v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-11-01 17:18:05    
মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত কৃষক চাং হো শান

cri
    মহাপ্রাচীর হচ্ছে সারা পৃথিবীর কাছে চীনা জনগণের রেখে দেয়া মূ্ল্যবান পুরাকীর্তি । হাজার হাজার বছর ধরে অসংখ্য যুদ্ধের আগুণ ও ঝড়-বৃষ্টির দরুণ মহাপ্রাচীর গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । গত কয়েক বছরে আরো বেশি চীনা লোক স্বতস্ফুর্ত হয়ে মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । চাং হো শান নামক একজন সাধারণ কৃষক বিশ বাইশ বছর ধরে নিশব্দে মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজ করে এসেছেন ।

    উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের ফু নিং জেলার পাহাড়ী গ্রাম - ছেং চি ইয়ুতে চাং হো শানের জন্ম । গ্রামের মাথায় দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালে উচনীচ মহাপ্রাচীর চোখে পড়বে । চাং হো শান বলেছেন , তাদের পূর্ব পুরুষেরা সবাই মহাপ্রাচীর রক্ষার কাজে নিয়োজিত সৈনিক ছিলেন । পরবর্তীকালে যুগ যুগ ধরে তারা এখানে বসবাস করে এসেছেন । আস্তে আস্তে এ গ্রাম গড়ে ওঠেছে । চাং হো শান ছোট বেলা থেকে মহাপ্রাচীরের পাদদেশে বড় হয়েছেন বলে মহাপ্রাচীর চাং হো শানের জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে । তিনি বলেছেন , তিনি মহাপ্রাচীরের কাহিনী শুনে শুনে বড় হয়েছেন । তিনি বলেন ,

    যখন আমি ছোট ছিলাম , তখন আমার বাবা সবসময় মহাপ্রাচীরের চালচলন ও তার নির্মাণ কাহিনী আমাকে শোনাতেন । সেই কত কথা ।

    স্থানীয় ইতিহাসের বইতে লিপিবদ্ধ তথ্য অনুসারে ছেং চি ইয়ুতে অবস্থিত মহাপ্রাচীরের এ অংশ ১৩৮১ সালে নির্মিত হয় । শিশুকাল থেকে চাং হো শান মহাপ্রাচীরের গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছেন এবং সারাদিন মহাপ্রাচীরে খেলাধুলা করতেন । কাজেই মহাপ্রাচীর ঘিরে তাঁর ছেলেবেলার সুন্দর স্মৃতি সংরক্ষিত রয়েছে ।

    চাং হো শানের মনে আছে , ছোটবেলায় তাঁর গ্রামের মহাপ্রাচীরের অংশটুকু ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল । তবে পরবর্তীকালে স্থানীয় লোকেরা পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সচেতন ছিল না বলে বহু মূল্যবান পুরাকীর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এ অবস্থা দেখে চাং হো শান খুবই চিন্তিত হন । বিশেষ করে গত শতাব্দির আশির দশকে মহাপ্রাচীরে অবস্থিত পাথরের একটি সৌধ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । এ ঘটনা তাঁকে তীব্রভাবে ব্যথিত করে । চাং হো শান বলেছেন , সৌধটি বরাবরই একটি দুর্গে অবস্থিত ছিল । সৌধটিতে খোদাই রয়েছে বহু লেখালেখি । তিনি বলেছেন ,

    ১৯৭৮ সালে সৌধটি দুর্গের মধ্যে ধ্বসে পড়ে । তবে তখনও তা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয় নি । ১৯৮০ সালে আবার সেই পাহাড়ে উঠে দেখলাম , এ সৌধ উধাও হয়ে গেছে । সেই দিন থেকে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করতে হবে । একটি পুরাকীর্তির ক্ষতি হলে একটি কমে যাবে । পুরাকীর্তির পুনর্জন্ম হয় না ।

    চাং হো শান বুঝতে পেরেছেন যে, নিজের গ্রামের মহাপ্রাচীর রক্ষা করা এখন একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে । তখন থেকে তিনি মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করেন । সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিশ বাইশ বছর পার হয়ে গেছে ।

