৮ নভেম্বর ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমাধ্যমগুলোপ্রকাশিত মাকির্ন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নিবার্চনের ফলাফল অনুযায়ী, ডেমোক্রেটিকপাটি প্রতিনিধি পরিষদে কমপক্ষে ২২৮টি আসন অর্জন করেছে। যার ফলে তারা ১৯৯৪ সালের নিবার্চনে হারানো নিয়ন্ত্রণ অধিকার আবার ছিনিয়ে নিয়েছে। সিনেটেও দু'পাটির মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। ১২ বছর পর ডেমোক্রেটিক পাটি আবার কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ অধিকার ছিনিয়ে নেয়ায় রিপাবলিকান পাটি পুরোপুরি ওয়াইট হাউস ও কংগ্রস নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়েছে। সুতরাং এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনেডেমোক্রেটিক পাটির বিজয় হচ্ছে মার্কিন অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির উপর বড় আঘাত।
বাস্তবেও এই আঘাত দেখা দিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামস ফেল্ড এই চাপে পদত্যাগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে রামস ফিল্ড আফগান ও ইরাক যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। তাঁর ভূল নীতির কারণে সাদ্দাম ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরও ইরাকের পরিস্থিতি উন্নত হয়নি বরং দিন দিন উত্তেজনাময় হয়ে উঠেছে। এমনকি এখন ইরাক গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অন্য দিকে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যদের হতাহত সাংঘাতিক । এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পাটির পরাজয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ইরাক নিয়ে বুশ সরকারের অনুসৃত নীতিতে মার্কিন ভোটারদের অসন্তো ।
নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে ডেমোক্রেটিক পাটির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেছেন, যদি তারা নির্বাচনে জয় লাভ করে তাহলে তারা বুশ সরকারের প্রতি রামসফেল্ডকে পদচ্যুত করার দাবি জানাবে। রক্ষণশীল দলের ব্যক্তিরাও প্রকাশ্যে রামসফেল্ডের ইরাক নীতির সমালোচনা করেছেন। তারাও রামসফেল্ডের পদত্যাগের দাবী জানিয়েছেন। এখন ডেমোক্রেটিক পাটি নির্বাচনে জিতেছে। এই পরিস্থিতিতে রামসফেল্ড পদত্যাগ পত্র দাখিল করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তার পদত্যাগ বুশ সরকারের প্রতি ভাটারদের অসন্তোষ প্রশমিত করতে পারবে না। তারা বুশ সরকারের ইরাক নীতি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং বুশ সম্ভাবত ইরাক নীতি পরিবর্তনে বাধ্য হবেন।
ইরাক সমস্যা ছাড়া, বুশ সরকার অভ্যন্তরীণ নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রেডেমোক্রেটিক পাটির বিজয় একটি বড় আঘাত ।বর্তমানে সাজাজিক নিশ্চয়তার সংস্কারে বুশ সরকার যে উদ্যোগ চালাচ্ছে তা ব্যর্থ হতে পারে। তা ছাড়া, এর আগে কংগ্রেসে অনুমোদিত কর কমানোর পদক্ষেপও কার্যকর করা যাবে না।
এক কথায় ডেমোক্রেটিক পাটি নিয়ন্ত্রীতকংগ্রেস প্রেসিডেন্ট বুশ সরকারের জন্য যথেষ্ট অসুবিধা সৃষ্টি করবে। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, তাদের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে ভারসাম্য হওয়ার পর দু'পাটির মধ্যে হয়তো আরও কার্যকর সহযোগিতা চালানো হবে। তারা এক সঙ্গে অবৈধ অভিবাসন সহ কিছু কিছু কঠিন বিষয় সমাধান করবে। কারণ দুই পাটি কাজকর্মে উদাসীন থাকার দায়িত্ব বহন করতে চায় না। টেলিফনে বুশের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক পাটির প্রতিনিধি পরিষদের নেতা নানসি পেলোসির কথার্বতা থেকে বুঝা যায় দুই পাটির মধ্যে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার হবে। দুজন টেলিফোনে বলেছেন, পাটির স্বার্থ পাশে রেখে সহযোগিতার মনোভাব খুঁজে বের করতে হবে। দুই পাটিকে মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে হবে। ডেমোক্রেটিক পাটি কেন এই অবস্থান নিয়েছে? কারণ তারা জানে যে, যদিও তারা কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করেছে তবু যদি আগামী দু বছরে তাদের কাজর্কমে মার্কিন জনগণ অসন্তুষ্ট হন তাহলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পাটি পরাজিত হতে পারে। এতক্ষণ আজকের প্রতিবেদন শুনলেন।
|