের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে অপহৃত হয়েছে এবং তাদের হত্যা করা হয়েছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে ইরাকের মুসলমানদের মধ্যে সুন্নী ও শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে প্রভাবশালী সিরিয়া ও ইরান নিঃসন্দেহে ইরাকের স্থিতিশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ রোধ করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । এই কারণে ইরাকের প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি এ সপ্তাহের শেষ দিকে তেহরানে অনুষ্ঠিতব্য ইরান , ইরাক ও সিরিয়ার শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদি নেজাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
|