২০০১ সালের জুলাই মাসের কোন এক দিন , চীনের হোপেই প্রদেশের কুয়ানথাও জেলার সিলিউ চুয়াং গ্রাম থেকে এক খবর বেরিয়েছে যে , গ্রামের১৮ বছর বয়সী মেয়ে চিন রেনরেন মাছি চাষ করবে । খবরটা গ্রামবাসীদের কাছে বোমার মতো বিস্ফোরিত হয় । হঠাত এই প্রত্যন্ত নির্জন গ্রামের সবাইর মনে এক সন্দেহ জাগে, কি হল মেয়েটির মাথা? সে কেন মাছি চাষ করবে ? যখন গ্রামবাসীরা সন্দেহের চোখে তার দিকে তাকাচ্ছিলেন তখন এক পাকা সিদ্ধান্ত চিন রেনরেন বাস্তবায়ন করছিলেন । কেন জঘন্য মাছি তার কাছে এক মূল্যবান জিনিসে পরিণত হলো?
কুয়ানথাও জেলা চীনদেশে ডিম পাড়া মুর্গির এক বিখ্যাত জেলা । জেলার বহু বাড়ি মুর্গি পোষে । কিন্তু মুর্গির মল কৃষকদের কাছে একেবারে আবর্জনা জিনিস । তাই চিন রেনরেন মুর্গির মল কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন । পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি প্রথমে মাছি চাষ করবেন । মুর্গির মলে মাছি ডিম পাড়ে এবং পোকা লালন করে । তারপর তিনি পোকা মুগর্গিকেখাওয়াবেন । এটি করলে তার মুর্গি পোষার কাজ শিগ্গিরই সম্প্রসারিত হবে ।
কিন্তু যখন চিন রেনরেন আস্থা নিয়ে নিজের কাজ শুরু করছিলেন তখন তিনি পরিবারের সবাইয়ের আপত্তির সম্মুখীন হলেন । মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাবামা দৃঢ়তার সঙ্গে রেনরেনের মাছি চাষের বিরোধিতা করেন । এমন কি তার আদরনীয় ছোটো বোন ও ছেলেবন্ধুও তাকে সমর্থন করেন না । তারপরও চিন রেনরেন তার মুর্গির ঘর মাছিঘরে পরিবর্তন করেন এবং উন্নত মানের মাছি ও ৫০০টি মুর্গিছানা কিনেন । প্রস্তুত কাজ শেষে চিন রেনরেন মুর্গির মল দিয়ে মাছির পোকা চাষ করার কাজ শুরু করলেন ।
চিন রেনরেনের মাছি চাষের খবর তাড়াতাড়ি গ্রামের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । গ্রামবাসীদের নানা কথায় চিন রেনরেনের পরিবার বিরাট চাপের মুখে পড়লেন মাছিগুলো যাতে যথেষ্ট পুষ্টি পেয়ে আরও বেশি ডিম ও পোকা পেড়ে মুর্গিকে খাওয়াতে পারে তার জন্যে চিন রেনরেন গুড় ও গুড়া-দুধ কিনে মাছিকে খাওয়ান । কথাটা তাড়াতাড়ি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা অহেতুক কথা তার কানে পড়ে । বাড়িতে ফিরে রেনরেন দেখতে পেলেন যে, উঠানের সবত্রই মাছি উড়ছিল । এক অশুভ অনুভূতি রেনরেনের মাথায় ওঠে । তিনি তাড়াতাড়ি মাছিঘরের দিকে ছুটে যান এবং সামনের দৃশ্য দেখে অবাক হলেন । তিনি মনোযোগের সঙ্গে যে ১০টি মৌচাকের মাছি চাষ করেন তার মধ্যে ৮টি খোলা আছে । দ্বিতীয় দিন প্রতিবেশীরা তার বাড়িতে আসলেন । রেনরেন মনে করেন ,ছোটো বোন যে ৮টি মৌচাকের মাছি মুক্তি দিয়েছে সেগুলো নিশ্চয় প্রতিবেশীদের বাসায় উড়ে গেছে । ঘটনা প্রশমিত করার জন্যে রেনরেন প্রতিবেশীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাছি নাশক ওষুধ কিনে দিয়েছেন ।
তাড়াতাড়ি এক বছর পার হল । এক বছরের মাছি চাষ থেকে চিন রেনরেন কিছু অভিজ্ঞতা সংঞ্চয় করেছেন । তার মাছি চাষের কাজ দিনদিন বাড়ছে । তাসত্ত্বেও তার মাছি চাষ সম্পর্কে লোকদের ঘৃণা তিনি পরিবর্তন করতে পারেননি ।
২০০২ সালের আগষ্ট মাসের এক দিন ,তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছেলেবন্ধু তার সঙ্গে একবার দেখা করার অনুরোধ করেছেন । কিন্তু চিন রেনরেন ভাবতে পারেননি যে,মাছি চাষের কারণে ছেলেবন্ধু তাদের প্রেমের সম্পর্ক চ্ছিন্ন করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন । চিন রেনরেন অত্যন্ত ব্যথিত হলেন এবং এক বৃষ্টির রাতে ১০০টি ঘুমের বড়ি খেলেন । ডাক্তারদের আপ্রাণচেষ্টায় দুদিন পর চিন রেনরেন জেগে ওঠে । নিজের শয্যার চার পাশে ঘিরে দাঁড়ানো সবাইর দৃষ্টি দেখে রেনরেন বুঝলেন ,তাকে যত্ন ও ভালবাসার কারণে সবাই তার মাছি চাষের আপত্তি করেন । বিশেষ করে তার হাসপাতালে থাকাকালে বাবা ও ছোটোবোন তার মাছিগুলোকে লালনপালন করেছিল কথাটা জেনে রেনরেনের মাছি চাষের কাজ ভাল করার আস্থা আরও দৃঢ় হয় । মেয়ের কাজ সমর্থন করার জন্যে চিন রেনরেনের বাবামা স্বেচ্ছায় তাকে মাছিঘর চালাতে সাহায্য করেন । যখন মুর্গির মল যথেষ্ট নয় তখন বাবামা চুপেচুপে বাড়ির গরু বিক্রি করে ১০টি শুয়োর কিনে পালন করেন ।
ফীড থাকার সঙ্গে সঙ্গে চিন রেনরেনের মাছি চাষের কাজও দ্রুততর বেড়ে যায় । চিন রেনরেনের মাছির সংখ্যা আগের ১০ মৌচাক থেকে বেড়ে এখনকার ১০০ মৌচাকে হয়েছে। তার চাষ করা মাছি প্রত্যেক দিনে ৫০ কেজি পোকা উত্পাদন করে আর এই ৫০ কেজি পোকা ১০০০টি মুর্গির দৈনিক খাবার সরবরাহ করতে সক্ষম হবে । এখন চিন রেনরেনের পোষা মুর্গিগুলো পাইকারীভাবে ডিম পাড়তে শুরু করে । তার পোষা মুর্গি সাধারণ ফীড খায় না বলে তার ডিম খুব সুস্বাদু এবং রং ভাল । তাই বাজারে তার পোষা মুর্গি ডিম খুব সমাদৃত । কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় এখন শুধু তাজা পোকার উত্পাদন থেকে চিন রেনরেনের বার্ষিক আয় ২ লাখ ইউয়ান বেশি ।
এখন চিন রেনরেন নিজের গৃহ পালিত পরিবেশ উদ্যান গড়ে তুলেছেন । তিনি কীটপতঙ্গের পিউপার ৩০টি ধারাবাহিক তরকারী উন্নয়ন করেছেন । তার পোষা মুর্গির খাবার জ্যান্ত পোকা এবং মুর্গির ডিমে কোনো রসায়ন সার ছিল না । তাই তাদের উদ্যানে উত্পাদিত ডিমকে সবুজ ও নিরাপদ খাবার বলে আখ্যায়িত করা হয় । তাদের উত্পাদিত দ্রব্য সারা দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মাছির পোকাকে প্রধান খাদ্য হিসেবে পোষা এক মুর্গির দাম ১০০ইউয়ান হতে পারে । দাম বেশি হলেও অনেক বিখ্যাত রেস্তরাঁ ও সুপার মার্কেট তা বিক্রির এজেন্ট করার অনুরোধ জানিয়েছে ।
চিন রেনরেন সফল হয়েছেন দেখে গ্রামবাসীরা আর তার মাছি পোষার আপত্তি করেন না । আজ শুধু গ্রামের লোক নয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকেরা তার কাছে মাছি চাষ করার পদ্ধতি শিখতে আসেন । অবশেষে ছোটো ছোটো মাছি আশ্চর্য অবস্থারসৃষ্টি করেছে ।
বন্ধুরা, চিন রেনরেনের কাছে আপনারা কি শিখেছেন? হাঁ,আস্থা থাকলে যে কোনো কাজ সফল হতে পারে ।
|