v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-13 13:41:26    
চীনের বিভিন্ন জাতির মধ্যে সোনা সেতু গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক উ কোও ছিন

cri

    ১৯৫৯ সালে উ কোও ছিন সাফল্যের সঙ্গে পেইচিংয়ের একটি মাধ্যমিক স্কুলে থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। উ কোও ছিনকে তাঁর শিক্ষক পেইচিং বিমান ও মহাকাশ বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উইগুর ভাষা বিভাগে ভর্তি হন।

    তাঁর ঘনিষ্ঠ শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরাও এই সিদ্ধান্তের কারণ বুঝতে পারেন না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ ছিল।

    ১৯৪১ সালে উ কোও ছিন সিনচিয়াংয়ের একটি সেনা পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। ছোট বেলায় তিনি উইগুর জাতির শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা ও লেখাপড়া করে কাটান। তবে তখন সীমান্ত অঞ্চলে চীনা ভাষা শিক্ষার স্কুল খুবই কম ছিল বলে তাঁর বাবা তাঁকে পেইচিংয়ে পাঠিয়ে দেন।

  যদিও তিনি পেইচিংয়ে লেখাপড়া করেন, তবুও তাঁর মন সিনচিয়াংয়ে পড়ে থাকে। ১৯৬৩ সালে উ কোও ছিন উলুমুজি শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর পামির মালভূমিতে গিয়ে শিক্ষকতা করার অনুরোধ জানান।

    উ কোও ছিন সিনচিয়াংয়ে বুনিয়াদী শিক্ষা প্রদানের সময়ে মনে করেন, সংখ্যালঘু জাতি অধ্যূষিত অঞ্চল থেকে হান জাতি অধ্যূষিত অঞ্চলের বুনিয়াদী শিক্ষা আলাদা। সাধারণ সাংস্কৃতিক শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি তিনি সংখ্যালঘু জাতির ছাত্রছাত্রীদের হান ভাষার মৌলিখ ভাষা শেখানোর ওপরও গুরুত্ব দেন। একই সঙ্গে তিনি হান জাতি ছাত্রছাত্রীদের কাছে উইগুর ভাষা শেখানোর ওপরও গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, বুনিয়াদী শিক্ষা হচ্ছে সিনচিয়াং থেকে সংখ্যালঘু জাতির সারা দেশে প্রবেশ করার ভিত্তি এবং বিভিন্ন জাতির মধ্যে আদানপ্রদানের ভিত্তি। বর্তমানে সিনচিয়াংয়ে "হান ভাষা ভালো শিখার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে" এই কথা সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে।

    বাস্তব শিক্ষা দেয়ার প্রক্রিয়ায় উ কোও ছিন কেবল তাঁর সঙ্গে উইগুর ও কোরকোছ জাতির ছাত্রছাত্রীদের হান ভাষা দিয়ে আলাপ করার অনুরোধ জানিয়েছেন তাই নয়, বরং বাড়িতেও হান ভাষা বলার জন্য উত্সাহ দিচ্ছেন। গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে তাঁর এই প্রস্তাব ছাত্রছাত্রীদের কষ্ট দিয়েছে। তবে তিনি এই প্রস্তাবে অটল ছিলেন।

    তিনি সিনচিয়াংয়ে বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করেছেন। নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের দশটিরও বেশি ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের হান ভাষা শেখানোর কাজ তিনি শুধু একাই করেন। প্রতি শ্রেণীর হান ভাষা শিক্ষার পদ্ধতি কিন্তু একই নয়। বিভিন্ন উপায়ে তাঁর হান ভাষা শেখানোর পদ্ধতি বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসা পেয়েছে। এসব ছাত্রছাত্রীরা শ্রেষ্ঠ সাফল্য অর্জন করেছে। এ সাফল্য দক্ষিণ সিনচিয়াংয়েরও প্রথম সারিতে রয়েছে।

  গত শতাব্দীর আশির দশকে উ কোও ছিন কাশি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করেন। ছাত্রছাত্রীদের হান ভাষার মান উন্নত করার পাশাপাশি সামাজিক পরিস্থিতি অনুয়ায়ী তিনি ছাত্রছাত্রীদের দেশপ্রেমিক শিক্ষাও প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি সিনচিয়াংয়ের ঐতিহাসিক তথ্য এবং সংখ্যালঘু জাতির প্রাচীন গ্রন্থের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এমনকি ছুটিতেও তিনি উইগুর, কোরকোছ জাতির কৃষি ও পশুপালন-প্রধান অঞ্চলে গিয়ে তদন্ত করেছেন, যাতে শিক্ষাদানের তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

    তাঁর উইগুর ভাষা ও হান ভাষার মান খুবই উচ্চ বলে বহু প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান তাঁকে চাকরি দিতে চায়। তবে উ কোও ছিন এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেছেন, তাঁর ইচ্ছা, সীমান্তে শেখানোর কাজ চালানো। তিনি আশা করেন, আরো বেশি সংখ্যালঘু জাতির ছাত্রছাত্রী হান ভাষা আয়ত্ত করতে পারবে এবং হান জাতির ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যালঘু জাতির ভাষা আয়ত্ত করতে পারবে, যাতে বিভিন্ন জাতির মধ্যে আদানপ্রদান ত্বরান্বিত করা যায়।

    ১৯৯৯ সালে ৬০ বছর বয়সী উ কোও ছিন সিনচিয়াংয়ে আবার ফিরে যান। দুটি স্কুলের আমন্ত্রণে তিনি উইগুর জাতি ছাত্রছাত্রীদের হান ভাষা শেখান এবং হান জাতির ছাত্রছাত্রীদের উইগুর ভাষা শেখান।

    ক্লাসের বাইরে তিনি ভাষা শেখানোর ওপর কয়েকটি উচ্চ মানসম্পন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন।

    গত মাসে কোরকোছ জাতির "মানাস" নামক বীরত্বের মহাকাব্য হান ভাষায় অনুবাদ বই সংশোধনের সময়ে শিক্ষক উ কো চিন মারা গেছেন। সিনচিয়াংয়ের বিখ্যাত গবেষণা পন্ডিত হো চি হোং বলেছেন, যদিও তিনি মারা গেছেন, তবুও তিনি বরাবরই সীমান্তের বিভিন্ন জাতির ছাত্রছাত্রীদের মনে বেঁচে থাকবেন।