v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-17 19:30:52    
সুন্দরী মেয়ে ইয়াংইয়াংয়ের বাসনা

cri

    এ বছরের ১৮ মে এক মধ্যবয়সী পুরুষ হার্বিন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন । তার হাতে রক্তের থাম-প্রিন্টসম্পন্ন একটি চিঠি ধরা আছে । তিনি হার্বিন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার বিভাগে এসে বিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের সামনে নিজের মেয়ের চিঠি পৌঁছে দেন । কি হল ? কেন মধ্যবয়সী লোকটির হাতে রক্তাক্ত চিঠি রয়েছে । তার মেয়ের কি হয়েছে?

    চিঠিটা লিখেছে ইয়াং ইয়াং নামে এক সুন্দরী মেয়ে । সে হেইলুংচিয়াং প্রদেশের থিয়েলি শহরে থাকে । তার বয়স ১৮ বছর । এ বছরের শুরুতেই ইয়াং ইয়াং এম-২ লিউকেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে । চিঠিতে ইয়াং ইয়াং লিখেছে, তার তিনটা আশা আছে । সমাজের অনেক দরীদ্র মানুষকে সাহায্য করার জন্যে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে , মৃত্যুর পর সে নিজের দেহ ও অন্ত্র প্রয়োজনীয় রোগীদের ও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করবে এবং চিরকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যাওয়া একজন ছাত্রী হওয়ার জন্যে শিক্ষার নমুনা হিসেবে নিজের হাড় বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করবে । তার তৃতীয় আশা , বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দরা তাকে হার্বিন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য দেখার , তাকে নার্স ক্লাসের একদিনের ছাত্রী হওয়ার এবং এক ছবি তোলার সুযোগ দেয়া ।

    ইয়াংইয়াংয়ের মা ও নানা দুজনই ডাক্তার । তাই ছোটবেলা থেকেই ইয়াংইয়াং সাদা কাপড় পরা নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছে । ২০০৪ সালে ইয়াংইয়াং সুইহুয়া শহরের নার্সিং কলেজে ভর্তি হয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে পদার্পন করেছে । নার্সিং অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ কথাটা যদিও নানা তাকে বলেছিলেন তবে ইয়াংইয়াং নিজের এই ইচ্ছার জন্য কখনো অনুতাপ হয়নি । ইয়াংইয়াং লেখাপড়ায় অত্যন্ত ভাল , তাই সম্ভবত বিনা পরীক্ষায়ই নার্সিং কলেজ সরাসরি তাকে হার্বিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবে । হার্বিন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্ন দেখা তার এক জায়গা । কিন্তু তার এই স্বপ্ন হঠাত ভেঙ্গে গেছে ।

    বেশ কয়েক বার রাসায়নিক থেরাপি চিকিত্সা গ্রহণ করা এবং মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করার পর ইয়াংইয়াং গভীরভাবে জীবনের তাত্পর্য বুঝেছে । ইয়াংইয়াং মনোযোগের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করার পর এ বছরের এপ্রিল মাসে বাবামাকে নিজের মনে কথাগুলো বললো । মরে যাওয়ার পর সে বিনাসুদে নিজের হাড় ও অন্ত্র দান করবে । বাবা মা তার এই কথা গ্রহণ করতে পারেন না । কিন্তু বাবা মার অজান্তে ইয়াংইয়াং নিজের মৃতদেহ দান করা সংক্রান্ত রক্তের থাম-প্রিন্টসম্পন্ন এক পত্র লিখেছে ।

    ইয়াংইয়াংয়ের আচরণ সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । এক সান্ধ্য দৈনিকের সংবাদদাতা চিন শৌছেনের লেখা " ভালবাসাকে পৃথিবীতে রেখে যাওয়া " শিরোনামে এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় । শিগ্গিরই বেশকয়েকটি পত্রপত্রিকায়ও প্রবন্ধটি পুনঃপ্রকাশিত হয় । ১৮ বছরবয়সী মেয়েটির সুন্দর ও নিষ্ঠুর জীবন-উইল লোকদের মুগ্ধ করেছে ।

