v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-02 18:02:56    
ডঃ ইউনুসের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সফর(ছবি)

cri

 ২২ অক্টোবর বিকেলে ডক্টর ইউনুস পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে এক চমত্কার বক্তৃতা দিয়েছেন । বিকেলে দু'টায় স্বাগত অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা । কিন্তু দেড়টার আগেই মিলনায়তনের সব আসন পূর্ন হয়ে যায় । আমি কোনো খালি আসন দেখতে পাই নি । সবাই ধৈর্যসহকারে মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য অপক্ষা করছে । একটু দেরীতে আসার কারণে ছাত্রছাত্রীরা মিলনায়তনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে । এ থেকে ঝোয়া যায় , ছাত্রছাত্রীরা ডক্টর ইউনুসের আসার জন্য বেশ আনন্দিত এবং উত্ফুল্ল।

 বিকেলে দু'টায় বৈঠক আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে । পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ইনস্টিডিউটের উপ -প্রধান সুন ছিসিয়াং'র সভাপত্বিতে ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস , তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে এবং অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞ এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রাণ-খোলা হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে মিলনায়তনে প্রবেশ করেছেন । শুভ্র চুলের অধিকারী ডক্টর ইউনুস মিষ্টি হাসিত্ দিয়ে আন্তরিকভাবেই যেন সবাইকে আপণ করে নিলেন । সকালে আমি তিয়াও ইউথাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যাই নি , শুধু ওয়েবসাইট থেকে তাঁর ছবি দেখছিলাম । আমি ভেবেছিলাম তিনি হয়তো স্যুট পরে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন । কিন্তু না । তিনি অবাক করে দিয়ে শুধু ঐতিহ্যিক বাঙ্গালী জাতীয় কাপড় পাঞ্জাবী পাজামা পরেই এসেছেন । গভীর নীলাভ কাপড় এবং হাল্কা হলুদ বান্ডি,দেখতে খুবই সুন্দর ও মনোরম। তখন তার প্রতি আমার আরো বেশী সম্মান ও শ্রদ্ধা বেড়ে গেল । মানুষ হলেতো এমনই হতে হয় । দরিদ্র্য লোকদের কয়েক'শো কোটি মার্কিন ডলার যিনি ঋণ দিয়েছেন তার মত এমন লোক তার নিজের জীবনযাত্রাকে এতো সহজ সরল ও স্বাভাবিক রেখেছেন । যা ভাবতেই পারা যায় না । তাঁর রুচিশীল তা সত্যিই হয়ে ছুঁয়ে যায় ।

 উপস্থাপকের প্রস্তাবে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষয়িত্রী স্যু চিহোং অভিনন্দনবার্তা জানিয়েছেন এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ডঃ ইউনুসকে সম্মানীত অধ্যাপকের সনদপত্র হস্তান্তর করেন ।

 ম্যাডাম সুন চিসিয়াং বলেছেন, আমরা খুব খুশি যে ডক্টর ইউনুস নোবেল শান্তি বিষয়ক পুরস্কার লাভ করার পর , পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তাঁর কাছ থেকে সরাসরিভাবে শুভেচ্ছা জানতে পারছে এবং তাঁকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানীত অধ্যাপক হিসেবে সম্মাননা প্রদান করতে পেরে গর্বিত ।

