সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে বিশেষভাবে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। চীনের আরো বেশি ছাত্রছাত্রী এখন উচ্চ শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে চীনের বেশী সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। তবে অনেক ছাত্রছাত্রী পেশাগত শিক্ষা ও বিশেষ দক্ষতার প্রশিক্ষণ নিতে চায় না। তাই চীনের কিছু এলাকায় কারিগরদের -অভাব দেখা দেয়। এর জন্য চীন সরকার বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে পেশাগত শিক্ষার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়। বর্তমানে পেশাগত শিক্ষা ক্ষেত্রে চীনাদের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে।
১৮ বছর বয়সী চিয়াং চিয়া চি পেইচিং তথ্য ও ব্যবস্থাপনা স্কুলে পড়াশুনা করেন। এই স্কুল হচ্ছে কম্পিউটার বিষয়ক একটি মাধ্যমিক পেশাগত স্কুল। চিয়াং চিয়া চি বলেছেন, ছোট বেলা থেকেই তিনি চিত্রকলা পছন্দ করেন। ২০০৫ সালে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের লেখা শেষ করার পর তিনি এই স্কুলের কম্পিউটার চিত্রকলা ডিজাইন বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে ও সামাজিক সংগঠনের অনুশীলন কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী এবং ইতোমধ্যেই তিনি কিছু অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন। তিনি বলেছেন,
আমি মনে করি, আগামী দিনগুলোতে এই বিভাগের জ্ঞান কাজে লাগতে পারে। সম্প্রতি স্কুলের শিক্ষক আমাদের কাছে "সভ্যতার অলিম্পিক" নামক অ্যানিমেশন ছবি তৈরী করার কথা বলেছেন। আমাদের তৈরী অ্যানিমশন ছবির মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ ছবি বেছে নিয়ে টেলিভিশনে প্রচার করা হবে। আমি মনে করি, আমি শ্রেষ্ঠ অ্যানিমশন ছবি তৈরী করতে পারবো।
জানা গেছে, আগে পেইচিং তথ্য ও ব্যবস্থাপনা স্কুলের মতো পেশাগত স্কুলগুলোকে চীনের পিতা মাতারা পছন্দ করতেন না। তাঁরা ভাবতেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এবং স্নাতক হওয়ার পর সরকারী কর্মকর্তা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী হওয়া উচিত। তাঁরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের পেশাগত শিক্ষা দিতে চাইতেন না।
আগে চিয়াং চিয়া চিও একই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ছিলেন। তিনি বলেছেন, পেশাগত শিক্ষা স্কুলে ভর্তি হবার সময় তাঁর বাবা ও মা তাঁর সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে চান নি এবং তাঁর ভতিষ্যত সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে এক বছরের মধ্যে তার লেখাপড়ার সাফল্য দেখে বাবা মা বিস্মিত হয়েছেন। আরো আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে তাঁর স্কুলের স্নাতক ছাত্রছাত্রীরা কোর্স শেষ করার পর সহজে চাকরি পেয়েছেন এবং ভালো উপার্জন করেন।
চীনের শিক্ষামন্ত্রী চৌ চির কথায় অনেক পিতা মাতার মতের পরিবর্তন হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে চীনে পেশাগত শিক্ষা স্কুলের মোট সংখ্যা ১৬ হাজার। প্রত্যেক বছরে দশ লাখেরও ছাত্রছাত্রী স্নাতক হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেশাগত শিক্ষা স্কুলের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের হার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের গড়পরতা হারের চেয়ে বেশি । চৌ চি বলেছেন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেশাগত শিক্ষা স্কুলের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের হার বাড়ছে। পেশাগত শিক্ষা স্কুলের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা এখন সরবরাহের চেয়ে বেশী। বহু পেশাগত স্কুলের উপাচার্যরা বলেছেন, কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগামী বছরের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের তাদের সেখানে যাওয়ার জন্যে তাদের কাছে আবেদন করেছে।
চীন সরকার এখন সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে, উন্নত প্রযুক্তি বিদেশ থেকে আমদানি করা যায়। আধুনিক পরিচালনার উপায় বিদেশ থেকে শিখে যায়। তবে বিপুল সংখ্যক কারিগরকে আমদানি করা যায় না, শুধু পেশাগত শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
তার জন্য চীনের সরকার ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়ে পেশাগত শিক্ষাকে উন্নত করছে। পরবর্তী পাঁচ বছরে চীন সরকার ১০ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করে পেশাগত শিক্ষার বুনিয়াদী ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ জোরদার করবে। এই ক্ষেত্রে চীন আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও ব্যাপকভাবে চালাচ্ছে এবং বিদেশে পেশাগত শিক্ষার শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা শিখছে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয় চলতি বছর থেকে প্রত্যেক বছর ৮০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করে মাধ্যমিক পেশাগত শিক্ষা স্কুলকে সহায়তা দেবে, যাতে পড়াশুনার ক্ষেত্রে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে মাধ্যমিক পেশাগত শিক্ষা স্কুলগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে সরকারী বৃত্তি, পেশাগত বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা চালু হবে। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মাদাম উ চি তি এর ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
কেন্দ্রীয় সরকারের ৮০ কোটি ইউয়ানের বরাদ্দে এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার এবং সমাজের অর্থানুকুল্যে চীনের বিভিন্ন পেশাগত শিক্ষা স্কুলের ২০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন ভাবে সাহায্য পাবে। এটি মাধ্যমিক পেশাগত শিক্ষা স্কুলের ভর্তির সংখ্যা বাড়ানো এবং পেশাগত শিক্ষার সুষ্ঠু উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
|