চীনা ভাষার বৈশিষ্ট্য শুধু হাতের লেখায়ই দেখা যায় তা নয়, রসাত্মক সংলাপের মাধ্যমেও উপলব্ধি করা যায়। রসাত্মক সংলাপ চীনের এক রকম ঐতিহ্যিক শিল্পরূপ, দু'জন মিলে রসাত্মক কথা বলে আনন্দের হিল্লোড় বইয়ে দেয়। মা চি বর্তমানে চীনের শ্রেষ্ঠ রসাত্মক সংলাপ অভিনেতাদের মধ্যে একজন।
চীনের রসাত্মক সংলাপের সাংস্কৃতিক রূপ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে গড়ে উঠেছে। চীনের রসাত্মক সংলাপ টক শো'র মতো। সাধারনত দু'জন অভিনেতা মঞ্চে রসাত্মক ও ব্যঙ্গাত্মকভাবে কথাবার্তা বলেন। সংলাপের লেখক জীবনের মজার মজার বিষয় বেছে নিয়ে নিজের মতামত যোগ করে একটি শ্রেষ্ঠ রসাত্মক সংলাপ তৈরী করেন।
"মৈত্রীর স্তুতিগান" প্রসঙ্গে ৭২ বছর বয়স্ক মা চি বলেছেন:
"৩০ বছর আগে "মৈত্রীর স্তুতিগান" তৈরী করা হয়েছে। ই সি জু তানজানিয়া ও জাম্বিয়া রেলপথের ডিজাইন ও নির্মানে অংশ নিয়েছেন, তিনিই এই সংলাপ লিখেছেন। তা প্রচারের পর এই সংলাপ খুব জনপ্রিয় হয়েছে। অনেক লোক দুইএক বাক্য সওয়াহিলি ভাষা বলতে পারে।"
১৯৩৪ সালে মা চি এক দরিদ্র্য পরিবারে জন্ম নেন। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মা চি পেইচিংয়ের শিন হুয়া বইয়ের দোকানে চাকরি পান। মা চি অনেক আগে থেকেই তার অনুকরণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা ভালোভাবে অনুকরণ করতে পারেন।
১৯৫৬ সালে মা চি একটি রসাত্মক সংলাপের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি তার চমত্কার অভিনয়ের মাধ্যমে তখনকার বিখ্যাত রসাত্মক অভিনেতাদের স্বীকৃতি পান। পরে তিনি একজন পেশাগত রসাত্মক সংলাপ অভিনেতার পরিণত হন। চীনের সুবিখ্যাত রসাত্মক সংলাপ অভিনেতা হো পাও লিনের প্রশিক্ষণ এবং নিজের প্রচেষ্টায় মা চি শিগ্গীরই বিখ্যাত হয়েছেন।
৫০ বছর ধরে মা চি তিন'শটিরও বেশি রসাত্মক সংলাপ তৈরী করেছেন। সারা চীনের জনগণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীনা প্রবাসীরা তাকে খুব পছন্দ করেন। চীনের কিছু বিদেশী ছাত্রছাত্রীও রসাত্মক সংলাপে আগ্রহী হলে মা চি তাদের থেকে ক্লাস নিয়েছেন। মা চি তাদের সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য মঞ্চে অভিনয় করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন:
" আমি "বিখ্যাত ব্যান্ড খোঁজা" নামক একটি রসাত্মক সংলাপ লিখেছি। দু'জন বিদেশী ছাত্রের সঙ্গে এই সংলাপে অভিনয় করেছি। তাদের একজন আফ্রিকান আরেক জন ফ্রেঞ্চ।"
মা চি সারা জীবনে রসাত্মক সংলাপে বিশেষ চীনা শিল্পরূপ দিয়েছেন, এর উপরে তার বিশেষ ভালবাসা আছে। তিনি বলেছেন,
"আমার বয়স বেশি হয়েছে, অভিনয়ের মঞ্চ ত্যাগ করতে হবে। সারা জীবন ধরে এই অভিনয় করে গেলেও আমি মনে করি এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে। আমি এখনো ছাত্র। আমার সমস্ত জীবন এ ক্ষেত্রে উত্সর্গ করতে চাই। এখন যদি কিছু নতুন বিষয় আমার মাথায় ঢুকে আমি সঙ্গে সঙ্গে তা লিখতে চাই।"
বিখ্যাত শিল্পী হিসেবে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। গত বছর তিনি আফ্রিকা সফর করে স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। তিনি বলেছেন:
"আফ্রিকায় আমার অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। আফ্রিকায় বন্য প্রাণী বেশি। আমি মনে করি রসাত্মক সংলাপ বন্য প্রাণী ও পরিবেশ সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে চীনা ও আফ্রিকান জনগণের পরিসেবা করতে পারলে খুব আনন্দিত হবে।"
|