v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-09 09:53:58    
পূর্ব এশিয়ার জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতার উজ্জ্বল ভবিষ্যত্

cri

 

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি সর্বদাই বিশ্বের গড়পড়তা মানের চেয়ে দ্রুত। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন পূর্ব এশিয় দেশগুলোর বাণিজ্যিক মূল্যও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে গেছে। বর্তমান জ্বালানি সম্পদ সমস্যা বিশ্বব্যাপী সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ফলে পূর্ব এশিয় দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রের সহযোগিতা দিনে দিনে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতার ভবিষ্যত সম্ভাবনা বিস্তীর্ণ।

    এখন পূর্ব এশিয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এশিয় অঞ্চলের সহযোগিতার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণবন্ত অংশে পরিণত হয়েছে এবং বলিষ্ঠভাবে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে।

    পূর্ব এশিয় অঞ্চলের একটি বড় দেশ হিসেবে চীনের অর্থনীতি একটানা বহু বছর ধরে দ্রুত প্রবৃদ্ধির হার বজায় রেখেছে। এর ফলে জ্বালানি সম্পদের সরবরাহের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এক বছর আগে চীন সরকার সাশ্রয় ও পরিবেশ-সহায়ক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপায় রূপান্তর করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এর পাশাপাশি চীন কেবল অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সম্পদ সাশ্রয়ের কথা জোরালো ভাষায় উল্লেখ করেছে তাই নয়, বরং সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রের সহযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছে।

(শুন তিয়ান মিং)

     আসলে জ্বালানি সম্পদ সমস্যা কেবল চীনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা তাই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিন্ন সমস্যাও বটে। চীনের জাতীয় জ্বালানি সম্পদ নেতৃত্ব গ্রুপের উপ-প্রধান শুন তিয়ান মিং মনে করেন, পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী সম্পদের উন্নয়ন ও প্রয়োগ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সম্পদ সমস্যা সমাধানের অনিবার্য উপায়। তিনি বলেছেন, "বিশ্ব অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি সম্পদ ও পরিবেশ সমস্যা দিনে দিনে তীব্রতর হয়েছে। যদি জ্বালানি সম্পদ ও পরিবেশ সমস্যা ফলপ্রসূভাবে নিষ্পত্তি করা না যায়, তাহলে কেবল মানবজাতির টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে না তাই নয়, বরং মানবজাতির বেঁচে থাকার পরিবেশ ও জীবনযাপনের গুণগত মানের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়বে। পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী সম্পদ প্রচুর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং চিরকাল ব্যবহার করা যায় । পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবহার জোরদার করা হচ্ছে দিনে দিনে অবক্ষয় হওয়া জ্বালানি সম্পদ ও পরিবেশ সমস্যা সমাধানের অনিবার্য উপায় এবং মানবজাতির টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের একমাত্র পথ।"

    চীন সরকার যথাযথভাবে জ্বালানি সম্পদ সমস্যার গুরুত্ব এবং জরুরী উপলব্ধি করেছে। এ বছরের ১ জানুয়ারী চীন আনুষ্ঠানিকভাবে "পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী সম্পদ আইন" প্রণয়ন করেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ১২টি ধারাবাহিক নিয়মকানুন প্রণয়ন করেছে। তা ছাড়া, চীনের জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা অধিদপ্তর দূষিত পণ্যের মোট পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং শিল্পের দূষণমুক্তসহ ধারাবাহিক কাজকর্মের মাধ্যমে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সাশ্রয় প্রযুক্তি উন্নয়নকে উত্সাহ দিয়েছে।

(লি টিয়ে ইং)

