v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-15 17:05:02    
চীনের সিছুয়ান প্রদেশের খরাকবলিত একালাগুলোতে উত্পাদন ও জীবনযাত্রা পুনপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

cri
    এ বছরের গ্রীষ্মকালের শুরু থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশে ভয়ংকর খরা দেখা দিয়েছে । সময় , ব্যাপকতা ও প্রবলতার দিক থেকে গত ৫৫ বছরে এটি ছিল সবচেয়ে গুরুতর বিপর্যয় । খরার দরুণ সি ছুয়ান প্রদেশের উত্পাদন ও জীবনযাত্রা দারুণভাবে ব্যহত হয়েছে । এক সরকারী পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , সি ছুয়ান প্রদেশের ১০৮টি জেলা খরাকবলিত হয়েছে , প্রায় ১ কোটি লোকের ও ৫৮ লাখেরও বেশি গবাদি পশুর মধ্যে খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে । ২০ লাখেরও বেশি হেক্টর জমিতে খরা দেখা দিয়েছে । বর্ষা আসার সংগে সংগে খরা দূর হয়েছে । খরাকবলিত এলাকাগুলোর জনসাধারণের উত্পাদন ও জীবনযাত্রার অবস্থা এখন কি রকম ? আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি পুর্ব সি ছুয়ান প্রদেশের নান ছুং শহরে গিয়েছেন ।

    সি ছুয়ান প্রদেশের নান ছুং শহরের কুয়ান ইন ইয়ান গ্রাম এবার সবচেয়ে গুরুতর খরার শিকার হয়েছে । এ গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত একটি ছোট পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালে শুধু হলুদ রং দেখা যায় । তাতে প্রমাণিত হয় যে, এখানে ভয়ানক খরা হয়েছে । অথচ জেলা কর্তৃপক্ষের সংগঠনে কৃষকরা এখন শরত্কালীন শস্য ও শাক-সব্জির চাষ করছেন । ক্ষেত-খামারে কৃষকরা কৃষির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন । একজন গ্রামবাসী ফান ইং কুয়াং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , শরত্কালীন ফসলের ভালো ফলনের জন্যে সময়মত বীজ বপন করতে হবে । তিনি বলেছেন ,

    এখন আমরা আলু ও লেটুসের বীজ বপন করছি । বসন্ত কালের ফসল সব নষ্ট হয়ে গেছে । তার ক্ষতি পূরণের জন্যে সময়মত শরত্কালীন ফসলের ফলন নিশ্চিত করতে হবে ।

    নিম্ন পাহাড়ী এলাকার খরা আবহায়ার প্রভাবে নান ছুংয়ে দশ বছরের মধ্যে নয় বছরই খরা দেখা দেয় । এ বছরের সবচেয়ে ভয়ংকর খরা চলাকালে স্থানীয় জনসাধারণের কৃষি উত্পাদন গুরুত রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । কৃষক ফাং ইয়ু সুর বয়স ৫০ বছর । তার চাষ করা শস্যের উত্পাদন ৮০ শতাংশ কমে গেছে এবং আলু ও ভূট্টা প্রায় সবই নষ্ট হয়ে গেছে । তবে তাদের প্রয়োজনের সময় সরকার পদক্ষেপ নিয়ে উত্কৃষ্ট বীক ও রাসায়নিক সারের মত উত্পাদন উপকরণ বিনাপয়সায় তাদের হাতে পৌছে দিয়েছে । এতে তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    শরত্কালে স্থানীয় সরকার আমাদের কাছে আলু , মূলা ও বাঁধাকপির বীজ পাঠিয়ে দিয়েছে । সরকার আমাদের অনেক সমর্থন দিয়েছে । সরকার আমাদের জমি আবাদের ব্যবস্থা করেছে । এর জন্যে সে আমাদের কাছ থেকে এক পয়সাও নেয় নি । সরকার সত্যিই আমাদের প্রতি যত্নবান ।

    একখন্ড ধান ক্ষেতের পাশে আমাদের সংবাদদাতা একজন চশমাধারী পুরুষকে দেখলেন । তিনি ধানক্ষেতে প্রবেশ করছিলেন । একজন গ্রামবাসী আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , তিনি স্থানীয় মহকুমার কর্তা। নাম তার হো খুয়েন । সেখানে খরা দেখা দেয়ার পর তিনি অনেকবার দুর্গত এলাকায় গিয়েছেন । অতি ক্লান্তিতে তিনি ক্ষীণ হয়ে গেছেন ।