    ১৫ জুন বাবা মার সাহচর্যে ইয়াংইয়াং হার্বিন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাভবনের এক নম্বর ক্লাস-রুমে আসে । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইয়াংইয়াংয়ের জন্যে এক বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন । এখানে ইয়াংইয়াং সাধারণ বিভাগ ,নার্স বিভাগ ও মুখ বিভাগের একশ'রও বেশি ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে ক্লাস করবে । ইয়াংইয়াংয়ের অবস্থা স্থিতিশীল হয় বটে , কিন্তু তিনবার রাসায়নিক থেরাপি চিকিত্সার পর তার শরীর এখন অত্যন্ত দুর্বল । তাই ডাক্তার তাকে মাত্র আধা ঘন্টার জন্য ক্লাস করার অনুমোদন দিয়েছেন। ক্লাস শেষে ইয়াংইয়াং ক্লাস-রুম থেকে বেরুলে বৃষ্টি থেমে যায় এবং আকাশের সূর্যালোক তার গায়ে ছড়িয়ে পড়ে । হার্বিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বাগানে ইয়াংইয়াং মাটিতে পড়ে যাওয়া কয়েকটি কুল দেখতে পায় । সে আনন্দের সঙ্গে মাটি থেকে কয়েক কুল তুলে নিল । সে বলল, আমি কুলগুলো বাড়িতে নিয়ে যাব এবং নিজের আগামীদিনের সুখশান্তির জন্যে প্রার্থনা করব ।

    নিয়ম অনুযায়ী স্বেচ্ছায় দেহ দানের চুক্তি আইনগত স্বীকৃতি পাওয়ার পর কার্যকর হতে পারে । কিন্তু এ পর্যন্ত ইয়াংইয়াং মোট ৪বার রাসায়নিক থেরাপি গ্রহণ করেছে । শারিরীক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে হাসপাতাল থেকে বেরুতে দেয়া যাবে না । ইয়াংইয়াংয়ের বিশেষ অবস্থা জানার পর হার্বিন শহরের নোট্যারি অফিসের কর্মচারীরা হাসপাতালে এসে ইয়াংইয়াংয়ের জন্যে নোট্যারির কাজ করে ফেলেছেন । নোট্যারি পাওয়ার পর ইয়াংইয়াংয়ের বাবা মেয়ের স্বপ্নভরপুর দলিলটি নিয়ে আরেকবার হার্বিনের স্বেচ্ছায় মৃতদেহ দানগ্রহণ কেন্দ্রে আসেন । তিনি গম্ভীরভাবে মেয়ের পক্ষ থেকে আইনগত ক্ষমতাপূর্ণ চুক্তিটি কেন্দ্রটির পরিচালকের হাতে দান করেছেন ।

    ইয়াংইয়াংয়ের এই আচরণে গ্রহণ কেন্দ্রের প্রত্যেক কর্মচারী অত্যন্ত মুগ্ধ হন । কারণ এ পর্যন্ত মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কাজ বা চিকিত্সাবিদ্যার গবেষণায় বিপুল পরিমাণের মৃতদেহ-নমুনা দরকার । বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে স্বেচ্ছায় দান করা মৃতদেহ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কাজ ও গবেষণার প্রয়োজন পুরোপুরি মেটাতে পারে । কিন্তু চীন দেশে ঐতিহ্যিক মনোভাব ও রীতিনীতির প্রভাবে স্বেচ্ছায় মৃতদেহ দানকারী লোকসংখ্যা অতি নগন্য অর্থাত প্রয়োজনের ১০ শতাংশের চেয়েও কম । মেয়ের আচরণ দেখে ইয়াংইয়াংয়ের বাবা-মার অস্থির মন ভীষণভাবে আলোড়িত হয় । কিছু দিন পর স্বামী-স্ত্রী দুজন স্বেচ্ছায় নিজের চোখের কর্নিয়া ও রক্ত তৈরীর সেল দান করার সিদ্ধান্ত নিলেন । আনন্দের ব্যাপার এই যে , কিছু দিন আগে ইয়াংইয়াংয়ের দান করা রক্তের সেলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এমন সেল পাওয়া গেছে । এক দিন নিজ সাদা পোশাক পরা নার্স হবে বলে ইয়াংইয়াং আশা করে এবং সেই দিন তাড়াতাড়ি আসবে বলে ইয়াংইয়াং অপেক্ষায় রয়েছে ।