সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, মিসরের পিরামিড , আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে পরিচিত কেনিয়ার কিলিমানজারো পর্বত, দক্ষিণ আফ্রিকার সোনার খনি ও হীরক এবং বিস্তীর্ণ আফ্রিকা মহাদেশ চুম্বকের মতো আফ্রিকা ভ্রমণে চীনাদের আকর্ষণ করছে । আফ্রিকা চীনাদের বিদেশ ভ্রমণের একটি নতুন আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে । তবে আজের "বিজ্ঞান ও জীবন" অনুষ্ঠানে আমরা একটি বিশেষ খবর নিয়ে আলোচনা করবো: ৪০ বছর আগে, আফ্রিকা মহাদেশে একটি বিশেষ চীনা দল ছিল । আফ্রিকার সুন্দর দৃশ্যের আকর্ষণে নয়, তারা আফ্রিকার জনগণের চিকিত্সা সেরা প্রদানের জন্যে সেখানে গিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের সঙ্গে কাজ করেছেন। এটা হচ্ছে আফ্রিকায় চীনের চিকিত্সক সেরা দল ।
ইয়ে ফাং একজন ডাক্তার। তিনি চীনের শানতুং প্রদেশের জিনান শহরের অধিবাসী। তিন মাস আগে, তিনি আফ্রিকার সিচিলিসে এসে চীনা চিকিত্সক দলের একজন সদস্য হয়েছেন। এখন তিনি এখানে সর্বোচ্চ ব্যস্ততম ডাক্তারের মধ্যে একজন ।
" সিচিলিসে আমার কাজ এখন অনেক বেশি। প্রতিদিন এখানে রোগীদের সংখ্যা প্রায় ৬০ জনেরও বেশি হয় । তাই আমরা দুপুরে বিশ্রাম করি না, পৃথক পৃথকভাবে খাবার খেয়ে নিই। এতো বেশি কাজ করি কিন্তু আমাদের অনেক আনন্দ লাগে।"
ব্যস্ততা হচ্ছে এখানে চীনা চিকিত্সক দলের সব সদস্যদের একমাত্র অনুভব। চীনা ডাক্তারদের কোনো দুঃখ নেই। আফ্রিকার রোগীদের অবস্থা ভাল হলেই চীনা ডাক্তারদের অনেক ভাল লাগে। তান্জানিয়ায় চীনের চিকিত্সক দলের প্রধান ওয়াং ফেং বলেছেন:
" এখানে চিকিত্সা-সংক্রান্ত সাজ-সরঞ্জাম খুবই কম। ঔষধের অভাব এবং চিকিত্সার জন্য তেমন উন্নত কোনো প্রযুক্তি নেই। তাই চীনা ডাক্তাররা খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেন। সাধারণত কঠিন বা জটিল চিকিত্সার প্রয়োজন হলে চীনা ডাক্তাররা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নেন। আমরা প্রতিদিন হাসপাতালে থাকি । এমনকি এখানকার খাবারও এখানে খাই।"
চীনা চিকিত্সক দল স্থানীয় অধিবাসীদের জন্যে অনেক বেশী সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছে।
চীনা চিকিত্সাবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আকুপাংচার। প্রথমে একটি চিকিত্সা পদ্ধতি হিসেবে তা আবিস্কৃত হলেও পরে তা একটি বিজ্ঞানের রূপ নিয়েছে । আকুপাংচার বিজ্ঞানের লক্ষ্য হচ্ছে কৌশল। ক্লিনিকে যাতায়াত নিয়মিতকরণ আর তার মৌলিক তত্ত্ব রেকর্ড করা।
বর্তমান চীনে প্রায় ২০০০ চীনা চিকিত্সাবিদ্যার হাসপাতালের প্রত্যেকটিতেই আকুপাংচার বিভাগ খোলা হয়েছে। তা শরীরের নানা তন্ত্রে ব্যবহার করা যায়। আকুপাংচার গবেষণার অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া গেছে, বিশেষ করে তার নিয়মিত কর্মকান্ডে, ব্যথার উপশমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নয়নে এবং মানুষের শরীরের-নালীতে , আকু পয়েন্টে আর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ।
সিচিলিসের মিছেল একজন আকুপাংচার চিকিত্সা গ্রহণ করার রোগী। তিনি বলেন:
" আকুপাংচার গ্রহণ করার আগে আমি অনেক ঔষধ খেয়েছি। কিন্তু বেশি ভাল হয়নি। আমার বন্ধুর কাছে এই আকুপাংচার চিকিত্সার খোঁজ পেয়ে চিকিত্সা নিয়ে এখন আমার স্বাস্থ্য অনেকটা ভাল হয়েছে। প্রত্যেক মাসে একবার করে আকুপাংচার করি। খুবই চমত্কার।"
৪০ বছর ধরে, চীনা চিকিত্সক দলের মোট ৬০০ জনেরও বেশি রাষ্ট্রীয় পদক অর্জন করেছেন। চীনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও ছুয়ে আন বলেছেন :
" ১৯৬৩ সালে চীন সরকার আলজেরিয়ায় প্রথম একটি চিকিত্সক দল পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত আফ্রিকার মোট ৪৭টি দেশে প্রায় ১৫ হাজার ডাক্তার পাঠানো হয়েছে। হাজার হাজার চীনা ডাক্তারা নিজের দেশ এবং আত্মীয়স্বজন ত্যাগ করে আফ্রিকার জনগণের জন্যে পরিসেবা কাজ করছেন। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, আফ্রিকায় চীনা ডাক্তারা মোট ১৭ কোটি রোগীর চিকিত্সা করেছে। এবং আফ্রিকা জনগণের স্বাস্থ্যের উন্নয়নের উপর অনেক অবদান রাখছে। আফ্রিকার জনগণ তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে।"
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শহর বা গ্রামে চীনা চিকিত্সক দলের ডাক্তারগণ রয়েছেন । এখন প্রায় একহাজার চীনা ডাক্তার আফ্রিকা ৩৬টি দেশে রয়েছে ।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের ' বিজ্ঞান ও জীবন' এখানেই শেষ করছি । আমাদের সঙ্গে থেকে অনুষ্ঠানটি শোনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শ্রোতাবন্ধুরা 'বিজ্ঞান ও জীবন' অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত আমাদের অনুষ্ঠানকে আরো সমৃদ্ধ করবে। হ্যাঁ, শ্রোতাবন্ধুরা , তাহলে পরবর্তি আসরে আবার কথা হবে।
|