সম্প্রতি চীনের জাতীয় গ্রন্থাগারের উদ্যোগে উত্তর-পূর্ব চীনের কানসু প্রদেশের তুন হুয়াংয়ে উদ্ধার করা ত্রিশটি প্রাচীন পুথিপত্রের ফটোকপি প্রকাশিত হয়েছে । এই ত্রিশটি বই চীনের তুন হুয়াংয়ের প্রাচীন পুথিপত্র প্রকাশ পরিকল্পনার প্রথম অংশ । তুন হুয়াংয়ের প্রাচীন পুথিপত্র প্রকাশ থেকে প্রাচীন পুথিপত্র পুনরানয়ন ও সংরক্ষণ এবং গবেষণা ক্ষেত্রে চীনের অগ্রগতি প্রতিফলিত হয়েছে ।
১৯০০ সালে তুন হুয়াংয়ে খৃষ্টীয় পঞ্চম থেকে একাদশ শতাব্দীর সময়ের বিপুল পরিমান প্রাচীন পুথিপত্র আবিষ্কার করা হয় । এই সব পুথিপত্রকে তুন হুয়াং ই সু বলে নাম দেয়া হয় । এই সব প্রাচীন পুথিপত্রে হান জাতি ও সংখ্যালঘু টুফান জাতির ভাষা আর সংস্কৃত ভাষায় প্রাচীনকালের ধর্ম , জ্যোতির্বিদ্যা , ভূগোল , ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবরণ রয়েছে । যুদ্ধ ও প্রাকৃতিককারণে সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে অনেক প্রাচীন পুথিপত্র সংরক্ষণ করা হয় নি , বেশ কিছু পুথিপত্র বিদেশের গ্রন্থাগারে আছে । বতর্মানে পৃথিবীর চল্লিশটিরও বেশী দেশে তুন হুয়াংয়ের প্রাচীন পুথিপত্র রয়েছে । এদের মধ্যে বৃটেন , ফ্রান্স , রাশিয়া ও জাপানে সংরক্ষিত তুন হুয়াং পুথিপত্র সবচেয়ে বেশি ।
চীনে চীনের জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত তুন হুয়াংয়ের পুথিপত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । এই গ্রন্থাগারে তুন হুয়াং পুথিপত্রের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ অথার্ত ১৬ হাজারটি প্রাচীন পুথিপত্র সংরক্ষিত রয়েছে । এই সব প্রাচীন পুথিপত্রের মধ্যে বেশির ভাগই ছেঁড়া বা নষ্ট হয়েছে । তাই গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে জাতীয় গ্রন্থাগার এই সব প্রাচীন পুথিপত্র পুনরানয়নের কাজ করেছে। বতর্মানে পুনরানয়নের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে । আরো বেশি লোক যাতে এই সব মূল্যবান বই পড়ার সুযোগ পান , সেই জন্য চীনের জাতীয় গ্রন্থাগার তুন হুয়াং ই সুয়ের অবিকল কপি ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুন হুয়াং ই সুয়ের ফটোকপি বই মোট দেড় শ'টি । ২০০৭ সালের শেষ নাগাদ বই প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে । সম্প্রতি যে ত্রিশটি বই প্রকাশিত হয়েছে , তা' এই বই- সেটের প্রথম ত্রিশটি বই । জাতীয় গ্রন্থাগারের উপপ্রধান ছেন লি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার প্রসার জাতীয় সংস্কৃতি প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । তাই প্রাচীন পুথিপত্রগুলো শুধু সংরক্ষণ করে অন্যদের না দেখানোর বিষয়টি ঠিক নয় । আমাদের প্রচেষ্টার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো পুথিপত্র সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক ডিজিটল প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে গবেষণা কর্মীদের প্রাচীন পুথিপত্র পড়া ও গবেষণার সুযোগ ও সুবিধা দেয়া ।
চাং চি ছিং জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রাচীন পুথিপত্র বিভাগের প্রধান , তিনি একজন বিখ্যাত পুথিপত্র সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ । তিনি বলেছেন , প্রাচীন পুথিপত্র পুনরানয়ন এক জটিল ব্যাপার । একজন শ্রমিক কয়েক মাস কাজ করে শুধু একটি ছোট পুথিপত্র পুনরানয়ন করতে পারেন । চীনে পুথিপত্র পুনরানয়নের কলাকৌশল বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের স্বীকৃতি পেয়েছে । বেশ কয়েকটি দেশ চীনের পদ্ধতি শেখার জন্য চীনে লোক পাঠিয়েছে । চাং চি ছিং বলেছেন , উচ্চ গুনগত মানের তুন হুয়াং ই সু প্রকাশ করা আমাদের পক্ষে এক বড় চ্যালেঞ্জ । আমরা মাইক্রোফিল্ম দিয়ে তুন হুয়াংয়ের প্রাচীন পুথিপত্রের ছবি তুলেছি । ছবিতে পুথিপত্রের অক্ষরগুলো স্পষ্ট , বইয়ের গুণগত মান ভালো। তিনি আরো বলেছেন , প্রথম কিস্তির ত্রিশটি পুথিপত্রের অবিকল কপি হালকা ধরনের কাগজ দিয়ে ছাপানো হয়েছে ।
জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রাচীন পুথিপত্র বিভাগের কর্মী লিন শি থিয়েন মনে করেন , প্রাচীণ পুথিপত্র মেরামত ও সংরক্ষণে বিদেশের উন্নত অভিজ্ঞতা শিখতে হবে । তিনি বলেছেন , বতর্মান যুগ ডিজিটাল যুগ । ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগের সময় বিভিন্ন দেশের পদ্ধতি ও ধারণা একই নয় । আন্তর্জাতিক আদান-প্রদান ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিদেশের উন্নত অভিজ্ঞতা , উন্নত প্রযুক্তি ও পুথিপত্র সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা শিখতে পারি । আমার ধারনা , বিদেশের পুথিপত্র সংরক্ষণের পদ্ধতি আমাদের বিশেষভাবে শেখা উচিত । আমি বেশ কয়েকটি দেশের পুথিপত্র পুনরাণয়ন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা দেখেছি । আমি মনে করি অনেক দেশ প্রাচীন পুথিপত্র সংরক্ষণের কাজকে চীনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং পুথিপত্র পুনরাণয়ন শ্রমিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয় ।
তুন হুয়াংয়ের প্রাচীন পুথিপত্রের প্রকাশ দেশবিদেশের তুন হুয়াং গবেষণাকারীদের বিরাট সুবিধা দিয়েছে । এই সব পুথিপত্র পূর্বপুরুষরা আমাদের জন্য রেখেছেন বলে চীনের গবেষণাকারীদের গভীরভাবে গবেষণা করা উচিত ।
|