v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-03 09:33:59    
বাংলাদেশের আরটিভির কায়েস চৌধুরীর দেয়া সাক্ষাত্কার

cri

    আমার নাম কায়েস চৌধুরী। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমরা আর টি ভির একটি টাম গোটা চায়নাকে এক্সপ্লোর করার জন্য এসেছি। মূল বিষয়টি হচ্ছে সিসিটিভি ও আরটিভির যৌথ সহযোগিতায় একটি ট্যুরিজম ধর্মী ডকুমেন্টারী ফিল্ম করার জন্য। আমি মূলত একজন নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক। টেলিভিশনের জন্য নাটক নির্মান করে থাকি। সবচাইতে বেশী নির্মান করেছি ডকুমেন্টারী ফিল্ম। যেটাকে আমরা প্রামান্য চিত্র বলি বাংলায়। আমি দেশে বিদেশে অন্তত ৪৩টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি আমার ডকুমেন্টারী ফিল্মের জন্যে। এর বাইরে যে কাজটি করি আমি তার মধ্যে নাটক লিখি এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মান সংক্রান্ত ব্যাপারে শিক্ষকতা করে থাকি। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও নিমকোতে পড়াই। এর বাইরে দীর্ঘ সময় ধরে ইউরোপ , আমেরিকা ও আফ্রিকায় কাজ করার কারণে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ফটোগ্রাফি করে যাচ্ছি। বিশেষ করে ভিডিও ফটোগ্রাফী। চায়না এসেছি আমি সেই সূত্র।

 এই টিমের মূল ফটোগ্রাফার হিসেবে সারা চীন ঘুরে ঘুরে একটি ডকুমেন্টারী ফিল্ম করার জন্যে। প্রথমে আমি বেইজিং এসেছি। প্রথমে আমাদের চীন সম্পর্কে জানা, চীনের মানুষকে কাছ থেকে দেখা, চীনের আর্ট এন্ড কালচার আমরা এর মাঝখানে রেডিওতে গেছি, অসম্ভব ভালো লেগেছে আমার। মনে হচ্ছে যেন আমি আমার নিজের বাড়ীতে এসেছি। সবচাইতে অদ্ভুত লেগেছে যে, মানুষগুলো সবাই বাংলায় কথা বলতে পারে, এত দূরের সূদূর চীনে এতে আমার প্রাণটা ভরে গেছে। আমি খুব ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম তখন। যদিও কাজ ছিল। ওদের সঙ্গে কথা বার্তা বলেছি, ইন্টারভিউ নিয়েছি, ফটোগ্রাফী করেছি। মাঝখানে মনে হয়েছে যে, আমি যেন বাংলাদেশের কোন একটি রেডিও স্টেশনের মধ্যে আছি। তাদের মধ্যে একজন আমাদের খুব কাছের হয়ে গেছে, স্বর্ণা, যে বাংলাদেশে ছিল। ও দু'দিন ধরে আমাদের সঙ্গে আছে। খুব ভালো লাগছে। ওর সঙ্গে বাংলায় কমিউনিকেট করি।

 চায়নায় এসে বিশেষ করে বেইজিং এসে যে খাবার খেয়েছি তার প্রতিটি খাবারই আমার খুবই ভালো লেগেছে। আর মানুষগুলোর সাথে আমার দেশের মানুষের কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না। বিশেষ করে আমার সাথে চীনের মানুষের সাথে কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না। স্বভাগত কিংবা মন মানসিকতা , এটিটিউড, এটিকেট, সক্ট স্পোকেন, খুব মনের মানুষ। আমিও খুব মনের মানুষ। তো মানুষগুলোকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আজকে কিছু ক্ষণ আগে খুব টায়ড ছিলাম। সুটিং করে আসার পর ভাবছিলাম যে, এ দেশেও তো আমার জন্ম হতে পারতো। আমার এত ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে যে, এত বড় একটা দেশে আমার কেন জন্ম হলো না। প্রায় ১০০ কোটি মানুষের ভেতর আমি কেন হলাম না। আমার দেশকে আমি ভালোবাসি ঠিক , তেমনিভাবে আমার মনে হয়েছে বোধ হয়, চীনকেও ভালোবেসেছি। আমি আমার লেখাপড়া করেছি ইউরোপে। সেই সুবাদে পৃথিবীর ৬৩টি দেশ আমি ঘুরেছি। কখোনো চায়নায় আসা হয় নি। এবার চীনে এসে মনে হলো বিরাট একটু ভুল হয়ে যেতো। একটা জনমতো চীনে না আসলে সবকিছুই উল্ট পাল্ট হয়ে যেতো। জানা হতো না এশিয়ার মধ্যে এত সমৃদ্ধ একটি দেশ আছে। এত সমৃদ্ধ মনের কিন্তু মানুষ আছে। এত সমৃদ্ধ একটা কালচার আছে। বিচুয়ালস আছে, সংস্কার আছে, সংস্কৃতি আছে জেনে আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি যদি কখোনো ছুটি কাটানোর জন্যে আসি আগে ভাবতাম আমি প্যারিস যাবো। সেখানে আমি পড়াশুনা করেছি, জায়গাটা আমার প্রিয়।