    গত বাইশ বছর ধরে চাং হো শান প্রায় প্রতিদিন দশ বারো কিলোমিটার পাহাড়ী পথ অতিক্রম করে আশেপাশের মহাপ্রাচীর ঘুরে ঘুরে দেখেন । কেউ কেউ চীনা ওষুধ খুঁড়তে অথবা ছাগল তাড়িয়ে ঘাস খাওয়াতে মহাপ্রাচীরে ওঠলে তিনি তাদের বাধা দেন । মহাপ্রাচীরের পানি নিষ্কাশনের খালগুলো আটকে পড়লে তিনি সেগুলো খুলে দেন । মহাপ্রাচীরের ফাঁকে ফাঁকে ছোট গাছ ওঠলে তিনি সেগুলো কেটে দেন । মহাপ্রাচীরের ইটগুলো ধ্বসে পড়লে তিনি সেগুলো আবার যথাস্থানে বসিয়ে দেন । পর্যটকরা আবর্জনা ফেলে দিলে তিনি সেগুলো সাফ করেন ।

    মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের জন্যে চাং হো শান এঁকেবেঁকে পাহাড়ী পথে যে কতবার আছড়ে পড়েছেন এবং তার যে কত জুতো নষ্ট হয়ে গেছে , তার হিসাব নেই । এসব দু:খকষ্ট তার কাছে কিছু নয় । তার কাছে সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে এই যে , অনেক গ্রামবাসী তার আচরণ বুঝতে পারেন না ।

    চাং হো শান বারবার গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে বলেন । তার গ্রামের অধিবাসীরা সবাই মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত সৈনিকদের বংশধর বলে মহাপ্রাচীরের প্রতি তাদের গভীর ভাবানুভূতি রয়েছে । আস্তে আস্তে গ্রামবাসীরাও তার আচরণ উপলব্ধি করেছেন । মহাপ্রাচীরের ক্ষতি করার লোক কমে গেছেন । মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজে চাং হো শানকে সহায়তাকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে । একজন গ্রামবাসী লি চেং ফাং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,

    অতীতে গ্রামবাসীরা পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সচেতন ছিলেন না । মহাপ্রাচীরের ক্ষতি করার তত্পরতা ঘন ঘন ঘটতো । এখন চাং হো শানের প্রচারণা ও তত্পরতা দেখে মহাপ্রাচীর সংরক্ষণে সকলের সচেতনতা অনেক বেড়েছে ।

    মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের প্রক্রিয়ায় চাং হো শান ক্রমে মহাপ্রাচীর গবেষণার ওপর আগ্রহশীল হয়ে ওঠেন । বিশেষ করে তিনি মহাপ্রাচীরের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের কাজে নিমগ্ন হয়ে ওঠেন । মহাপ্রাচীর গবেষণার প্রাথমিক পরিসংখ্যান আদায়ের জন্যে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে মহাপ্রাচীরের প্রতিটি দুর্গের দৈঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা মেপে নেন এবং এর ভিত্তিতে তিনি ঐতিহাসিক বইয়ের কোনো কোনো ভুল শুধনে নিয়েছেন । তাঁর লেখা কয়েকটি নিবন্ধ চীনা মহাপ্রাচীর সমিতির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে একং মহাপ্রাচীর গবেষণা মহলের প্রশংসা পেয়েছে । ২০০২ সালে তিনি বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতদের নিয়ে গঠিত চীনা মহাপ্রাচীর সমিতিতে যোগ দেন এবং এ সমিতি প্রতিষ্ঠার পর দশ বারো বছরে প্রথম কৃষক সদস্য হয়ে দাঁড়ান ।

    চীনা মহাপ্রাচীর সমিতির মহাসচিব তুং ইয়াও হুই চাং হো শানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন , তিনি বলেন ,

    মহাপ্রাচীরের পাদদেশে বসবাসকারী চাং হো শানের মত সাধারণ লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাজ করে এসেছেন । তারাই হচ্ছেন মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের সত্যিকার মহাপ্রাচীর । চাং হো শানের চেহারায় জন্মভূমি , মাতৃভূমি ও চীনা জাতির প্রতি তার সরল অনুভূতি প্রতিফলিত হয়েছে । এ অনুভূতি অত্যন্ত মুল্যবান ।

    মহাপ্রাচীর সংরক্ষণে চাং হো শানের তত্পরতা বহু বিদেশী বন্ধুদের দৃষ্টিও আকষণ করেছে । জার্মানীর নাগরিক ওয়েননেন বলেছেন ,

    তিনি গর্বের সংগে তার মহাপ্রাচীর সংরক্ষণের কাহিনী শুনিয়েছেন । তার কাহিনী শুনে আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি । তিনি মহাপ্রাচীরের বহু খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর নজর দিচ্ছেন । এত বেশি সাধারণ চীনা লোক মহাপ্রাচীর রক্ষার কাজ করছেন । এতে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি ।