এপেকের চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক অধিবেশন দু'দিন চলার পর শেষ হয়েছে । ১৯ নভেম্বর হ্যানয়ে 'হ্যানয় ঘোষণা' প্রকাশিত হয়েছে । এপেকের চীনের সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ওয়াং ইয়্যু সেন সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন , এই অধিবেশন যেমন এপেকের দ্রুত ও সুষ্ঠু বিকাশ , তেমনি এই অঞ্চল ও বিশ্বের কঠিন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য অনুকূল হবে । তিনি বলেছেন , এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও অধিবেশনে সুষম এপেক গড়ে তোলার যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন , তা বহু সংখ্যক সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছে । হু চিন থাও'র প্রস্তাবকে এপেকের সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার লক্ষ্য বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং অধিবেশনের প্রধান দলিলপত্র- হ্যানয় ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।
ওয়াং ইয়্যু সেন মনে করেন যে , সুষম এপেক গড়ে তোলা সংক্রান্ত প্রস্তাব যুগের বিকাশের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ । এতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যাপক জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে ।
এপেকের পদ্ধতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এর রকমারিতা ও নমনীয়তা মানতে হবে । স্বতন্ত্র ও স্বেচ্ছায় সংলাপের ভিত্তিতে নতুন পরিস্থিতিতে পারস্পরিক আস্থাভিত্তিক নতুন নিরাপত্তা বোধ তৈরী করতে হবে । ঠান্ডা যুদ্ধের ধারণা পরিত্যাগ করা হলেই ধীরে ধীরে একটি সুষম এপেক গড়ে তোলা সম্ভব হবে এবং একটি সুষম এপেক গড়ে তুললেই কেবল নানা রকম বিরোধের নিরসন করা যাবে , অঐতিহ্যিক নিরাপত্তা ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাবে , শান্তি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যাবে এবং যৌথ সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা যাবে । এই ক্ষেত্রে তিনি আগের চেয়ে আরো আনেক বেশী আশাবাদী । তিনি মনে করেন যে , এটা সারা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জনগণের একই অভিন্ন আশা।
এবারের শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও সুষম এপেক গড়ে তোলার জন্য নতুন প্রাণবন্ত শক্তি যুগিয়েছে । চীন-মার্কিন নেতৃবৃন্দের বৈঠক এর মধ্যে একটি । ওয়াং ইয়্যু সেন মনে করেন যে , চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের বৈঠকে ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হয়েছে । তা গত কয়েক বছরে দু'দেশের সম্পর্কের সুষ্ঠু বিকাশের পরিচায়ক ।
গত এপেকের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরবর্তী এক বছরে চীন-মার্কিন সম্পর্ক সুষ্ঠু ও সক্রিয় বিকাশের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে । বিশেষ করে নেতৃবৃন্দ বহু বার বৈঠকের মাধ্যমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতৈক্য পৌঁছেছেন । দু'দেশের অভিন্ন স্বার্থও কিছুটা বেড়ে গেছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের সহযোগিতার ক্ষেত্র , অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের কৌশলগত সংলাপের সম্প্রসারণসহ এবং সামরিক ক্ষেত্রের যৌথ মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে । বিশেষ করে চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ জনমতের ইতিবাচক ও সঠিক মন্তব্য বিপুলমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে । যুক্তরাষ্ট্রে চীনের তথাকথিত হুমকীর অস্তিত্ব সম্পর্কিত তত্ত্ব ধাপে ধাপে হ্রাস পাচ্ছে ।
চীন ও জাপানের নেতৃবৃন্দের বৈঠকেও ইতিবাচক তাত্পর্য সৃষ্টি হয়েছে । ওয়াং ইয়্যু সেন মনে করেন যে , আবে সিনজো জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হওয়ার পরবর্তী এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও'র সঙ্গে দু'বার বৈঠক করেছেন । এই বৈঠক ইতিবাচক ও তাত্পর্যসম্পন্ন । এবারের বৈঠকে সঠিক কক্ষপথে ফিরে যাওয়া দু'দেশের সম্পর্ক নতুনভাবে প্রসারিত হয়েছে । যদিও জাপানের কিছুসংখ্যক সংবাদ মাধ্যম চীন , জাপান ও যুক্তরাষ্ট তথাকথিত এপেকে নেতৃত্বের ক্ষমতা নিয়ে প্রতিদ্বিন্দ্বিতা চালাবে বলে যে খবর প্রকাশ করেছে , কিন্তু চীন আসলে কখনো নেতৃত্বের ক্ষমতা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালায় নি । চীনের মন্তব্য ও তত্পরতায় সুষম এপেক গড়ে তোলা এবং ঠান্ডা যুদ্ধের ধারণা পরিত্যাগ করার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে ।
|