    হো খুয়েন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উত্পাদন আবার শুরু করার ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সাহায্য কারা জন্যে জেলা ও মহকুমা কতৃপক্ষ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে । তিনি বলেন ,

    আমরা জোরেসোরে ক্ষেতের ধান কেটে যাচ্ছি । তারপর ধান ক্ষেতের আদ্রতার সদ্ব্যাবহার করে সেখানে শরত্কালীন শস্য ও শাক-সব্জির চাষ করবো যাতে খরাজনিত ক্ষতি পূরণ করা যায় । তাছাড়া কৃষকরা মত্স চাষের কাজও চালু করতে পারবেন । শাক-সব্জি বাজারে বিক্রি করলে কৃষকরা কিছু টাকা উপার্জন করতে পারবেন । এভাবে কৃষকদের ক্ষতিও কিছু লাঘব হবে ।

    হো খুয়েন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , ক্ষেত-খামারে কৃষকদের পরিশ্রম লাঘবের জন্যে জেলা সরকার তাদের জন্যে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনে জমি আবাদ করেছে এবং কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত ভর্তুকিও দিয়েছে । জেলা সরকার বিনা খরচে শরত্কালীন শাক-সব্জির বীজ কৃষকদের হাতে পৌছে দিয়েছে । তাছাড়া সি ছুয়ান প্রাদেশিক সরকার দুর্গত প্রতি হেক্টর জমির জন্যে ৭৫০ ইউয়ান ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।

    এসব কাজ করার সংগে সংগে কুয়া খনন করে লোকজন ও গবাদি পশুদের খাবার পানির অভাবের সমস্যা সমাধানের তত্পরতাও সি ছুয়ান প্রদেশের খরাকবলিত এলাকাগুলোতে পুরোদ্যমে চলছে ।

    নান ছুং শহরের কাও পিং এলাকার কথা ধরা যাক । এখানে বহু গ্রাম পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত । এসব জায়গায় কুয়া খনন করা খুব কঠিন । এ এলাকার কর্তা হোয়াং সিয়াও মিং গত কয়েক দিন কুয়া খনন দলকে সংগে নিয়ে পাহাড়ে কুয়া খননের কাজে ব্যস্ত ছিলেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    প্রথমে আমরা মানুষ ও গবাদি পশুর খাবার পানির অভাবের সমস্যা সমাধান করতে শুরু করেছি । আমরা ৫০টি কুয়া খনন যন্ত্র ব্যবহার করেছি । আমরা ৩ হাজার কুয়া খনন করতে সক্ষম হয়েছি । প্রতিটি কুয়া থেকে পানি বেরিয়ে এসেছে ।

    এমন ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখেও দুর্গত এলাকাগুলোর জনসাধারণ বিপর্যয়কে জয় করা সম্পর্কে পুরোপুরিই আস্থাশীল । গ্রামবাসী ফান ইয়ু সু বলেছেন , এত বিরাট দুর্যোগের সামনে অতীতে সরকারের কাছে কৃষি কর দেয়ার জন্যে চিন্তিত হতাম । কিন্তু এখন খুবই নিশ্চিন্ত । তিনি বলেছেন ,

    এর আগে খরা দেখা দিলে আমাদের মনে ভয় হতো । এ বছর সরকার ভালো নীতি গ্রহণ করেছে । জমি চাষ করলে সরকার আমাদের ভর্তুকি দেয় । বিপর্যয়ের দিনে আমরা কেন আতংকিত নই । সরকার আমাদের জন্যে সঠিক পথ নির্দেশিত করেছে । তাই আমাদের কোনো ভয় নেই ।

    ফান ইয়ু সুর প্রতিবেশী ফান ইয়ু ফেন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , সরকার আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ফি কমিয়ে দিয়েছে । এ বছর আমার মেয়ে একবারই ১৪০ ইউয়ান কম ফি দিয়েছে । তার ওপর আমার স্বামী বাইরে চাকরি করে কিছু উপার্জন করতে পারেন । সরকার আবার আমাদের কিছু কৃষি ভর্তুকি দেয় । কাজেই এ বছর ক্ষেতের ফসল নষ্ট হলেও আমার পরিবারের জীবনযাত্রা ও মেয়েটির পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো সমস্যা হবে না ।