v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-06 17:11:58    
আমি আফ্রিকায় একজন কোচ ছিলাম

cri

(লু চিয়ানমিন মাঝখানে)

    এ বছর হল নয়া চীন ও আফ্রিকান দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বার্ষিকী। অর্ধশতাব্দী ধরে চীন আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিত্সা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যাপক ও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রেখেছে। এর মধ্যে চীন ও আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে ক্রীড়া বিনিময় এ সব দেশের ক্রীড়া ব্রতের উন্নয়ন ও মৈত্রী বাড়ানোর জন্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। চীন-আফ্রিকা ক্রীড়া সহযোগিতা বিনিময়ের প্রক্রিয়ায় চীন নিজ দেশের ভাল কোচ আফ্রিকান দেশগুলোতে পাঠায়। এটি হল সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। ৫০ বছরে কয়েক বার চীনা কোচ আফ্রিকায় যান। তাঁরা স্থানীয় ক্রীড়া পর্যায় উন্নয়নের জন্যে বহু অবদান রেখেছেন এবং আফ্রিকান নাগরিকদের সঙ্গে গভীর মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করেছেন।

    ৬৯ বয়সী উ হাওচিন একজন কোচ ছিলেন। তাঁর জীবনে দুই বছর সময় তিনি কখনো ভুলবেন না। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি মরোক্কোর জাতীয় নারী জিমনেস্টিক্স দলের কোত ছিলেন। 'প্রথমে মরোক্কোর জাতীয় নারী জিমনেস্টিক্স দলে শুধু ৮ থেকে ১০ পর্যন্ত খেলোয়াড় ছিলেন। তারপর কয়েকজন যুব খেলোয়াগ আসেন। আমি মোট এক ডজন খেলোয়াড় ট্রোনিং দেই। আমি ট্রোনিং দেয়ার পর, যদিও মরোক্কোর খেলোয়াড়ের মান অন্যান্য জিমনেস্টিক্স শক্তিশালী দেশের চেয়ে খুবই খাটো, তবুও তাঁদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সাহস আছে এবং বহু শক্তিশালী খেলোয়াড়দের কাছে নিজ্বস মানের ক্রীড়া নৈপুন্য দেখাতে পারেন। এজন্য মরোক্কো জিমনেস্টিক্স সমিতি খুবই খুশী হয়।'

    ৫০ বছরে চীন ক্রীড়ার পারষ্পরিক বিনিময়, প্রশিক্ষণ আর অনুশীলন ক্লাস অনুষ্ঠান ও কোচ পাঠানোর পদ্ধতির মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে ক্রীড়া প্রযুক্তির বিনিময় জোরদার করে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ক্রীড়ার মান উন্নয়নে সহযোগিতা করে। বর্তমানে, এ ধরনের বিনিময় ও সহযোগিতা পর্যায় অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ২০০০ সাল থেকে চীন মিসর, ইথিওপিয়া ও নামিবিয়াসহ ১২টি আফ্রিকান দেশে ১৩টি পরিকল্পনায় ৩৮জন কোচ পাঠিয়েছিলো। বর্তমানেও ঘানা, সুদান, টানজানিয়া ও নাইজেনিয়ায় কোচ পাঠাচ্ছে।

    কোনো অলিম্পিক গেমসের পরিকল্পনা ছাড়াও চীন আফ্রিকান দেশগুলোয় কংফুসহ চীনের ঐতিহ্যিক ক্রীড়া পরিকল্পনার উচ্চ পর্যায়ের কোচ পাঠায়। সেজন্য, এ কোচরা আসলে আফ্রিকান বন্ধুদের কাছে চীনের ঐতিহ্যিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রচার করার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পেইচিং ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কুংফু কোচ লু চিয়ানমিং মিসরে ছিলেন। তিনি মিসরের জাতীয় কুংফু দলের কোচ ছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় এ সুন্দর দেশের জন্য অবদান রাখেন। 'তখন মিসরের জাতীয় কুংফু দলে আমি একমাত্র কোচ। আমি সেখানে চার বছর ছিলাম। আমার নেতৃত্বে মিসর জাতীয় দল হংকংয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ কুংফু চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নেয়। মিসর জাতীয় দল ভাল সাফল্য অর্জন করে। আমার মনে হয় যে, চীনা কোচের ট্রোনিংয়ে মিসরের কুংফু উন্নত হয়েছে।'

