v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-16 22:34:29    
চীন-আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ(ছবি)

cri

 সম্প্রতি আফ্রিকার ৪৮টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে সম্মিলিত হয়ে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও চীন সরকারের পক্ষ থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর উন্নয়ন সংক্রান্ত আটটি নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করেছেন। এর ভিত্তিতে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও চীন-আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এতে চীন ও আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

 সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও আফ্রিকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এখন চীন আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চীন আফ্রিকায় মোট ৬২৭ কোটি মার্কিন ডলার পুঁজি বিনিয়োগ করেছে এবং ৮০০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। এ বছর চীন ও আফ্রিকার বাণিজ্যিক মূল্য ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি হবে। তা ছাড়া , চীন সরকার সবসময় রাজনৈতিক শর্তবিহীনভাবে আফ্রিকার দেশগুলোকে আন্তরিক ও নিঃস্বার্থভাবে আর্থিক সাহায্য করে, আফ্রিকার দেশগুলোর বুনিয়াদী ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে এবং তার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে আসছে।

 এবার চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে অনুষ্ঠিত চীন-আফ্রিকার নেতৃবৃন্দ এবং শিল্প ও বাণিজ্য মহলের প্রতিনিধিদের সংলাপ সম্মেলন এবং দ্বিতীয় চীন-আফ্রিকার শিল্পপতি সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেছেন, "চীন ও আফ্রিকার ধারাবাহিকভাবে বাণিজ্যিক কাঠামো সুবিন্যস্ত করে সুপ্ত শক্তি অন্বেষণ করা উচিত , যাতে ২০১০ সাল পর্যন্ত চীন ও আফ্রিকার বাণিজ্যিক মূল্য ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানো যায়। চীন সরকার চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আফ্রিকায় গিয়ে পুঁজি বিনিয়োগ করা এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, উপযুক্ত প্রযুক্তি আর পরিচালনার অভিজ্ঞতা হস্তান্তর করার ব্যাপারে উত্সাহ দেয়। এর পাশাপাশি আফ্রিকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনে এসে পুঁজি বিনিয়োগ করার স্বাগত জানায়। চীন নিজের বিকাশের মান অনুযায়ী ধাপে ধাপে আফ্রিকার দেশগুলোকে দেয়া সাহায্যের পরিমাণ সম্প্রসারণ করবে, আফ্রিকার সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।"

 ওয়েন চিয়া পাও বলেছেন, চীন অব্যাহতভাবে বাজার উন্মুক্ত করবে, আফ্রিকার সবচেয়ে অনুন্নত দেশের অধিকাংশ পণ্যদ্রব্য চীনে রপ্তানীর জন্য শুল্কমুক্ত সুযোগ দেবে এবং আফ্রিকার পণ্যদ্রব্যের আমদানী বাড়াবে। কৃষি, দারিদ্র্য বিমোচন, চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষাসহ স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত ক্ষেত্রে আফ্রিকাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেবে। তা ছাড়া, চীন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পর্যটন, অর্থ, টেলিযোগাযোগসহ নানা পরিসেবা ক্ষেত্রের সহযোগিতাকে জোরদার করবে এবং চীন ও আফ্রিকার বাণিজ্যের ভারসাম্য ও সমন্বয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।

 চীন সরকার সবসময় পারস্পরিক উপকারিতা ও সুবিধাজনক ভিত্তিতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদান করে। দু'পক্ষের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে। এটা আফ্রিকার বিভিন্ন সরকার এবং জনগণের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের যৌথ প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ঈথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেলেস জেনাভি বলেছেন, বিশ্বের উন্নয়ন আফ্রিকা আর চীনকে ছাড়া হবে না। আফ্রিকা ও চীনের সহযোগিতা দু'পক্ষের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তিনি বলেছেন, "আমি মনে করি, আমাদের কঠিন দায়িত্ব আছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান মহলকে আরো সুষ্ঠুভাবে সহযোগিতা করা, বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার ফলে দু'পক্ষের জনগণের জন্য কল্যাণকর সৃষ্টির চেষ্টায় পরিবেশের উন্নতি হবে। চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের এখানকার বিরাট বাণিজ্যিক সুযোগকে উপলব্ধি করা উচিত। যদিও আফ্রিকা সমস্যা মোকাবেলা করছে , তবে সেখানেও বিরাট সুপ্ত শক্তি রয়েছে। পৃথিবীতে আফ্রিকাকে বাদ দেয়া যায় না। আফ্রিকায় পুঁজি বিনিয়োগ এবং ব্যবসার সুযোগ স্পষ্ট। চীন ও আফ্রিকা পরস্পরের প্রাধান্য কাজে লাগালে সকলের কল্যাণ বাস্তবায়িত হবে।"

 সহযোগিতার আকার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে চীন ও আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাঠামোও ধারাবাহিকভাবে সুবিন্যস্ত হয়েছে। এক দিকে, আফ্রিকায় চীনের রপ্তানী পণ্যের মধ্যে যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সামগ্রি এবং হাই টেক পণ্যের পরিমাণ বেড়েছে; অন্য দিকে, আফ্রিকার সবচেয়ে অনুন্নত দেশের উত্পাদিত পণ্যের ওপর চীন শুল্কমুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে, এর ফলে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আমদানী বাড়বে।

 সরকারের উদ্যোগে চীন আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শিল্পপতিদের মধ্যকার বিনিময় আরো গভীরতর হয়েছে। ২০০৩ সালের নভেম্বরে ঈথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিসআবাবায় অনুষ্ঠিত প্রথম চীন-আফ্রিকা শিল্পপতি সম্মেলনে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারও বেশি মূল্যের বিভিন্ন ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটা চীন ও আফ্রিকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করেছে। সদ্যসমাপ্ত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের পেইচিং শীর্ষ সম্মেলনে চীন ও আফ্রিকার ১৫০০ জন শিল্পপতি দ্বিতীয় চীন-আফ্রিকা শিল্পপতি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। নাইজারের বাণিজ্য , শিল্প ও ব্যক্তিমালিকানা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী হাবি মাহামাদু সালিসৌ বলেছেন, "নাইজার আর চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে টেলিযোগাযোগ। চীনের চৌসিং কোম্পানি নাইজারে কাজ করছে। পেইচিং শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে আমরা নাইজারে পুঁজি বিনিয়োগ এবং কারখানা স্থাপন নিয়ে চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবো। এর জন্য নাইজার সরকার সক্রিয়ভাবে শর্ত সৃষ্টি করবে, যাতে নাইজার আর চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আরো ভালোভাবে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা করতে পারে।"

 দ্বিতীয় চীন-আফ্রিকা শিল্পপতি সম্মেলনে দু'পক্ষের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ১৬টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মোট মূল্য প্রায় ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার। তা বুনিয়াদী ব্যবস্থার নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির রপ্তানী, ঔষধ এবং অর্থসহ বহু ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

 চীন ও আফ্রিকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেলে চীন ও আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময় আফ্রিকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।