মিসরের পিরামিড , আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে পরিচিত কেনিয়ার কিলিমানজারো পর্বত, দক্ষিণ আফ্রিকার সোনার খনি ও হীরক এবং বিস্তীর্ণ আফ্রিকা মহাদেশ চুম্বকের মতো আফ্রিকা ভ্রমণে চীনাদের আকর্ষণ করছে । শুধু গত বছর ১.১লাখ চীনা পর্যটক আফ্রিকা ভ্রমণে গিয়েছিলেন । আফ্রিকা চীনাদের বিদেশ ভ্রমণের একটি নতুন আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে ।
চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে বেশ কয়েকটি পাতাল রেল স্টেশনে আফ্রিকা সম্পর্কিত ধারাবাহিক আলোচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে । আলোচিত্রে প্রচুর বন্য প্রাণী, স্থানীয় আফ্রিকান অধিবাসী , বরফে ঢাকা আকাশচুম্বী পর্বতশৃঙ্গ এবং হ্রদের স্বচ্ছ পানি চীনাদের আকর্ষণ করছে । তারা আফ্রিকার সৌন্দর্য্যে আত্মহারা হচ্ছেন । লু হোং নামে একটি কেক্ দোকানের মালিক এই সব ছবি তুলেছেন । তিনি পর পর দশ বার আফ্রিকা ভ্রমণ করেছেন । তিনি ক্যামেরা নিয়ে তার আফ্রিকা ভ্রমণ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রেকর্ড করেছেন । তার আফ্রিকা ভ্রমণের প্রথম স্থান- কেনিয়ার নাকুরু হ্রদ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন ,
ছ' বছর আগে যখন তিনি প্রথম বারের মতো আফ্রিকা ভ্রমণে যান , তখন তিনি দেখলেন নাকুরু হ্রদের প্রচুর মরাল । এসব মরাল স্বর্গের জ্বলন্ত অগ্নির মতো। তখন থেকে তিনি আফ্রিকা পছন্দ শুরু করেছেন ।
তিনি বলেছেন , যখন তিনি এই সব ছবি বার বার দেখেন , তখন একটি প্রচন্ড আবেগ জেগে উঠে তার রক্তের মধ্যে । ছবি তোলার জন্য তিনি বার বার আফ্রিকায় গিয়েছেন । তার তোলা এই সব ছবি জাতিসংঘের পরিবেশ পরিকল্পনা বিভাগেও প্রদর্শিত হয়েছে । এই সব ছবির প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের কাছে আফ্রিকার অনন্য আকর্ষণীয় শক্তি তুলে ধরা হয়েছে । এখন অধিক থেকে অধিকতর চীনা আফ্রিকা ভ্রমণে যান । এ পর্যন্ত ১৭টি আফ্রিকান দেশ চীনাদের ভ্রমণের দর্শনীয় স্থলে পরিণত হয়েছে । আফ্রিকার অসাধারণ আকর্ষণীয় শক্তি আরো ব্যাপকভাবে চীনাদের আকর্ষণ করছে । সাক্ষাত্কারে সংবাদাদাতা লক্ষ্য করেছেন , চীনাদের মধ্যে যারা আফ্রিকায় গিয়েছিলেন , তারা আফ্রিকাকে কোনদিন ভুলে যাবেন না ; যারা আফ্রিকায় যান নি , তারা আফ্রিকায় ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছুক ।
চীন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কুও চিয়া দু'বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ করেছিলেন । তিনি ওখানকার দৃশ্যের খুব প্রশংসা করেছেন । তিনি বলেন ,
২০০৪ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রশনে গিয়েছিলেন । ওখানকার বিস্তীর্ণ বন ও তৃণভূমিসহ প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর । যখন তিনি ও অন্যান্য চীনা পর্যটকরা জীপে করে যাচ্ছিলেন, তখন একদল জেব্রা হাজির হয় । জিব্রাগুলোকে নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ দিতে জীপ থামল । খুব আশ্চর্য।
ওয়াং উই সাহেব পেইচিংয়ে চাকরি করেন । তিনি আফ্রিকায় ঘুরে বেড়াতে খুব ইচ্ছুক । তিনি বলেন ,
তিনি কখনো আফ্রিকায় যান নি । তিনি মনে করেন যে , এই জায়গা খুব রহস্যময় । কংগোর গ্রীষ্মমন্ডলের অরণ্য আর মিসরের প্রসিদ্ধ স্থাপত্য শিল্প তাকে খুব আকর্ষণ করছে । তা ছাড়া তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায়ও বেড়াতে চান ।
চীনের আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থার বিদেশ ভ্রমণ বিভাগের উপপ্রধান ম্যানেজার লিন খাং বলেছেন , বর্তমানে চীনের বড় বড় পর্যটন সংস্থা আফ্রিকা ভ্রমণের ভবিষ্যতের ওপর খুব আশাবাদী ।
মিসরের সুদীর্ঘকালীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি রয়েছে । ওখানের পিরামিড , দেবতার মন্দির প্রভৃতি দর্শনীয় স্থল বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ । কেনিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের খুব আকর্ষণ করছে । আফ্রিকা একটি বিস্ময়কর মহাদেশ । পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এর ব্যাপক ভবিষ্যত ও অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে । অনুমান করা যাচ্ছে , পরবর্তী তিন থেকে পাঁচ বছরে আফ্রিকা ভ্রমণে যাওয়া চীনাদের সংখ্যা বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া মোট চীনাদের সংখ্যার এক চতুর্থাংশ হবে ।
|