বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন মহাসচিব নির্বাচনের জন্য ৬ নভেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির এক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনের ফল অনুমোদনের জন্য ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ সম্মেলনে তা দাখিল করা হবে ।
এ বছরে ২২ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব লি জোন ওক হঠাত হৃদ রোগে আক্রন্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন । মানব জাতি বার্ড ফ্লুসহ গুরুতর সংক্রামক রোগের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিবের পদ দীর্ঘদিন খালি রাখা উচিত নয় । নিয়ম অনুসারে এ সংস্থার মহাসচিবের প্রার্থী মনোনয়নে ছ' মাস সময় লাগে । অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন নেতা নির্বাচণের জন্য এ সংস্থা নির্বাচনের প্রক্রিয়া দ্রুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ৬ সেপ্টেম্বর এ সংস্থা মহাসচিবের ১৩জন প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছে । কিছু দিন আগে দুজন প্রার্থী নির্বাচণ থেকে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছেন। কাজেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিবের প্রার্থীর সংখ্যা ১১জন । এই ১১জন প্রার্থীএশিয়ার চীন , জাপান , তুরস্ক ও মায়ানমার । ইউরোপের ফ্রান্ম, স্পেন , ফিল্যান্ড ও আইসল্যান্ড এবং লাতিন আমেরিকার মেক্সিকো ও আফ্রিকার মোজাম্বিকের নাগরিক ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটি এ সংস্থার নির্বাচিত ৩৪টি সদস্য দেশের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয় । এই কমিটির কার্যমেয়াদ তিন বছর , প্রতি বছর । সদস্যদের তিন ভাগের এক ভাগ পুননির্বাচন করা হয় ।
৬ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটি প্রথমে ১১জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচন করবে । ৭ নভেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির অধিবেশনে পাঁচজন প্রার্থীর বিবরণ শুনবে । ৩০ মিনিটের মধ্যে প্রার্থীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিদ্যমান নানা সমস্যা বিশ্লেষন করবেন , সংস্থার প্রধান প্রধান দায়িত্ব ব্যাখ্যা করবেন এবং সমস্যা সমাধানের উপায় পেশ করবেন । পরবর্তী ৩০ মিনিটে তারা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন । ৮ নভেম্বর কার্যনির্বাহী কমিটির মধ্যে এই পাঁচজন প্রার্থী নিয়ে ভোট নেয়া হবে। যদি কোনো প্রার্থী কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের অর্ধেক ভোট না পান , তাহলে প্রতিটি ভোট নেয়ার পর যিনি সবচেয়ে কম ভোট পাবেন , তাকে বাদ দেয়া হবে । এই ভাবে সংস্থার নতুন মহাসচিব নির্বাচণ করা হবে । ৯ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিশেষ অধিবেশনে সংস্থার নতুন মহাসচিব অনুমোদন করা হবে ।
২৫ জুলাই চীন হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের মার্গারেট ছেনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে । ৫৯ বছর বয়সী মার্গারেট ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক মহাসচিবের সহকারী ছিলেন । ১৯৯৪ সালে তিনি হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের গণস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হন । ২০০৩ সালে তিনি জেনিভায় সংস্থার মহাসচিবের সহকারী নিযুক্ত হওয়ার পর প্রধানতঃ সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন । ৫ নভেম্বর জাতিসংঘের জেনিভা কার্যালয়ে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধী সা জু খান একটি অভ্যর্থনানুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মার্গারেট ছেনের কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন ।
গত দু বছরে বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় । ভোট পাওয়ার জন্য প্রার্থীরা বিভিন্ন দেশে প্রচার অভিযান চালিয়েছেন । ইউরোপের গণ মাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে , মেক্সিকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রী জুলিও ফ্রেন্ক , ফ্রান্সের সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী বারনার্ড কোচনার , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পশ্চিম প্রশান্ত সাগরীয় অঞ্চলের প্রধান শিগেরো ওমি , স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রী এলেনা সাদগাদো ও মোজাম্বিকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গাস্কোল মোকুমবি সবই শক্তিশালী প্রার্থী ।
অনেক মনে করেন , এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাষ্ট্র , ই ইউ ও কয়েকটি বৃহত উন্নয়নশীল দেশের সমর্থন পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ । তবে ভোট নেয়ার প্রক্রিয়া জটিল বলে নির্বাচনের ফল অনুমান কঠিন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন মহাসচিব কে হবেন --তা' ৮ নভেম্বর সংস্থাটির কার্যনির্বাহী কমিটির শেষ দফা ভোটের পর প্রকাশিত হবে ।
|