    ৫০ বছরে, চীনা টেবিল টেনিস দল, জিমনেস্টিক্স দল বহুবার আফ্রিকান দেশগুলো সফর করে। চীনা অনেক কোচ মিসর, নাইজেরিয়া ও ঘানাসহ আফ্রিকান দেশগুলোর ক্রীড়া পর্যায় উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করেন এবং তাঁদের ট্রোনিং স্থানীয় ক্রীড়ার পর্যায় উন্নতি হয়। উ হাওচিন ও লু চিয়ানমিন ছিলেন দুই দৃষ্টান্ত।

    চীনা কোচরা চেষ্টা করে মর্যাদা অর্জন করেছেন। আফ্রিকান দেশগুলোয় তাঁরা বহু কঠিন পরিস্থিতির সম্মূখীন ছিলেন। যেমন, স্থানীয় ভাষা বুঝেন না, পরিস্থিতির গাপ যাওয়াতে পারেন না এবং কোনো কোনো স্টেডিয়ামের খারাপ আস্থা ইত্যাদি। কিন্তু তাঁরা এসব কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করেন। মাদাম উ হাওজিন বলেছেন, যখন আমি আফ্রিকায় ছিলাম, তখন সেখানে পরিস্থিতি ও শর্ত খুবই খারাপ। তখন অনুশীলন ও সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল বেশি খারাপ। সেজন্য খেলোয়াড়দের ক্রিয়াকলাপের মান উন্নয়ন হল একটি খুবই কঠিন কাজ। আমাদের দায়িত্ব ছিল এধরণের সমস্যার সমাধান করা।

    যদিও বিষয়টি কঠিন ছিলো, তবুও চীনা কোচরা উত্সাহের সঙ্গে আফ্রিকায় গিয়ে কাজ করেন। তাঁদের প্রশিক্ষণে আফ্রিকান খেলোয়াড়রা বারবার সাফল্য অর্জন করেন। সঙ্গে সঙ্গে চীনা কোচ ও আফ্রিকান খেলোয়াড়ের মধ্যে গভীর মৈত্রী প্রতিষ্ঠিত হয়। লু চিয়ানমিন বলেছেন, আমি আমার খেলোয়াড়দেরকে ভালভাবে জানি। আমরা অনুশীলন ছাড়া সবসময় মত বিনিময় করি। মিসরের একটি পত্রিকায় এ সম্বন্ধে একটি মন্তব্য ছিলো। এতে বলা হয়, 'কোচ লু তাঁর ছাত্রছাত্রীদেরকে নিজের হাতের মত জানেন'। তাঁরা প্রতিযোগিতার সময়ে আমাকে 'বাবা' ডাকেন। আমাদের পাস্পরের প্রতি অমুভূতি খুবই ভাল।

    যদিও চীন ও আফ্রিকার মধ্যে অনেক দূরত্ব, তবুও বহু বছরে চীন ও আফ্রিকার ক্রীড়া মহল সবসমস্যা অতিক্রম করে প্রচুর ক্রীড়া বিনিময় ও সহযোগিতার করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষ করে আফ্রিকান দেশগুলোকে ক্রীড়া সাহায্য দেয়ার প্রশংসা করে ১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি চীনের অলিম্পিক কমিটিকে অলিম্পিক কাপ প্রদান করে ।

    ক্রীড়া বিনিময়ে চীনা কোচ ও আফ্রিকান খেলোয়াড়দের সমঝোতা বেড়েছে। ভবিষ্যতে চীন অব্যাহতভাবে আফ্রিকায় কোচ পাঠাবে।