 এবার আমি চায়নায়। আমার খুব ভালো লেগেছে। চায়নায় এবার এত ভালো লেগেছে যে, একটুও বাড়ি যে বলছি না, প্রতিটি মানুষকে ভালো লেগেছে। বিশেষ করে চায়না ইন্টারন্যাশনাল রেডিও স্টেশনের মানুষগুলোকে অসম্ভব ভালো লেগেছে।

 এবার দেশে ফিরে গিয়ে একটি কথা মানুষকে বলবো বা লিখবো পত্রিকায় চীন সফর নিয়ে একটা বুলোটিন দেখার কথা, তাতে আমি লিখবো যে , মানুষ বড় হতে পারে , যদি তার সময় জ্ঞানটা কাজ করে, আর অনেষ্টি ইজ ভেরা ইম্পর্টেন্ট। আমি চায়না ঘুরে বেড়াচ্ছি। কখোনো মনে হচ্ছে না যে, কোন ধরনের দূর্যোগপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আমি পড়বো। ছিনতাই কিংবা মাগিং এ জাতীয় কোন সমস্যাই নেই। প্রতিটি মানুষই ভেরী সক্ট স্পোকেন, ভেরী সক্ট হার্টেড, আমি। সত্যিই মুগ্ধ। চায়নার প্রতিটি মানুষের প্রতি বাংলাদেশের হয়ে এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আসীম ভালবাসা।

 এই সংস্কৃতি সৌধ দেখার পরে আমার একটা জিনিস মনে হয়েছে যে , চীন দেশের মানুষেরা রাজার মত বাঁচে এবং রাজার মত মরে। তাদের মৃত্যুটাও গ্লোরিয়াস। রাজকীয় মরন যেটাকে বলে। আজকে যে ১৩টি সমাধী স্তম্ভ আমরা দেখলাম, মনে হয় মৃত্যুর পরেও এরা এখনো আমাদের মাঝে রাজার মতই বেচে আছে। চায়না ইজ ও ভেরী কাইটিং ন্যাশন। তারা খুব অবস্থার থেকে আজকে এই পর্যায়ে এসেছে, আমার কাছে অবাক লাগে।

 আমার কাছে মনে হয় যে, এই ধরনের একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আমার নিজের দেশে বাংলাদেশে দরকার। তার জন্য যতগুলো বিশেষ বিষয় দরকার, নিয়মানু বর্তিতা, সময়ের প্রতি নিষ্ঠা। আর মূল জিনিস হচ্ছে সততা। নিষ্ঠা এবং সততা একটা জাতিকে বিশাল জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে। চায়নার যে দিকেই আমি তাকাই না কেন, সব দিকের প্রত্যেকটা জায়গাই মনে হয় , যেন পটে আঁকা ছবি। সমৃদ্ধতায় ভরা। প্রত্যেকটা জায়গায় হচ্ছে নিয়ম, শৃঙ্খলা, পরিষ্কার আর আমি এতগুলো দেশ ঘুরেছে যে ২১ বছর আমি ইউরোপ , আমেরিকায় থেকেছি, চায়না সম্পর্কে আমার একদমই ধারণা ছিল না। আমি ভেবেছি এশিয়ার একটি দেশ কতটাই বা ভাল হবে। এখন আমি কখোনো ইউরোপে গেলে খুব বুখ উচু করে বলতে পারবো যে, তোমাদের চাইতেও অনেক সমৃদ্ধ মানুষ এবং দেশ আমার এশীয়াতে আছে। এক বার চায়না না ঘুরলে তোমরা সেটা কখনো তুলনা করতে পারবে না। অত বেশী সর্ববোধ করার কিছুই নেই। একবার চায়না আসা তারপর তার নিজেকে সংকীর্ণ মনে হবে।