     সাশ্রয়ের মাত্রা বাড়ানোর জন্য গত মাসে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটি প্রস্তাব করেছে, কয়লাসহ নানা নিঃশেষ জ্বালানি সম্পদ ও এ ধরনের পণ্যদ্রব্যের ভোগ্যপণ্য কর আদায় করা হবে। যাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বউদ্যোগে জ্বালানি সম্পদ সাশ্রয় করবে। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান লি টিয়ে ইং বলেছেন, "নতুন জ্বালানি সম্পদ ও পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী উন্নয়নের উপর জোর দেয়া, সাশ্রয়কে উত্সাহ দেয়া সংক্রান্ত দেশের অর্থনৈতিক নীতি ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা স্পষ্ট করা, "যারা জ্বালানি সম্পদ সাশ্রয় করেন, তারা উপকার পাবে" এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ করে সরকারের সাশ্রয় বিষয়ক বরাদ্দ দেয়াসহ নানা পদ্ধতির মাধ্যমে চীনের সাশ্রয় লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য আর্থিক নিশ্চয়তা দেয়া হবে।"

    কিছু দিন আগে চীন "পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী সম্পদের উন্নয়নের মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা" প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক পুনঃব্যবহার্য জ্বালানী সম্পদ উন্নয়নের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা, জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং চীনের স্থিতিশীল জ্বালানি সম্পদ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানো। চীনের জাতীয় জ্বালানি সম্পদ নেতৃত্ব গ্রুপের উপ-প্রধান শুন তিয়ান মিং বলেছেন, "পৃথিবীর জ্বলানি সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পারস্পরিক উপকারিতামূলক সহযোগিতা, বহুবিধ বিকাশ, ধারাবাহিক নিশ্চয়তাবিধান বিষয়ক জ্বালানি সম্পদের নতুন নিরাপত্তা তত্ত্ব স্থাপন করা উচিত। আমাদের এবং পূর্ব এশিয়া, উত্তর-পূর্ব এশিয়া জ্বালানি সম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বহু দিনের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গেও বিনিময় করে আসছে। আমরা পূর্ব এশিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে মিলিতভাবে পুনঃব্যবহার্য জ্বালানি সম্পদ বিকাশের বিষয়টিকে স্বাগত জানাই, যাতে পূর্ব এশিয়ার জ্বালানি সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। "

    শুন তিয়ান মিং মনে করেন, চীনের উন্নয়ন আর পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। চীন আর পূর্ব এশিয় দেশ ও অঞ্চলের বাণিজ্যিক মূল্য চীনের মোট বাণিজ্যিক মূল্যের প্রায় ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চীনে পূর্ব এশিয় দেশ ও অঞ্চলের পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ চীনের বার্ষিক বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ পরিমাণের ৬০ শতাংশের বেশি।

(আকিহিরো কুরোকি)

    জ্বালানি সম্পদ সাশ্রয় এবং পরিবেশ সুরক্ষা ক্ষেত্রে চীন এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলে চীনের পুনঃব্যবহার্য জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবহারের বাজারায়নের মান নিচু। এই ক্ষেত্রের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আকার ছোট, প্রযুক্তির মান নিম্নসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে চীন সরকার বিদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রথমে এই ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগ করার উত্সাহ দিয়েছে। ফোরামে অংশগ্রহণকারী জাপানের জ্বালানি সম্পদ অর্থনৈতিক কেন্দ্রের গবেষক আকিহিরো কুরোকি মনে করেন, চীনের জ্বালানি সম্পদ সাশ্রয় বাজারের ভবিষ্যত সম্ভাবনা বিস্তীর্ণ। এই ক্ষেত্রে চীন ও জাপানের সহাযোগিতার বিরাট সুপ্ত শক্তি আছে। তিনি বলেছেন, "এখন পূর্ব এশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ফলপ্রসূতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু দিন আগে, চীন ও জাপানের অর্থনৈতিক বিষয়ক কর্মকর্তরা টোকিওতে অনুষ্ঠিত এক অধিবেশনে মতৈক্যে পৌঁছেছেন এবং জ্বালানি সম্পদ প্রয়োগের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"

    চীনের প্রণীত "পুনঃব্যবহার্য জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নের মাঝারী ও দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা" অনুযায়ী, পরবর্তী কয়েক দশকে চীনে বিশাল পুনঃব্যবহার্য জ্বালানি সম্পদ বাজার সৃষ্টি হবে। পুনঃব্যবহার্য জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন করা চীনের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং পূর্ব এশিয় দেশ ও অঞ্চলের বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ বয়ে আনবে।