৭ নভেম্বর পেইচিংয়ে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী পো সি লাই ও সফররত ই ইউ কমিটির সদস্য পিটার মেনডেলসনের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিতহয়েছে । বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে । তবে চীনের বাজার উন্মুক্তকরণের ক্ষেত্রে দুপক্ষের মতবিরোধ এখনও রয়েছে ।
বর্তমানে চীন ও ই ইউর মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে সত্য , তবে বাণিজ্য- বিরোধ নিষ্পত্তি ও স্বত্বাধিকার রক্ষা ক্ষেত্রে দু' পক্ষ এক মত হয়েছে । ই ইউ চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশিদার , চীন ই ইউর দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদারী দেশ । ২০০৫ সালে চীন ও ই ইউর বাণিজ্যের পরিমান ২ শ' বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছিল । বাণিজ্যিক বিনিময় চীন ও ই ইউর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে । কাজেই , যদিও চীন ও ই ইউর বাণিজ্যিক বিনিময়ে কিছু সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে , তবু উভয় পক্ষ এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে আলাপ পরামর্শের মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিরোধ নিরসন করা ও স্বাভাবিক আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । চীনের বাণিজ্য মন্ত্রী পো সি লাই বলেছেন , দু পক্ষের মধ্যে কোনো বাণিজ্যিক সমস্যা দেখা দিলে , বিশেষ করে বাণিজ্যিক বিরোধ দেখা দিলে যততাড়াতাড়ি সম্ভব বৈঠক অনুষ্ঠান করা উচিত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আলাপ-পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তি করা উচিত ।
মেনডেলসনও বলেছেন , চীন ও ই ইউর মধ্যে স্বাভাবিক আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ই ইউ চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় এবং সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিরোধ নিরসনে আগ্রহী ।
স্বত্বাধিকার রক্ষা মেনডেলসনের বর্তমান চীন সফরের একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় । চীনের বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে স্বত্বাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত আইন প্রনয়ন ও বিদেশী পেটেন্ট ব্যবহারের জন্য চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় ফি প্রদান বিষয়ে তিনি ই ইউর অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন । মন্ত্রী পো সি লাই বৈঠকে চীন সরকারের স্বত্বাধিকার রক্ষার নীতি ও ব্যবস্থা ব্যাখ্যা সম্পর্কে করেছেন । তিনি বলেছেন , চীন সরকার পেইচিং ও সাংহাইসহ চীনের ৫০টি বড় বড় শহরে স্বত্বাধিকার লংঘন তত্ত্বাবধান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বৈঠকের পর চীন ও ই ইউ মধ্যে স্বত্বাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি স্বাক্ষরিত হয়েছে ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভূক্তির সময়ের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন ও চীনের বাজার আরো উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানানোও মেনডেলসনের বর্তমান চীন সফরের একটি উদ্দেশ্য । তিনি বলেছেন , ই ইউ মনে করে ২০০১ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় অংশ নেয়ার পর চীন নিজের প্রতিশ্রুতি পালন করেছে । আমাদের মধ্যে বাণিজ্যিক বাঁধাসহ কিছু সমস্যা আছে । এই সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য আমাদের মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে ।
পো সি লাই বলেছেন , বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অংশ নেয়ার পর চীন নিজের প্রতিশ্রুতি পালন করেছে । পণ্যের উপর থেকে আদায় করা করের পরিমান কমানো হয়েছে এবং বাজার উন্মুক্তকরণ ক্ষেত্রে অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । তিনি এ বলে আশা প্রকাশ করেছেন যে , চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নতুন সদস্য , চীন এখনও একটি উন্নয়নশীল দেশ । তাই যারা চীনের বাজার আরো উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন , তারা যেন চীনের প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক দিক থেকে দেখবেন এবং চীনের বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করবেন ।
মেনডেলসনের সঙ্গেবৈঠকে পো সি লাই চীনের রপ্তানিকৃত চামড়ার জুতার ওপর ই ইউর ডাম্পিং-বিরোধী কর আদায় ও চীনের মোটর গাড়ীর খুচরা অংশ আমদানি সম্বন্ধে ই ইউর অভিযোগের সমালোচনা করেছেন । তিনি বলেছেন , চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোচীনের চামড়ার জুতার ওপর ডাম্পিং বিরোধী কর আদায়ের তীব্র বিরোধীতা করে । চীন যে মোটর গাড়ীর খুচরা অংশ আমদানির অনুরোধ জানিয়েছে , তা' বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ । চীন পরামর্শের মাধ্যমে এ সব সমস্যা নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা চালিয়েছে , কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ই ইউ ইতোমধ্যে এই দু'টি বিষয়কে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিভাগে দাখিল করেছে ।
পো সি লাই ই ইউর কাছে চীনের সার্বিক বাজার অর্থনীতির মর্যাদা স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন ।
|