 ডক্টর ইউনুস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি বিষয়ক পুরস্কার অর্জন করার আগেও চীনের তাঁর সুনাম ছিল । এর কারণ হচ্ছে তিনি চীন আসা আগেই তাঁর আত্মজীবনীর চীনাভাষা অনুবাদ চীনে প্রকাশিত হয়েছে । এ আত্মজীবনীর অনুবাদক ম্যাডাম উ শিহোং জানিয়েছেন, "২০০৩ সালের শেষে আমি বিশ্বের দারিদ্র বিমোচন সংক্রান্ত আর্থিক উপযোগিতা ক্ষেত্রের সামাজিক শিল্পপতি সম্পর্কে এক বই দেখছিলাম । তাঁরা শুধু ব্যবসায়ীদের মত টাকা উপার্জন করেন নয়, তাঁদের উদ্দেশ্য হল প্রচেষ্টা চালিয়ে সমাজের দারিদ্র্যতা কমানো । বইয়ে একজন বীর বাঙ্গালীর গল্প বলা হয়েছে । যিনি দরিদ্র লোকদের ঋণ দেন এবং কোনো আইনগত জটিলতা ছাড়া এবং তাঁর ঋণ গ্রহণ করা দরিদ্র লোকদের সংখ্যা কয়েক দশক প্রায় কোটিতে দাঁড়িয়েছে । আমি বিশ্বাস করি না এবং বিরাট সন্দেহ পোষণ করি । এ জন্য আমি বই দোকানে গিয়ে তাঁর ইংরেজী আত্মজীবনী খোঁজে বের করে তাঁর গল্পটি পড়েছি । তারপর আমি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি এবং হৃদয়ের এক অবাক করা অনুভূতি শিহরণ দিয়ে যায় । এর আগে আমি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরী করেছি এবং অনুবাদ আমার পেশা নয় । কিন্তু এ বই পড়ার পর আমি তা চীনাভাষায় অনুবাদে আগ্রহী হয়ে উঠি । ফলে আমি ইউনুসকে ইমেল পাঠিয়েছি । অবশ্যই আমি একজন অপেশাগত অনুবাদক হিসেবে তাঁর আত্মজীবনী অনুবাদ করার ইচ্ছা তাঁকেও বলেছি । আমি খুব খুশি ডক্টর ইউনুস শীঘ্রই আমাকে ফিরাত ইমেইল পাঠিয়েছেন এবং আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন ।

 ২০০৬ সালের মে মাসে এ বই প্রকাশিত হয়েছে । এ বইয়ে আপনারা একজন মহান লোকের উদ্দেশ্য আদেশ ও মর্মকে অনুভব করার পাশা পাশি অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগবেন । আমি আশা করি ,এ বই উপযোগিতা ও দরিদ্র্য সাহায্যকারীদের মুগ্ধ করার পাশা পাশি অন্যান্য লোকদেরও মুগ্ধ লাগবে । আমার মতো অনেক কল্যাণকর ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে এবং চীনের দরিদ্র ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জন্য আরো বেশি উত্সাহ আর বাস্তব সহায্য দেবে ।"

 ম্যাডাম উ শিহো' কথা শোনার পর আমার অনেক অনুভূতি আছে । আমি স্পষ্টভাবে তাঁর আগ্রহীভাবে ডক্তর ইউনুসের আত্মজীবনী অনুবাদ করার মন্তব্য বোঝতে পেরেছি ।

 ক্ষুদ্র ঋণ দান শিল্পের বহিরাগত হিসেবে ,আমরা ডক্টর ইউনুসের গল্পে মুগ্ধ হয়েছে । এ শিল্পের পেশাগত ব্যক্তি হিসেবে চীনা খুদ্র ঋণ দানের বিশেষজ্ঞরা ডক্তর ইউনুসের বক্তৃতা শোনার পর চীনের সমাজ ও বিজ্ঞান এ্যাকাডেমির গ্রামীন উন্নয়ন গবেষণা বিভাগের উপ-প্রধান তু সিয়াওশান বলেছেন, "১৯৯৩ সাল থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের খুদ্র ঋণ দান শিল্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি । আমাদের উদ্দেশ্য হল চীনা দরিদ্র লোকদের ঋণ দান পরিসেবা প্রদান করা । কিন্তু ১০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে, আমাদের সাফল্য বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম । এর মধ্যে তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে । প্রথম. খুদ্র ঋণ দানের নীতি ও পরিবেশের বৈধ অবস্থা দোরকার । দ্বিতীয়. খুদ্র ঋণ দান সংস্থার সামর্থ্য জোরদার করা দোরকার। তৃতীয়. মৌলিকভাবে খুদ্র ঋণ দানের পুঁজির উত্স্য সংগ্রহ করা । আমি আশা করেন, ডক্টর ইউনুস এবার চীন সফরের মাধ্যমে চীনের খুদ্র ঋণ দান শিল্প বিরাট অগ্রগিত অর্জন করবে ।"