v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-08 19:39:28    
পাকিস্তানী ব্যবসায়ী আজম

cri
    পেইচিংয়ে আজমের কার্যালয়ে দেখা যায় পাকিস্তানের বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলা । পুষ্পাধার , পাকিস্তানের কাপড় , কাচের হাতি , ময়ূর , বিভিন্ন ধরনের জুতা ইত্যাদি । তিনি বলেছেন , এসব জিনিসের অর্ধেকই পাকিস্তানকে জানাতে ইচ্ছুক চীনা বন্ধুদের দেয়া হবে , বাকী অর্ধেকই অভ্যন্তরীন সাজ সাজানো কোম্পানীর কাছে বিক্রি করা হবে ।

    আজামের লম্বা লম্বা সাদা দাড়ি আছে । দেখতে একজন মুসলমা প্রবীনের মত । যদিও তাঁর বয়স ৫০ হয় নি । তবে রাস্তায় শিশুরা তাঁকে দেখে দাদা ডাকে । তিনি চীনাদের মত চীনা ভাষা বলতে পারেন । এবং তিনি চীনের সম্পর্কে অনেক জানেন । একদম চীনা মানুষের মত ।

    আজম হল পাকিস্তানের আরোমা ওসিয়াসিক কোম্পানীর চীনা শাখার প্রথম প্রতিনিধি । ১৯৭৮ সালে সরকার ২১ বছর বয়সী আজমকে চীনে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছে । এখন পর্যন্ত মাঝে মাঝে কারাচি ফিরে যাওয়া ছাড়া আজম প্রায় ২১ বছর ধরে পেইচিংয়ে থাকেন । আজম বলেছেন , আমার অর্ধেক জীবন পেইচিংয়ে তা পাকিস্তানের যে কোনো এক শহরে থাকার সময়ের চেয়েও বেশি । বিদেশি হিসেবে আজম চীনের সংস্কার ও উন্নয়নের প্রক্রিয়া অনুভব করেছেন ।

    যদিও চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রয়েছে । তবুও ২০,৩০ বছর আগে চীনে পাকিস্তানী ছাত্রছাত্রী বেশি ছিল না । অনেক পাকিস্তানী ছাত্রছাত্রী পশ্চিমা দেশে যেতে বেশী ইচ্ছুক ছিল । তখন পাকিস্তান সরকার আজমসহ প্রায় ৫ , ৭ জন ছাত্রছাত্রীকে চীনে পাঠিয়েছে ।

    আজম নিজেই চীনে লেখাপড়া করার বিষয়টি নির্বাচন করেছেন । যদিও তাঁর আত্মীয়সজন ও বন্ধুবান্ধব তাঁকে ইউরোপীয় দেশে লেখাপড়া করার প্রস্তাবও দিয়েছিল , তবুও তিনি সবার মত ইউরোপে যেতে চান নি । তিনি পেইচিংয়ের ইস্পাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ বছর খনি খনন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন । লেখাপড়ার সময় তিনি নিজের এক চীনা নাম দিয়েছেন : চৌ ইয়ুং উই । ইয়ুং উই তাঁর আসল নামের অর্থের একই , মানে গৌরব ।

    ভাষা ও রীতিনীতির বিরাট পার্থক্যে আজমের সঙ্গে আসা পাকিস্তানীরা চীনে থাকতে পারে নি । অবশেষে শুধু আজম একাই চীনে আছে । তিনি ভালোভাবে লেখাপড়া করে নিজের দেশকে পরিসেবা করতে চান । তবে লেখাপড়া শেষে পাকিস্তান তাঁকে ভালো চাকরি দেয় নি । তখন চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ হচ্ছে । সাবেক চীনে নিযুক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতের পরিচয়ে তিনি পাকিস্তানের গাল্ফ আন্তর্জাতিক গ্রুপের চীনা শাখার কর্মী হয়েছেন । তিনি তখন ছ'বছরের জন্য চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে আমদানী রপ্তানি বাণিজ্য করেন ।

    ১৯৮৩ সালে চীনের অর্থনীতি সবেমাত্র উন্নত হয়েছে । তখন শুধু কিছু রাষ্ট্রয়ত্ত খাত আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করতে পারতো । আজমের কোম্পানী প্রধানত খনি , রাসায়নিক সার ও বস্ত্রের ব্যবসা করে । পরের বিশ বছরে চীনের আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে । এখন চীনে প্রায় ১ লাখ ২ হাজার কোম্পানীর বৈদেশিক বাণিজ্য করার অধিকার আছে । সে সময়ে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য নীতির কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে । অনেক বেশি কোম্পানী এখন আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করতে পারে ।

    গাল্ফ আন্তর্জাতিক গ্রুপের কাজের কারণে আজমের চীনা জীবন খুব আরামদায়ক । তিনি হংকংয়ে নিজের একটি কোম্পানীও খুলেছেন । তখন গাল্প আন্তর্জাতিক গ্রুপ ছিল বহত্তম ব্যক্তিগত সমুদ্র পরিবহন কোম্পানী । আন্তর্জাতিক ঋণ ব্যাংক এই কোম্পানীকে আর্থিক সাহায্য দেয় । তবে ১৯৯১ সালে এই ব্যাংকের আর্থিক সংকট হলে ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে যায় । ফলে আজমের চাকরিও চলে যায়। তখনকার সবচেয়ে কঠিন সময়ে তাঁর পকেটে শুধু একটি ১ শো ডলারের নোট ছিল ।

    চীনে তার প্রায় ১০ বছরের ব্যবসা এভাবে ব্যর্থ হয়ে যায় । বাধ্য হয়ে তিনি দেশেয় ফিরে গিয়েছেন ।

    ২০০০ সালে আজম আরোমা ওসিয়াসিক কোম্পানীতে অংশ নেয়ার আগে একজন বন্ধুর সঙ্গে একটি চীন-পাকিস্তান সমুদ্র পরিবহন কোম্পানী স্থাপন করেছিলেন । তাঁর সমুদ্র পরিবহন কোম্পানী প্রত্যি দু'মাস অন্তর চীনে এসে ব্যবসা করে । তাঁর চেষ্টায় এই ছোট পরিবহন কোম্পানী তখনকার চীনের জাহাজ মালিক বীমা কমিশনের একমাত্র বিদেশি কোম্পানী হিসেবে সদস্য হয়েছে । তিনি বরাবরই চীনের ব্যবসায়ীক পরিবেশে ব্যবসা করেন । তাঁর চোখে চীনের বাণিজ্য পরিচালনা সরকারী বিভাগের অনেক উন্নত হয়েছে । দক্ষতাও অনেক বেড়েছে । তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন , যেমন আরোমা ওসিয়াসিক কোম্পানীর চীনা শাখার স্থাপন , আগে কমপক্ষে দু'এক মাস সময় লাগতো , এখন শুধু দু'সপ্তাহ সময়ই যথেষ্ঠ ।