৯ নভেম্বর চীনের রাশিয়া বর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠান পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে । রাশিয়া বর্ষ চলাকালে চীন ও রাশিয়া মোট দু শ'টিরও বেশি কর্মসূচী নিয়েছে । একটি প্রাথমিক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , চীনে রাশিয়া বর্ষের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারী লোকের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে । আমাদের সংবাদদাতা তিনজন চীনার সাক্ষাত্কার নিয়েছেন , সাক্ষাত্কারে তারা রাশিয়া বর্ষে চীন-রাশিয়া মৈত্রী সম্বন্ধে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন ।
৮৩বছর বয়সী ছাও ইং চীনের বিখ্যাত রাশিয়ার সাহিত্যকর্মের অনুবাদক । তার অনুদিত ' যুদ্ধ ও শান্তি' ও ' আনান ক্রিনিনা' প্রভৃতি রাশিয়ার সাহিত্য রচনা চীনা পাঠক ও রাশিয়ার মধ্যেব্যবধান কমিয়ে দিয়েছে । এ বছরের ৩১ মে ছাও ইং গোর্কি পদক পেয়েছেন । গোর্কি পদক গ্রহণের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ছাও ইং বলেছেন , সাংহাইয়ে রাশিয়ার কনসুলেট ভবনে পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে । রাশিয়ার লেখক সমিতির চেয়ারম্যান ও সাংহাইয়ে রাশিয়ার কনসাল জেনারেল আমাকে পদক দিয়েছেন । গত কয়েক দশকে আমি যে রাশিয়ার সাহিত্যকর্ম অনুবাদের চেষ্টা করেছি , অনুষ্ঠানে তারা তার গভীর মূল্যায়ন করেছেন ।তারা এ বছর থেকে গোর্কি স্বর্ণপদক বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। গোটা পৃথিবীতে আমিই প্রথম এই পদক জয় পেয়েছি ।
রাও পিনপিনের পক্ষে রাশিয়া বর্ষে চীন -রাশিয়ার সাংবাদিকদের মৈত্রী যাত্রা তার মনে সবচেয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে । রাও পিন পিন বলেছেন , সাংবাদিক হিসেবে চীন-রাশিয়া মৈত্রী যাত্রা হলো আমার প্রথম বিদেশ যাত্রা । ৪২ দিনে আমরা রাশিয়ার অনেক জায়গায় গিয়েছি । আমরা রাশিয়ার মনোরম দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছি এবং রাশিয়ার সংস্কৃতি , রীতিনীতি ও দু' দেশের মৈত্রী অনুভব করেছি ।
চীন -রাশিয়া মৈত্রী যাত্রা হলো মৈত্রী বর্ষে দু দেশের গণ মাধ্যমগুলোর একটি বড় কর্মসূচী । ৪২ দিন রাও পিন পিন চীন ও রাশিয়ার অন্যান্য সাংবাদিকের সঙ্গে গাড়ী চালিয়ে দেড় হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করে রাশিয়ার ১৯টি শহর সফর করেছেন এবং পরিশেষে মস্কোর লাল মহাচত্বরে পৌঁছেন । এই কর্মসূচীর উদ্যোক্তা সংস্থা , চীনের আন্তর্জাতিক বেতারের প্রধান ওয়াং কেন নিয়েন এ মৈত্রী যাত্রা সম্পর্কে বলেছেন , মৈত্রী যাত্রাটি চীন ও রাশিয়ার বন্ধুত্বের ইতিহাসের একটি বড় ঘটনা । দু'দেশের পত্রপত্রিকা , বেতার , টেলিভিশন ও ইন্টারনেটে বিস্তারিতভাবে এই কর্মসূচী প্রচারিত হয়েছে । মৈত্রী যাত্রা চলাকালে চীনাদের মধ্যে রাশিয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ ও রাশিয়ার ইতিহাস ও সাহিত্য জানার হিড়িক পড়েছে ।
উ ফোং একজন চীন-রাশিয়া বাণিজ্যে নিয়োজিত ম্যানেজার । রাশিয়াব
র্ষে তিনি খুব ব্যস্ত । তিনি পেইচিং ও অন্যান্য শহরে রাশিয়ার বাণিজ্য বিভাগের আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় এবং মস্কোয় অনুষ্ঠিত চিনের বস্ত্রপন্য মেলায় অংশ নিয়েছেন । তিনি মনে করেন , রাশিয়া বর্ষ দুদেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে । উ ফোং বলেছেন , রাশিয়া বর্ষের কর্মসূচীগুলোর মাধ্যমে দুদেশের পারস্পরিক সমঝোতা বেড়েছে । রাশিয়ায় চীনা পন্যের চাহিদা আছে , চীনে রাশিয়ার পণ্যের চাহিদাও আছে । দু'দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক না থাকলে দ্বিপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় সম্ভব হবে না । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের রপ্তানি প্রতিবছরই বাড়ছে । একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , এ বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্যের পরিমান ছিল ২৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার , এটা গত বছরের অনুরুপ সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি ।
চীনের একটি বাজার তদন্ত থেকে জানা গেছে , চীনে অর্ধেক লোক মনে করেন চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ । রাশিয়া বর্ষের কর্মসূচীগুলো রাশিয়া সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে । এ সব কর্মসূচী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে ।
|